ভয় করে না ?
কিছু করার নেই, আমাদের কাজে নামতেই হবে। আমরা বাইরে আছি , আপনারা তাই ঘরে থাকুন। ঘরে বসেই সব জানতে পারছেন।
তারা ডক্তার না, কারো জীবন চিকিৎসা করে বাঁচাতে পারেন না। বেঁচে থাকাকে জীবন করার জন্য তাদের মৃত্যু ভয় জয় করা। তারা সাংবাদিক , বিশেষত এই অস্বাভাবিক পরিস্থিতে, চিত্র সাংবাদিক।
করোনা ভাইরাস আক্রমণ কোথায়, ত্রিপুরায় ধরা পড়লেন কিনা কেউ, কী কী চালু থাকছে এই লকডাউনে, এসব অতি জরুরি তথ্য যেমন তারা পৌঁছে দিচ্ছেন, তেমনি বিদেশ থেকে আসা ক্যান্সারের রোগী আক্ষরিক অর্থেই যখন রাস্তা বসে পড়েছেন, নানান জায়গায় ঘোরাঘুরি করে , এমনকী অভিযোগ এও, সেই দেশের অফিস থেকেও সাহায্য আসেনি, এই সাংবাদিকরাই পিছিয়ে না গিয়ে, রাত একটা পর্যন্ত লেগে থেকে, তাদের প্রথমদিন হাসপাতাল করে হজ্ব ভবনে থাকার ব্যবস্থা করিয়েছেন। চেন্নাই থেকে আসা সেই রোগী এবং তার স্ত্রী কোথাও থাকার জায়গা পাচ্ছিলেন না, কেউ আসছেন না, করোনা ভাইরাস সংক্রমণ’র ভয়ে কেউ দেখেও-দেখছেন না, এই সাংবাদিকরা পিছিয়ে যাননি। নাগরিক এক/দু’জনকে পাশে পেয়েছেন। প্রথমদিনের ব্যবস্থার পর, পরদিন আবার তারা পথে। চেকপোস্ট বন্ধ, অনুরোধে দরজা ফাঁক হয়নি। আবার চিত্র সাংবাদিকরাই এলেন। সরকারি হাসপাতাল লিখে দিয়েছে, হোম কোয়ারাইন্টাইন। কোথায় এই শহরে তাদের ‘হোম’ ! প্রথমদিনের আবাসনে থেকে আবার তারা রাস্তায়, বন্ধ দোকানের সামনে বেডসিট বিছিয়ে বসে আছেন। চিত্রসাংবাদিকরা, এবারও ব্যবস্থা করিয়েই ছাড়লেন। এবং সেটা সাংবাদিকতার জোরেই, সাংবাদিক বলেই পেরেছেন যোগাযোগ করিয়ে কিছু একটা করতে।
ডাক্তারও যেমন মানুষ, যন্ত্র না , তেমনি মানুষই সাংবাদিক ।
সবাই সব খবর জানান দিয়ে থাকেন যারা, তাদের খবর হয় না( এই ভিডিও যিনি করছেন, তিনিই তো নেই, এই খবরেও ! ) । ‘দালাল’ টিকা পড়ে যেতে পারে কপালে। ব্ল্যাকশিপ কেউ এক/দু’জন যদিবা থাকেন, সেটা কোথায় নেই ! সবচেয়ে বেশি অভিযোগ যাদের বিরুদ্ধে, তারা গুরুতর মামলা মাথায় নিয়েও, জেল থেকে জামিনে এসেও জিতে যান, আইনপ্রণেতা হয়ে বসেন !
খবর সবরকমের বন্ধ থাকলে চলে না। চলে কি ! করোনা আক্রান্ত না, খাবারের দোকানটি খোলা তো , এই খবরটি সাংবাদিকই জানান।
করোনা ভাইরাসের ঝুঁকি নিয়ে যারা পথে রয়েছেন, তাদের একদল এই সাংবাদিকরা, এবং অন্যদের সাথে পার্থক্য এই যে মরে গেলে ফুল-মালা ছাড়া বিশেষ কিছু জোটে না, বাকী পরিবার চলার জন্য টাকা-পয়সার অনুদান না, এবং মরে না গেলেও পকেট ভর্তি টাকা না, তবে এই পথে থেকে যারা খবরটি তুলে নিয়ে যান, এই প্রতিবেদকের মত ঘরে বসা খবরিলালদের ব্যবস্থা করে দেন, ‘স্কুপ’ এনে দিয়ে ‘নির্ভীক, সত্যনিষ্ঠ, বলিষ্ঠ’, ইত্যাদি ট্যাগ লাইন বসানোর স্বাস্থ্য ঠিক রাখেন, তারা কখনও কখনও প্রয়োজনে কিছুদিন ‘শহিদ’ তকমা পেয়ে গেলে যেতেও পারেন।
ডাক্তার, স্বাস্থ্যকর্মীরা কীভাবে যাচ্ছেন সেসব বাড়িতে , যেখানে সংক্রমিত কেউ থাকতে পারেন, কীভাবে পরিবার ছেড়ে কোয়ারাইন্টাইনের মত অবস্থায় আছেন ডাক্তার-নার্স ও অন্যান্যরা, সেই খবর দ্য প্লুরাল কলাম করেছে। আরক্ষাকর্মীদের খবর প্রতিদিনই হয়। সাফাই কর্মীদের নিয়ে করার ইচ্ছা আছে। প্রশাসনের কর্মীরা যারা পরিস্থিতি ঠিক রাখতে খাবার ঠিক আছে কিনা দেখে রাখতে হয়, কোথাও ডাক্তার ঢুকতে পারছেন না , ব্যবস্থা করতে হয়, তাদেরও সুযোগে করা যাবে। আজ খবর, সাংবাদিকদের নিয়ে। এই স্বজাতিপ্রীতিতে দোষ নিশ্চয়ই নেবেন না কেউ।
আর যাদের সারা বছরই জীবনে জরুরি অবস্থা, সবচেয়ে বড় ভয় পেট,মাথার ওপর খোলা আকাশ, তাদেরও খবরও করা হয়েছে, অবশ্য এই খবর নতুন কিছু নয়। পৃথিবী এই ব্যার্থতা কাটিয়ে উঠুক, সাংবাদিকরা সেই খবর করবেন, সেই দিনের জন্যই প্রশ্ন রাখছেন তারা, এই প্রতিবেদক।