করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তি যদি নাক দিয়ে সরষের তেল টেনে নেন তাহলে তার মুখ এবং গলায় উপস্থিত সব করোনা ভাইরাস সরাসরি পাকস্থলীতে চলে যাবে । পাকস্থলীতে উপস্থিত থাকে এসিড । এই এসিডের উপস্থিতিতে সব করোনা ভাইরাস মরে যাবে । এই পদ্ধতি প্রয়োগ করে করোনা ভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসা করা সম্ভব । দাবি করেছেন তথাকথিত যোগ গুরু রামদেব ।
একটি নিউজ চ্যানেল আয়োজিত অনুষ্ঠানে এমনটা দাবি করেই থেমে থাকেন নি রামদেব । একজন ব্যক্তি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত কিনা তা পরীক্ষা করার সহজ উপায়ও তিনি বাতলে দিয়েছেন । রামদেবের দাবি একজন ব্যক্তি যদি এক মিনিট ধরে শ্বাস আটকে রাখতে পারেন তাহলে প্রমাণিত হয়ে যায় তিনি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত নন । তার মতে সিম্পটোম্যাটিক এবং এসিম্পটোম্যাটিক দুই ধরণের রোগিদেরই এভাবে চিহ্নিত করা সম্ভব । আরও স্পষ্ট করে তিনি বলেন যে ব্যক্তিরা ক্রনিক হাইপারটেনশন , হার্টের অসুখ কিংবা ডায়াবেটিসে ভূগছেন বা বয়স বেশি হয়েছে তারা যদি আধ মিনিট শ্বাস বন্ধ করে রাখতে পারেন তাহলেই বোঝা যাবে যে তিনি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হন নি ।
শুধুমাত্র করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের জন্যই রামদেব বিশেষ প্রাণায়াম উদ্ভাবন করেছেন বলেও দাবি করেন । এই প্রাণায়ামের তিনি নাম দিয়েছেন ‘উজ্জাই’ । এই পদ্ধতিতে গলা সংকুচিত করে নাক দিয়ে শ্বাস বের করতে হবে । কিছুক্ষণ থেমে থেমে এভাবে শ্বাস বের করার দাওয়াই দিয়েছেন তিনি । রামদেবের দাবি এই পদ্ধতিতে প্রাণায়াম করলে কোভিড উনিশ রোগে আক্রান্তরা সুস্থ্য হয়ে উঠবেন ।
এই লক ডাউনের সময় সবাইকে যোগ ব্যায়াম অভ্যাস করতেও বলেছেন তিনি । যোগ অভ্যাসে শরীরের ইমিউনিটি ক্ষমতা বাড়ে বলে তার দাবি ।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সহ বিশ্বের বিশিষ্ট ভাইরোলজি গবেষকরা জানিয়েছেন সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার মাধ্যমেই করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে কার্যকরী ভুমিকা নেওয়া সম্ভব । একই সাথে অনুসরণ করতে হবে বিভিন্ন প্রাথমিক স্বাস্থ্য বিধি । এখন পর্যন্ত কোভিড উনিশ রোগের কোনও ওষুধ আবিস্কার হয় নি । বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও মনে করে এই রোগের কোনও কার্যকরি ভ্যাকসিন আবিস্কার হতে একবছর সময় লাগবেই ।
স্বভাবতই রামদেব তার দাওয়াই গুলি নিয়ে কোনও ধরণের বিজ্ঞান ভিত্তিক তথ্যের উল্লেখ করেন নি । কোনও গবেষণা থেকে কিংবা কোন হাসপাতালের করোনা ভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তিদের ওপর এই সমস্ত দাওয়াই প্রয়োগ করে সফল হবার ভিত্তিতে তিনি এমন দাবি করছেন তাও উল্লেখ করেন নি সেলফ স্টাইলড যোগ গুরু ।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ওয়েবসাইট ঘেঁটেও এমন কোনও তথ্য পাওয়া যায় নি যে সরষের তেল দিয়ে ধাক্কা দিয়ে করোনা ভাইরাসকে পাকস্থলীতে নিয়ে যাওয়া সম্ভব এবং পাকস্থলীর এসিডের মাধ্যমে এই ভাইরাস মরে গিয়ে আক্রান্ত ব্যক্তি সুস্থ্য হয়ে উঠবেন ।
কদিন আগেই আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বলেছিলেন যে হ্যান্ড স্যানিটাইজার শরীরে প্রবেশ করিয়ে দিলে করোনা ভাইরাস থেকে মুক্ত হওয়া যাবে । এই বক্তব্যের একদিনের মধ্যেই আমেরিকায় প্রায় ত্রিশ জন ব্যক্তি কোনও না কোন স্যানিটাইজার বা জীবাণুনাশকের অতিরিক্ত সংস্পর্শে এসে হাসপাতালে ছুটে গিয়েছেন চিকিৎসার জন্য ।
করোনা ভাইরাস নিয়ে কোনও ধরণের গুজব বা মিথ্যা তথ্য প্রকাশ করার অপরাধে ভারতে এখন পর্যন্ত অনেক ব্যক্তির বিরুদ্ধেই বিভিন্ন রাজ্য সরকার আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে । কোভিড উনিশ রোগ সেরে যাবার জন্য বিভিন্ন সময়ে যারা সরকারী এডভাইজরির সাথে সম্পর্কিত না এমন দাওয়াই দিচ্ছেন তাদের বিরুদ্ধে আদৌ প্রশাসনিক তরফে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না । গত মাসেই দিল্লিতে করোনা ভাইরাস থেকে মুক্ত থাকার জন্য একটি ধর্মীয় সংস্থা গো মূত্র পান করার পার্টির আয়োজন করেছিল । সেই পার্টি আয়োজিত হয়েছিল রীতিমত বিজ্ঞাপন দিয়েই । প্রশাসনিক ভাবে এই সমস্ত বুজরুকি এবং ভ্রান্ত বিজ্ঞান (সিউডো সায়েন্স) ধারণার বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থাই নেওয়া হয় নি ।