দুই সন্তানকে বিষ খাইয়ে আত্মঘাতী মা। ঘটনা ত্রিপুরার উদয়পুর মহকুমায়। সেখানকার শামুকছড়া এডিসি ভিলেজে।
ঐ এলাকার আন্দোলন দেববর্মা রাবার ট্র্যাপিং’র কাজ করেন। রবিবার সকালে তিনি রাবার গাছ কাটতে গিয়েছিলেন।
দুপুর সাড়ে বারটা নাগাদ ঘরে ফিরে দেখেন তার স্ত্রী ঝুলন্ত অবস্থায়। নিচে পড়ে আছে দুই সন্তানের নিথর দেহ। স্বামী ভেবেছিলেন স্ত্রী হয়তো জীবিত রয়েছেন। তাই নিজেই গলার ফাস কেটে দেহ নামান।
উদয়পুরের এসডিপিও ধ্রুব নাথ জানিয়েছেন, এটা আত্মহত্যা না খুন এ ব্যপারে পুলিশ তদন্ত করছে। পুলিশ আসার আগেই যমুনা দেববর্মার দেহ নামিয়ে ফেলা হয়েছিল। ফরেনসিক পরীক্ষার পরেই বোঝা যেতে পারে এটা খুন না আত্মহত্যা।
ঘরে অনটন ছিল। গত দুই মাস ধরে রাবার ট্র্যাপিং-এর কাজ ছিল না। এতে আর্থিক সমস্যায় ছিল আন্দোলন দেববর্মার পরিবার।
মাত্র দিন কয়েক আগে ফের ট্র্যাপিং-এর কাজ শুরু হয়েছে। তার মধ্যে মেয়ে জবা দেববর্মা স্থানীয় একটি খৃস্টান মিশনারি স্কুলে পড়ে। সাত বছরের মেয়ে জবা প্রথম শ্রেনীর ছাত্রী। আজ তার তার পরীক্ষার রেজাল্ট দেবার কথা। কিন্তু স্কুলের ফিস দেওয়া হয় নি। স্কুল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল ফিস না দিতে পারলে রেজাল্ট দেওয়া হবে না।
শুক্রবার আন্দোলন দেববর্মা ঘর থেকে কাজে বের হয়ে গেলে স্ত্রী যমুনা দেববর্মা গিয়েছিলেন এলাকার মানুষের কাছে টাকা ধার চাইতে। কিন্তু পান নি। বাড়ি ফিরে সাত বছরের মেয়ে জবা এবং চার বছরের ছেলে অঙ্কুশকে বিষ খাইয়ে দেন। তারপর ওড়না জড়িয়ে তিনিও আত্মহত্যা করেন। এমনই বক্তব্য এলাকার মানুষের।
আন্দোলন দেববর্মা টাকা নিয়ে ফিরে এসেছিলেন। মেয়ের স্কুলের ফি দেবার জন্য ধার করে টাকা জোগাড় কিরেছিলেন । ঘরে ফিরে দেখেন স্ত্রী সন্তান কেউ জীবিত নেই।
ধ্রুব নাথ নিজেও স্বীকার করেছেন পরিবারের আর্থিক অনটনের বিষয়টি। জানিয়েছেন, গতকাল রাতে ছেলে মাংস খেতে চেয়েছিল। তা নিয়ে স্বামী স্ত্রীর মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়েছিল।
উদয়পুরের এসডিএম অনিরুদ্ধ রায় জানিয়েছেন তিনি এ বিষয়ে কিছুই জানেন না।
শামুকছড়ার ঘটনা নিয়ে নিজের মতামত জানিয়েছেন এডিসি’র মুখ্যকার্য নির্বাহী সদস্য রাধাচরণ দেববর্মা। ত্রিপুরায় বিজেপি আইপিএফটি জোট সরকার আসার পর থকে গ্রাম পাহাড়ে কাজ খাদ্যের অভাব চলছে। বছর দেড়েক আগে ছামনুতে অনাহারে মারা গেছেন জাপানদা ত্রিপুরা। মাস পাঁচেক আগে সদর উত্তরের চাচুতে এক পরিবারের চারজন অভাবের কারনে আত্মঘাতী হয়েছিলেন। সন্তান বিক্রি, অভাবে রেশন কার্ড বন্ধক দেয়া, দাদন নেয়া এখন ত্রিপুরার রোজদিনের ঘটনা। গত মাসে কল্যাণপুরে গিয়েছিলেন ম্যুখ্যমন্ত্রী। সেখানে অভাবে এক বৃদ্ধ কাঁদছিলেন মুখ্যমন্ত্রীর সভায় এসে। সেই ছবি পত্রপত্রিকায় বের হয়েছিল। সেই ছবিই এখন ত্রিপুরার ছবি। বলেছেন রাধাচরণ দেববর্মা।
গত বছর নভেম্বর মাসের ২২ তারিখ মোহনপুর মহকুমার উপজাতি অধ্যুষিত হেজামারা ব্লকের পূর্ব সিমনা এডিসি ভিলেজে অভাবের জন্যই একটি পরিবারের চারজন আত্মহত্যা করেছিল। স্বামী স্ত্রী দুই সন্তানকে বিষ খাইয়ে , নিজেরাও গলায় ফাঁস লাগিয়েছিল। বিধানসভায় বিষয়টি বিরোধীরা তুললে সরকার দাবি করেছিল গ্রামাঞ্চলে সরকারি কাজের কোনও অভাব নেই।
আগরতলা, ত্রিপুরা