‘লকডাউন’, কিংবা ‘করোনা’ও হতে পারে পূজা-সঞ্জয়ের ছেলের নাম। জন্মেছে মাত্র, এখনও এক সপ্তাহ হয়নি বয়স। হাসপাতাল থেকে বাড়ি নয়, বাড়ি রাজস্থানে, গেছে স্কুল বাড়ির অস্থায়ী ক্যাম্পে।
আগরতলা রেল স্টেশনের কাছে ঝুপড়ি বানিয়ে ছিলেন। লকডাউনে আটকা পড়েছেন। রাজস্থান থেকে ত্রিপুরায় এসেছিলেন পেটের টানে, এটা-সেটা ফিরি করেন। যখন বুঝতে পারলেন পরিস্থিতি আর স্বাভাবিক নেই, ততক্ষণে বন্ধ হয়ে গেছে ট্রেন। লকডাউন শুরু হয়, ত্রিপুরা পুলিশের নজরে আসে, আঠার জন, তাদের একটি স্কুল বাড়িতে থাকার ব্যবস্থা করে দেয়া হয়।
পূজা ক’দিন বাদেই আইজিএম হাসপাতালে এক সন্তানের জন্ম দেন। হাসপাতাল থেকে ফিরেছেন আবার ক্যাম্পে।
পুলিশ অফিসার পিনাকী সামন্ত সহকর্মীদের নিয়ে গিয়েছিলেন সদ্যজাতকে দেখতে। কিছু প্রয়োজনীয় জিনিস দিয়ে এলেন। পুলিশ হাসপাতালের ডাক্তার বিশ্বাস দিলেন ওষুধ।
তাদের কোনও অসুবিধা নেই, বলেছেন পূজা।
তাদের চাওয়াও সামান্যই , আটা, সামান্য তেল, আলু, ইত্যাদি।
পূজা-সঞ্জয়-তাদের ছেলের কাহিনীটি ভালই। সদ্যজাত অন্তত ঝুপড়িতে নেই। হাসপাতালেই জন্ম হয়েছে ডাক্তারের হাতে। আবার একজন ডাক্তার গিয়ে দেখেও এলেন। ‘তারা অতিথি’, এই কঠিন সময়ে এই ভালবাসার ছোঁয়া জীবনকে বাঁচিয়ে রাখে, এমন সময়ে নিজের মানুষ পরিচয় বেশ মনে হয়। হতাশা কেটে যায়।
তারপর !
তারপর আরও কিছু কথা উঠে আসে।
সন্তান সম্ভবা মা-কে পেটের টানে নিজের জায়গা থেকে অনেক অনেক দূরে পথে পথে ঘুরতে হয়। ঝুপড়িতে কাটে দিন। নিজের মধ্যে একটু একটু বড় হয়ে ওঠা সন্তানকে নিয়েই, যার আসার সময় একেবারেই কাছে, ট্রেনের কামড়ায় চাপার প্রয়োজন হয়। সন্তান ধারনের সময়টা বাড়িতে থাকার জন্য ‘মেটারনিটি লিভ’ নেই। ত্রিপুরা থেকে রাজস্থান, সদ্যজাত সন্তানকে নিয়ে মা পায়ে পায়ে হেঁটে এই পথ পাড়ি দেবেন বলেন। এই মা-র কাছে হয়ত স্বাভাবিক চিন্তা, জীবন তার কাছে হয়ত এমনই অমসৃন! ক্যাম্পে আরও ছোট ছোট শিশু, মা-বাবার সাথেই চলেছে যাযাবর জীবন নিয়ে । তাদের পড়াশোনা ? এই বেটা-বেটি স্কুলে যায় ? পড়ে ? এসব কথা কি তাদের কাছে বিলাসিতা ? কত প্রজন্ম চলবে এই চাকা ? কোভিড-সময় না হলে কি পথের ধারের ঝুপড়ির ছাড়া অন্য কোথায়ও তাদের ব্যবস্থা হত ! যদি আটকে না পরতেন তারা, ট্রেনে চেপে যেতেন বেশ কয়েকদিনের পথ, আগামী জীবনটি কি নিশ্চিত ছিল ?
স্বাধীনতার বয়স সত্তর পেরিয়েছে।
২০২০ সালে এসেও এক মা , তার নিজের বয়স জানেন না !
প্রশ্নগুলি থাকছেই রাষ্ট্রের কাছে !
_______________________________________________
স্টিল ছবির ঋণঃ উইকিপিডিয়া By user:Flicka – Own work, CC BY-SA 3.0, https://commons.wikimedia.org/w/index.php?curid=1133821 মিউজিক ঋণঃ মিউজিক টুডে https://www.youtube.com/watch?v=6nUCHw40j1o&feature=youtu.be Track: Gorband Music Label: 1992 Living Media India Ltd. _______________________________
( আগরতলা,ত্রিপুরা)