দিল্লিতে করোনা ভাইরাস আক্রান্ত এক ব্যক্তির দেহে সম্প্রতি প্লাজমা থেরাপি চিকিৎসা শুরু হয়েছে । চিকিৎসায় সাড়া দিচ্ছেন তিনি। ম্যাক্স হাসপাতালে তার চিকিৎসা চলছে। অবস্থা জটিল হয়ে ওঠার পরই পরিবারের সদস্যদের সম্মতিতে আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে প্লাজমা থেরাপি শুরু করা হয়। প্লাজমা থেরাপির আগে ওই আক্রান্ত ব্যক্তি ভেন্টিলেশনে ছিলেন। এই থেরাপি সফলভাবে প্রয়োগ করার পর তার অবস্থার উন্নতি হতে শুরু করে। ভেন্টিলেশন এখন খুলে নেওয়া হয়েছে।
করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ৪৯ বছর বয়স্ক এই রোগীর দেহেই সর্বপ্রথম দিল্লিতে প্লাসমা থেরাপিতে চিকিৎসা শুরু হলো। কিছুদিন আগে আইসিএমআর প্লাজমা থেরাপির মাধ্যমে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা করার অনুমতি দিয়েছে। এর জন্য একটি সুনির্দিষ্ট প্রটোকল তৈরি করা হয় ।প্লাজমা থেরাপি এমন একটি চিকিৎসা পদ্ধতি যার মাধ্যমে ইতিমধ্যে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে সুস্থ্য হয়ে গেছেন এমন ব্যক্তির শরীর থেকে এন্টিবডি নিয়ে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত অন্য আরেকজন ব্যক্তির শরীরে ইনজেকশনের মাধ্যমে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। এতে আক্রান্ত ব্যক্তির অনাক্রম্যতা বা ইমিউনিটি ক্ষমতা বেড়ে যায় । প্রটোকল অনুযায়ী করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হবার পর যাদের শারীরিক অবস্থা ক্রমাগত অবনতির দিকে চলে যাচ্ছে এবং ভেন্টিলেশনে রাখা হয়েছে তাদের ক্ষেত্রেই এই চিকিৎসা পদ্ধতি প্রয়োগ করা যেতে পারে ।
দিল্লিতে যে ব্যক্তির এই পদ্ধতিতে চিকিৎসা শুরু হয়েছে , তাকে স্বাভাবিক রাখার জন্য অক্সিজেন সিলিন্ডার ব্যবহার করতে হচ্ছিলো । তিনি নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে গিয়েছিলেন। শ্বাসকষ্ট ক্রমশ বাড়ছিল। এপ্রিল মাসের 8 তারিখ থেকে তিনি ভেন্টিলেশনে ছিলেন। কোনও ধরনের চিকিৎসাতেই তেমনভাবে তিনি সাড়া দিচ্ছিলেন না ।এই অবস্থাতেই চিকিৎসকরা সিদ্ধান্ত নেন যে প্লাজমা থেরাপি তার শরীরে প্রয়োগ করা হবে । আক্রান্ত ব্যক্তির পরিবার-পরিজনরা সম্মতি জানান । শুরু হয় ডোনারের খোঁজ। পাওয়াও যায়। মাত্র কিছুদিন আগেই করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর সুস্থ হয়ে ওঠা ওই ব্যক্তির আবার পিসিআর পরীক্ষা করা হয়। প্রমাণ হয় তিনি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত নন। তার শরীর থেকে রক্ত নিয়ে প্লাজমা নিষ্কাশন করা হয় । সেই প্লাজমা ঢোকানো হয় আক্রান্ত ব্যক্তির দেহে। এর আগে ডোনারের বেশ কিছু পরীক্ষা করা হয় । চিকিৎসকেরা নিশ্চিত হন যে তিনি এইডস, হেপাটাইটিস বি, সি কিংবা অন্যান্য কোন সংক্রমণে আক্রান্ত নন ।
১৪ এপ্রিল রাত্রে প্লাজমা থেরাপি শুরু হয়। আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে প্লাজমা শরীরে ঢোকানোর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তার শারীরিক অবস্থার উন্নতি হতে থাকে ।চার দিনের মাথাতেই ভেন্টিলেটর খুলে নেওয়া সম্ভব হয়। যদিও বিক্ষিপ্ত ভাবে অক্সিজেন দেওয়ার প্রয়োজন হচ্ছে। ম্যাক্স হাসপাতাল সূত্রে এরকমটাই জানানো হয়েছে ।
চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন এই আক্রান্ত ব্যক্তিকে ২৪ ঘন্টার জন্যই বিশেষ পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। মাত্র কিছুদিন আগেও তিনি কোনও খাবার খেতে পারছিলেন না । গতকাল থেকে তাকে খাবার দেওয়া হচ্ছে । অন্যান্য শারীরিক সমস্যাও অনেকটা কমে গেছে। আপাতত এই থেরাপি আক্রান্ত ব্যক্তির দেহে সফলভাবেই প্রয়োগ করা সম্ভব হয়েছে বলে চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন ।
ম্যাক্স হাসপাতালের সিনিয়র ডিরেক্টর ডাক্তার সন্দীপ বুদ্ধিরাজা জানিয়েছেন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসায় এক নতুন আশার আলো দেখাচ্ছে প্লাজমা থেরাপি । এই থেরাপির প্রাথমিক সফলতা চিকিৎসকদের যথেষ্ট উৎসাহী করে তুলেছে । পাশাপাশি তিনি এও বলেছেন, ‘মনে রাখতে হবে প্লাজমা থেরাপি কোনও ম্যাজিক বুলেট না’। করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসায় যে সমস্ত প্রটোকল অনুসরণ করতে হয় সব পদ্ধতিগুলো প্লাজমা থেরাপি ব্যবহারের কারণে আরও বিশেষভাবে সক্রিয় হয়ে উঠেছে।
ম্যাক্স হাসপাতালের চিকিৎসকদের মতে প্লাজমা থেরাপি সামগ্রিকভাবে একটি অনুঘটক প্রক্রিয়া হিসেবে কাজ করছে।
সারাদেশেই প্রতিদিন করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে । যারা এই ভাইরাসে আক্রান্ত হবার পর সংকটাপন্ন অবস্থায় পৌঁছে যাচ্ছেন তাদের চিকিৎসাতে প্লাজমা থেরাপি বিশেষ কার্যকরী হয়ে উঠবে। সারাদেশেই সংকটাপন্ন রোগীদের চিকিৎসায় প্লাজমা থেরাপি অনুসরণ করার পদ্ধতি চালু হওয়া খুব জরুরি বলেই ম্যাক্স হাসপাতালের চিকিৎসকরা মত প্রকাশ করেছেন । করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হবার পর সুস্থ্য হয়ে ওঠা একজন ব্যক্তি ৪০০ মিলি লিটার প্লাসমা রক্ত দান করতে পারেন। এই পরিমাণ প্লাজমা থেকে দুজন সংকটাপন্ন রোগীকে সুস্থ করে তোলা সম্ভব । জানিয়েছেন ডাক্তার বুধিরাজা।
উল্লেখ্য এখন পর্যন্ত করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দিল্লিতে প্রাণ হারিয়েছেন ৪৭ জন ব্যক্তি ।