“ক’দিন যাবত ধলা মিয়ার বসে গেছে গলা, খিদে পেলে তবু খাবেন ডজন ডজন কলা।“
ঠাকুর ঘরে কে, আমি কলা খাই না, রথে দেখা কলা বেচা ,কলার খোসায় পা পিছলে আলুর দম, আদায় কাচ্কলায়, (সাপ কলা না খেলেও,) দুধ-কলা দিয়ে সাপ পোষা———— কত না এরকম ‘কলা’ দিয়ে অন্য কথা।
আন্তর্জাতিক ফল বানিজ্যে কলাই প্রধান। আবার ভারতে সবচেয়ে বেশি কলা হলেও, রপ্তানিতে ইউরোপ, আমেরিকা, জাপান সবার আগে। উঠে আসছে চিন। কলা নিয়ে এসব কথা খুব বেশি হয় না।
কলা ফলিয়ে আঙুল ফুলে কলাগাছ হতেই পারে, সেরকম সম্ভাবনা আছে ভালভাবেই। ত্রিপুরার কৃষি কলেজ’র পরীক্ষামূলক কলা ফলানো দেখলে, একথা মনে গেঁথে যেতে পারে।
কলেজের বাগানে কলার একটি ছড়ি হচ্ছে এক মানুষ সমান, সাড়ে পাঁচ ফুট লম্বা, প্রতিটিতে তিনশ’র বেশি কলা। দারুন মিষ্টি এই কলার নাম, উদয়ম। নামে বোঝা না গেলেও, এই কলা উত্তরপূর্বাঞ্চলেরই। ত্রিপুরায় এই কলার নাম গুপি, বাংলা, পয়ত্রিশ,সেমাই, ইত্যাদি। এখানে জল-বাতাস-মাটি কলার জন্য ভালো।
কৃষি কলেজের সহকারী অধ্যাপক ডঃ সুখেন চন্দ্র দাস বলছিলেন, গুপি, বাংলা কলা এমনিতেই এখানে হয়। নানারকম নমুনা থেকে ঠিকঠাক বেছে সবচেয়ে ভাল জাতেরটি নিয়ে জাতীয় কলা গবেষণা বিশেষজ্ঞরা পরীক্ষা-নিরিক্ষা করে যা করেছেন, তাতে এই চমৎকার কলা পাওয়া যাচ্ছে। কৃষি কলেজ তা নিয়েই আরও কাজ করছে। একটি গাছ থেকে এক বছরের মধ্যেই ফল পাওয়া যায়। বাণিজ্যিক চাষ করলে লাভ হবেই।
কৃষকদের তারা এই কলার চারাও দিয়েছেন। তবে এখনও তাদের ফসল ঘরে তোলার সময় হয়নি।
তিনিই জানালেন, এই কলা ‘সবড়ি’ কলা থেকেও মিষ্টি। বইয়ের ভাষায়, ত্রিশ ডিগ্রি ব্রিক্স।
কৃষি কলেজের বাগানে শুধু উদয়ম, সিঙাপুরি, এরোমেটিক, এরকম কলা নয়, এদিকে রান্না করে যে কলা খাওয়া হয়, সেই কাঁচাকলার চেহারাও বিশাল।
ভারতে সবচেয়ে বেশি কলা হয় মহারাষ্ট্রে। দক্ষিণ ভারতের কয়েকটি রাজ্যেও। উত্তরপূর্বাঞ্চলে সংগঠিত কলা চাষ কম। তবে করলে খুব ভালই হবে। ত্রিপুরায় কোথাও কোথাও কয়েকটি সরকারি কলা বাগান আছে। রাজধানী আগরতলা থেকে চল্লিশ মিনিট দূরে হেজামারায় তেমন একটি আছে। আবার কোথাও ত্রিপুরার অশান্ত সময়ে সেসব বাগান একেবারেই নষ্ট হয়ে গেছে। আবার সরকারি স্কিমে কলা চারা দিলেও, চাষিদের মধ্যে অনেক ক্ষেত্রেই আন্তরিকতা পাওয়া যায়নি। সরকারি স্তরে রাজ্য ও কেন্দ্র সরকারের সংস্থার মধ্যে ত্রিপুরার কলা, সবড়ি, ইত্যাদির জিনপুল তৈরি, উন্নত চারা , ইত্যাদির কাজ হচ্ছে, তবে প্রাথমিকভাবে পাঁচ বছরের লক্ষ্যমাত্রা পেরিয়ে গেছে আরও দুই-তিন বছর আগেই, কাজ কিন্তু শেষ হয়নি।
কলার গুণ প্রচুর। খুব তাড়াতাড়ি শক্তি পাওয়া যায়। খেলোয়াড়রা খেলার ফাঁকে ফাঁকে কলা খান এই কারণেই। হজম হয় তাড়াতাড়ি। রোগীদেরও তাই কলা দেয়া হয়। গবেষণা বলছে, কলায় আয়ু বাড়ে।
আপনার প্রতি সকালে কল্যবর্তে কলা থাকে তো ?
ছড়াঃ জাহির আজাদ