তামিলনাড়ু থেকে ত্রিপুরায় অ্যাম্বুলেন্সে দুই পরিবার।
চেন্নাই থেকে অ্যাম্বুলেন্সে উদয়পুরে এসে পৌঁছালেন স্বামী-স্ত্রী। চঞ্চল মজুমদার ও অসীমা বিশ্বাস মার্চের ২২ তারিখ চেন্নাই পৌঁছান, পরদিন অ্যাপোলো হাসপাতালে ডাক্তার দেখান অসীমা দিদিমণি। তার গত সেপ্টেম্বরে ব্রেন টিউমার অপারেসন হয়েছিল, সেকেন্ড চেক-আপে গিয়েছিলেন।
সেদিনই চিকিৎসার কাজ শেষ, টিকিট ছিল ২৭ মার্চ, ততদিনে লকডাউন শুরু হয়ে গেছে। ফিরতে পারেননি।
তারা যেখানে ছিলেন, আশ-পাশের হোটেলগুলিতে ত্রিপুরার অনেক মানুষ আটকে পড়েছেন। তেমনই আরেকটি পরিবারের সাথে তাদের কথা হয়। ডাক্তারের অনুমতি নিয়ে অ্যাম্বুলেন্সে তারা রওয়ানা দেন বাড়ির জন্য। এপ্রিলের ১৫ তারিখ রওয়ানা দিয়ে ১৯ এপ্রিল রাত সাড়ে দশটা-এগারোটায় উদয়পুরে পৌঁছেছেন।
“ কত কত মানুষ যে কত অসুবিধায় পড়েছেন। অ্যাম্বুলেন্সে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিচ্ছেন অনেকে বাধ্য হয়েই। কারও বাড়িতে বয়স্ক বাবাকে রেখে গেছেন, ফিরতে পারছেন না।
চিকিৎসা করাতে গিয়ে কেউ হয়ত মারা গেছেন। অ্যাম্বুলেন্সেই ভরসা , এক রাজ্য থেকে আরেক রাজ্যে আনছেন প্রিয়জনের দেহ।
আমারা দেখেছি তেমন বেশ কয়েকজনকে। ক্যান্সারের রোগী আসছেন অ্যাম্বুলেন্সে। পথে পথে চেকপোস্ট, সব জায়গাতেই চেকিং আছে।
কোথাও কোথাও মনে হচ্ছিল আর আসতেই পারব না, ফিরেই হয়ত আবার যেতে হবে।“ ফোনে একটানা বলে গেলেন চঞ্চল ।
তিনি স্পোর্টস এন্ড ইয়্যুথ এফেয়ার্স’র এসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর ছিলেন। চাকরি থেকে অবসরে গেছেন। অসীমা বিশ্বাস এই দফতরে চাকরি করেন। উদয়পুরের চন্দ্রপুর স্টেডিয়ামের দায়িত্বে আছেন।
“ একটানা হোটেলে থাকতে থাকতেই যেন অসুস্থ বোধ হচ্ছিল। টাকা-পয়সায় টান ধরছে। আসতেই হল বাধ্য হয়ে। সরকারি চাকরি করেন স্ত্রী, সে নিয়েও চিন্তা হচ্ছিল তার, যদিও অফিস ছুটিই আছে। মেয়ের বিয়ে ঠিক ছিল কিছুদিন পর, এখন তারিখ বদলাতে হবে। উপায় নেই, আসতে হত আমাদের।
কতজন বাড়িতে আসতে না পেরে কান্নাকাটি করছেন। ছোট-ছোট ছেলেমেয়ে রেখে গিয়েছেন কেউ, কেউ আবার বাচ্চাদের সাথে নিয়ে গিয়ে সমস্যায় পড়েছেন।
রাস্তায় এমন দৃশ্যও দেখেছি, পুলিশ যখন আটকে দিচ্ছে, একজন রাস্তায় বসে গেছেন। যুবক ছেলে কেঁদে ফেলেছেন।
অনেকে খাবার টাকা জোগাড় করতে পারছেন না।“ প্রাক্তন সহকারী অধিকর্তা সাহেব বললেন।
নির্দিষ্ট ফরম্যাট পূরণ করে কাগজ পাঠিয়েছেন, তবে এখনও তাদের একাউন্টে কোনও সরকারী সাহায্য পৌঁছায়নি, বলেছেন চঞ্চল মজুমদার। দু’দিন রেশন পেয়েছেন হোটেলে বসে, তবে সেটা কে দিয়েছেন, সেটা তিনি বলতে পারেননি।
তিনি যেখানে ছিলেন চেন্নাইয়ে, তার আশেপাশে ত্রিপুরার অনেকেই আটকে আছেন, “ একশ’র বেশি মানুষ হবেন হয়ত।“
“চেন্নাই থেকে অন্ধ্রপ্রদেশ, ওড়িশা, ঝাড়খন্ড, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, মেঘালয় হয়ে নিজের জায়গায় এলাম। প্রশাসন থেকে অনুমতি নিয়েছি। আর চিকিৎসার কাগজ তো ছিলই। আমাদের পাশাপাশিই আরেক অ্যাম্বুলেন্স এসেছে করিমগঞ্জ পর্যন্ত।
তখন বৃষ্টি । আসাম-মেঘালয় সীমান্তে হেলথ চেকপোস্ট চোখে পড়েনি । পেরিয়ে এসেছি প্রায় আশি কিলোমিটার।
সেখান থেকে আবার ফিরে যেতে হয়েছে। সেই হেলথ চেকপোস্টে পরীক্ষা হল। প্রায় ছয় ঘন্টা লেগেছে।“
“ অ্যাম্বুলেন্স চলেছে দিনরাত । সাথে শুকনো খাবার ছিল, তাই দিয়ে কাটিয়েছি। কোথাও কোথাও খাবার দোকান পেয়েছি।
রাতে রাতেই তাদের চুড়াইবাড়ি পেরিয়ে যেতে হবে, তেমনি নির্দেশ ছিল।
চমৎকার দু’টি ছেলে। চালায় দারুণ, তেমনি ভদ্র, সুন্দর ব্যাবহার।“ চঞ্চল বললেন কোয়ারাইন্টিন হোম থেকে ।
উদয়পুরের গকুলপুরে রাখা হয়েছে তাদের, ইনস্টিটিউসনাল কোয়ারান্টিনে।