আলাদা আলাদাভাবে আন্দোলনে নামলেও, দুপুরে ১০৩২৩ শিক্ষকদের দুই অংশের অনেকটাই একসময় মিশে যান , একসাথে প্যারাডাইস চৌমোহনীতে চাকরির নিশ্চয়তার জন্য দাবি জানিয়ে যান। ধারা ১৪৪ জারি আছে, সকালে শিক্ষকদের পুলিশ তাদের আন্দোলন বেআইনি বলে গ্রেফতার করেছিল আন্দোলনে থাকা শিক্ষকদের, ওরিয়েন্ট চৌমোহনীতে এবং সিটি সেন্টারে। সিটি সেন্টারে শিক্ষকরা গ্রেফতার হয়েছেন। আবার তাদের সহযোদ্ধারা এসে বসেছেন। পশ্চিম আগরতলা থানা ঘেরাও করে ওরিয়েন্ট চৌমোহনী থেকে গ্রেফতার হওয়া শিক্ষকদের সংগঠন , যোগ দেন সিটি সেন্টারে বসারাও। আর গ্রেফতারে যায়নি পুলিশ। প্যারাডাইস চৌমোহনীতে বাসও এসেছিল দু’টো, শেষে আর স্লোগান-মুখর শিক্ষকদের ‘তুলে’ নেয়ার দিকে যায়নি পুলিশ। শিক্ষকদের গ্রেফতার করে এ ডি নগর পুলিশ লাইনে নিয়ে যাওয়া হয়।
বেশ কয়েকজন শিক্ষক অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। অন্তত একজন পুলিশের সাথে ধস্তাধস্তিতে ঘাড়ে-পায়ে ব্যাথা পেয়েছেন। বিশিষ্ট আইনজীবী পিযূষ বিশ্বাস গিয়েছিলেন পশ্চিম থানায়। তিনি ক্যামেরায় বলেছেন, পুলিশ সুপারকে অনুরোধ করেছিলেন, শিক্ষকদের গ্রেফতার না করতে। করোনা ভাইরাস আটকাতে ১৪৪ ধারা জারি হয়েছে, শিক্ষকরা নিজেরাই চিন্তা করছিলেন, তা তুলে নেবার। পুলিশ সুপার তাকে বলেছেন, আন্দোলন করবেন না, এমন মুচলেকা দিলে শিক্ষকদের ছেড়ে দেয়া হবে। ভারতবর্ষে এমন কী আইন আছে, যাতে কাউকে গণতান্ত্রিক আন্দোলন না করার জন্য না করা যায়! কোনও সভ্য, ভদ্র সমাজে তা হতে পারে না, বলেছেন পীষূষ। তিনি বলেছেন, রাজনৈতিক নেতা হিসেবে তিনি সেখানে যাননি।
তিনদিন আন্দোলন চলার সময় কোনও বামপন্থী নেতা সেখানে না গেলেও, হাসপাতালে অবশ্যই দেখতে গেছেন। খোঁজ-নিয়েছেন। বিরোধী দলনেতা মানিক সরকার হাসপাতালে গিয়ে জনে জনে কথা বলেছেন। সিটিসেন্টারে আজ বামপন্থী, কংগ্রেস, দুই দলের নেতারাই উপস্থিতি দিয়েছেন। সিপিআই(এম) আগে আন্দোলনে সমর্থন আছে বলে কাগজে বিবৃতি দিয়েছিল।
বিকালে শিক্ষকদের পুলিশ লাইন থেকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। দুই সংগঠনের তারাই একসাথে মিছিল করে শহরে আসেন। দুই সংগঠন একসাথে আন্দোলন করার ব্যাপারে একমত হয়েছে, তবে এখনও কোনও ঘোষণা নেই।
আন্দোলনকারীদের তরফে অভিযোগ আছে, গ্রেফতার করে নেয়ার পর, চিৎকার করে ডেকেও জল পাননি। অনেক পরে জল আনা হয়। খাবার ছাড়াই কেটেছে সারাদিন। যখন তাদের ছেড়ে দেয়ার ঘোষণা হয়েছে, তখন খিচুরি এসে পৌঁছেছে। বেলা তিনটা পেরিয়ে গেছে তখন।
কোরনা ভাইরাস’র জন্য ত্রিপুরায় স্কুল-কলেজ-ইউনিভার্সিটি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে ৩১ মার্চ পর্যন্ত। পরীক্ষা চালু আছে। সমাবেশ বন্ধ ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত। করোনা ভাইরাস সংক্রমণ যেন ছড়িয়ে না পরে, তাই পরীক্ষা হলে ছাত্রদের হাত ধুয়ে ঢোকার ব্যবস্থা করার নির্দেশ জারি হয়েছে। কোনও কোনও অফিসেও। শিক্ষকদের গ্রেফতার করে নেয়ার পর, জলই পাননি তারা অনেক অনেক্ষণ বলে অভিযোগ! তাই হয়ে থাকলে ! করোনা ভাইরাসের জন্য হাত ধোয়া !
অভিযোগের বাইরেও কথা আছে, মানুষের মুখ । শিক্ষকদের গ্রেফতার করতে এসে চোখে জল এসেছিল পুলিশ কর্মীরও। সিটি সেন্টারের সামনে , সকাল তখন দশটা বেজে সামান্য কিছু।
কারা ১০৩২৩ , কী আন্দোলন , সব এই খবরেঃ ভাতের থালা হাতে শিক্ষকরা রাস্তায় ! এই ছবিও দেখে নিল ত্রিপুরা।