ব্লগামি

#বসন্ত এসে গেছে

By Grand Master

February 23, 2020

কিছু ভালোলাগা বিনা কারণেই তৈরি হয় । অনেক ভালোলাগা কারণেই নষ্ট হয়ে যায় । অনেক ভালো সময় কারণ না জানিয়েই চলে আসে । কারণ ছাড়াই অনেক ভালোবাসার বিচ্ছেদ ঘটে যায় ।

#তবুও বসন্ত এসে যায় ।

বসন্ত একটি ঘ্রাণ। হওয়ার বুদবুদের গন্ধ মেশানো। বসন্তের শোক জ্ঞাপনের বালিশে মাথা রেখে শুয়ে পড়া যায় । বসন্তে , ‘ভালো আছি , ভালো থেকো’ — শুকনো পাতারা গেয়ে ওঠে। কুত কুত খেলবে বলে ক্র্যাচ হাতে এক বাউল মেঠো বসন্ত পথে ডাক দেয় , ‘কিগো….’।

বসন্তরা দূর থেকে শিস দিয়ে জানিয়ে দেয় , আসছি । অনেক বিচ্ছেদ ভুলে ডাগর চোখে জেগে ওঠে যে চন্দ্রবিন্দু — কোলে টেনে নেয় দুপুরের আলুথালু বসন্ত শরীর ।

ভূমধ্যসাগরীয় একটি দেশ। তেলের ব্যবসা করে। ধনী।ওই দেশের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছে ‘ওরা’ । একটাই দাবি। ‘আকাশে নামিয়ে দাও আমাদের , প্যারাসুট বুকে-পিঠে বেঁধে খেলবো’। রাজি হয় মেঘবালিকারা। বিমান সংস্থা খুব সামাজিক দায়িত্ব সচেতন । অ্যাসাইলাম থেকে ছাড়া পাওয়া অনেককেই কাজ দেওয়া হয়েছে বিমান সংস্থায়।

মেঘবালিকাদের সিভি’তেও স্পষ্ট লেখা ছিল , ‘রিলিজড ফ্রম অ্যাসাইলাম’।

হাসি মুখে হাততালি দিতে থাকে মেঘবালিকারা। দরজা খুলে যায় বিমানের। মাঝ আকাশে টুক করে নেমে পড়ে ওরা দুজন। ভাসছে শূন্যে ওরা। দুজনের হাত ধরা। বিমান এগিয়ে যায় । সব যাত্রীর চোখে শান্তির মাসকারা।

#ক্যালিপসো সুরে গান বাজছে বিমানে। হিন্দীতে। ‘শাঁসো কা রুক যানা হি মউত নেহি।ওহ ইনসান ভি মরা হুয়া হ্যায় জিসনে গলত কো গলত ক্যাহনে কি নৈতিকতা খো দি। ইয়ে বসন্ত হ্যায়’ ।

ডাকছে ওরা। সামনের অনেকটা কিছুকে চোখে দেখে , মোবাইল স্ক্রিনে ঠিক-ঠাক গুছিয়ে নিতে নিতেই আবার ডাক। পেছন ফিরেও কাউকে দেখা যায় না । কে ? আবার মনোযোগ সামনে , একটা রাস্তা , আদুরে। বুক চিতিয়ে বলছে , ‘লুক এট মি ‘। দুধার ধরে এলিয়ে দিয়েছে আকাশে — গাছের আঁকিবুকি , অনেকটা ঘন মুগ্ধতা। আবার ডাক। এবার অনেকটা স্পষ্ট। ঠিক ডাক না । রিন রিন সুরে গাইছে দুজন মানুষ , ‘কারা যে ডাকিল পিছে — বসন্ত এসে গেছে’ ।

দুজন । অভিয়াসলি ছেলে আর মেয়ে। ইউজুয়াল বাইনারি। ছেলেটির নাম জ্যাকেট । মেয়েটির সারনেম ফুল। পুরো নাম লজ্জাবতী ফুল। মেয়েটি পার্লারে যায় কিন্তু চুল কাটায় না। ছেলেটিও। ওদের মাথায় উকুন নেই। লেডি বার্ড বিটল আছে । ওদের কমন ফ্রেন্ড । কী হয়েছিল , দুজনেই আপেল-বাগানে গিয়েছিল পিকনিকে। সেদিনই প্রথম দেখে আর দুহাত ভরে কুড়িয়ে নিয়েছিল । দিব্যি ওদের মাথায় ঘর সংসার করছে বিটল’রা , ফুল হয়ে ।

ওরা অনেকটা সামনে এখন । হাসছে দুটো কুঁড়ি , ফুল হয়ে উঠবার আগে এভাবেই কুঁড়িরা হাসে ।

একটি সাপ। ওয়াইন শেডের। লাফিয়ে পড়লো গাছ থেকে । হাসছে সবাই । গাছের না পাতার ডালেও দোল লেগেছে , আগামীর রঙ উচ্ছাসে। ওই সময়েই ক্র্যাচ হাতের বাউলের কাঁধে ভর দিয়ে এগিয়ে আসে , বৃদ্ধা। ‘এই সাপ আমার ছেলে’। ফোকলা মুখে হাসি । কাঁদছে সাপ। লজ্জাবতী আর জ্যাকেটের মুখে মিটি মিটি হাসি। ‘আমার রাজকুমারকে খুন করেছিল …”।

গাছেরা তখন ধরে রেখেছে শেষ বেলার রৌদ্র সিগ্ধতা। লজ্জাবতী হাতে তুলে দেয় একটি পাথর। রাজকুমারের অটোগ্রাফ আঁকা । কানের সামনে ধরলেই গান শোনা যায় । ‘আজি এ বসন্ত জাগ্রত দ্বারে’। গান শুরুর আগে জগজিৎ সিং নেপথ্যে জানিয়ে দেন এই বৃদ্ধা আসলে সব জাদু বাস্তবতার ঝাঁসির রানী।

মোবাইলে ব্ল্যাক এন্ড হোয়াইট মুডে তোলা ছবিতেও তখন রঙিন হৈচৈ। (ছবি কৃতজ্ঞতা – পামেলা)