আগরতলা গভর্নমেন্ট মেডিক্যাল কলেজ(এজিএমসি) এবং জিবিপি হসপিটাল’র মেডিক্যাল সুপার(এমএস) পাল্টানোর আদেশ হয়েছে। এই কলেজের ফার্মাকোলজি ডিপার্টমেন্টের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর ডাঃ দেবাশিষ রায় হচ্ছেন নতুন মেডিক্যাল সুপার। তাকে দায়িত্ব নিতে হবে ২৬ মে থেকে।
ফরেনসিক মেডিসিন এণ্ড টক্সিকোলজি’র অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর ডাঃ রণজিৎ দাস এখন এমএস। তাকে ২৬ মে অথবা তার আগে দায়িত্ব ছেড়ে দিয়ে নিজের ডিপার্টমেন্টে রিপোর্ট করতে হবে।
ত্রিপুরা সরকারের অবর সচিব অনিমা দেববর্মার সই করা নোটিফিকেশন ২১ মে জারি হয়েছে।
এপ্রিল মাসে একজন সিভিল সার্ভিস ক্যাডারকে এই হাসপাতালের হেড অব অফিস, ডিডিও করা হয়েছিল। তাকে সব এডমিনিস্ট্রেটিভ দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। এমএসকে(ডাঃ রণজিৎ দাস) বলা হয়েছিল, জায়গা সঙ্কুলান করতে তিনি যেন প্রশাসনিক দালানের ঘরটি ছেড়ে একাডেমিক বিল্ডিং-এ তার চেম্বার থেকে এমএস’র কাজ চালান। তখন বলা হয়েছিল, প্রশাসনিক দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি হওয়ায় এমএস আরও নিবিড়ভাবে পড়াশোনার কাজটি করতে পারবেন।
বিষয়টি এখানেই থেমে থাকেনি।
প্রশাসনিক দায়িত্ব সরিয়ে দেবার এপ্রিলের সেই আদেশের পর এমএস পদ থেকে ডাঃ রণজিৎ দাস অব্যাহতি চেয়ে চিঠি দিয়েছেন বলে শোনা গিয়েছিল। তবে অব্যাহতির বিষয়টি ডাঃ দাসের কাছে জানতে চাইলে, তিনি কোনও মন্তব্য করেনি,হ্যাঁ’ বা ‘না’, কোনোটাই নয়।
অল ত্রিপুরা গভর্নমেন্ট ডক্টর্স এসোসিয়েসন ( এটিজিডিএ), ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল এসোসিয়েসন ( আইএমএ) এবং এজিমসি টিচার্স ফোরাম একজন টিসিএস ক্যাডারকে এই হাসপাতাল ও কলেজের হেড অব অফিস করার আদেশ ফিরিয়ে নিতে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে দাবি রেখেছিল। তারা এও প্রস্তাব করে ছিলেন, স্বাস্থ্য দফতরে সচিব পর্যন্ত ডাক্তারদেরই নিয়োগ করা যেতে পারে। এমএস’র কাছ থেকে প্রশাসনিক দায়িত্ব সরিয়ে নেয়ার বিষয়টি সরকার এবং ডাক্তারদের মধ্যে দূরত্ব তৈরি করা অশুভ পদক্ষেপ বলেও তারা মুখ্যমন্ত্রীকে দেয়া চিঠিতে লিখেছিলেন। দেশে কোথাও এমন নেই,এবং দশকের পর দশক ধরে সন্তোষজনকভাবে এমএসই মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালটির দেখভাল, পরিচালনা করছেন। ডাক্তাররাই এই হাসপাতালসহ অন্যান্য স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন। সাধারণভাবে এজিএমসিতে এমএসই হেড অব অফিস থাকেন দেশের অন্যান্য টিচিং হসপিটালের মত। এমসিআই নর্মসে কিংবা ত্রিপুরা হেলথ সার্ভিসে, ত্রিপুরা মেডিক্যাল এডুকেশনে কোনও সিভিল সার্ভিস অফিসারের এরকম পদ নেই। বিষয়টিতে ডাক্তার বিস্মিত, ব্যাথিত এবং ক্ষুব্ধ, লিখেছিলেন তারা।
জিবিপি হাসপাতাল ত্রিপুরার সবচেয়ে বড় চিকিৎসা কেন্দ্র। এটিই রাজ্যের প্রধান রেফারেল হসপিটাল। এই হাসপাতালই ত্রিপুরায় কোভিড চিকিৎসার প্রধান ব্যবস্থা হয়েছে, ভেন্টিলেটরসহ আইসিইউ, ইত্যাদি।
এটিজিডিএ ইদানিংকালে স্বাস্থ্য দফতরের কাছে একাধিকবার বক্তব্য পেশ করেছে। লকডাউন শুরুর ঠিক আগে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ মোকাবিলায় একগুচ্ছ প্রস্তাব রেখেছিল সংগঠনটি। তার মধ্যে টাস্ক ফোর্স গঠন, ওরিয়েন্টেশন প্রোগ্রাম করা, ইত্যাদি বিষয় ছিল। কয়েকদিন আগেও ডাক্তাররা এই সংগঠন থেকে স্বাস্থ্য দফতরে ডেপুটেসন দিয়েছেন। সেগুলির মধ্যে পিপিই, ত্রিপুরা মেডিক্যাল কলেজের ডাক্তারদের কোভিড মোকাবিলায় কাজে লাগানো, জিবিপি হাসপাতাল থেকে অন্যখানে কোভিড হাসপাতাল নিয়ে যাওয়া, নতুন ডাক্তার-নার্স নিয়োগ, ইত্যাদি ছিল। এটিজিডিএ তাদের ফেসবুকে কোভিড রোগী ও ডাক্তারদের ভাল খাবার দেয়ার দাবি জানিয়েছে।
সিভিল সার্ভিস ক্যাডারকে হেড অব অফিস, ডিডিও করে সেেই নির্দেশ বেরিয়েছিল তখনকার স্বাস্থ্য সচিব ডঃ দেবাশিষ বসুর স্বাক্ষরে। তার কিছুদিনের মধ্যেই স্বাস্থ্য দফতরে কেনাকাটা নিয়ে তদন্তের নির্দেশ হয়, ডঃ বসুকে সচিবের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয়া হয়।সরিয়ে দেয়া এনএইচএম’র মিসন ডিরেক্টরকেও। দিন কয়েক আগে ডঃ বসু চাকরি থেকেই ইস্তফা দিয়েছেন। তিনি অবসরে যাবার পর আবার নিযুক্ত হয়েছিলেন।
বিজেপি বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মন স্বাস্থ্য দফতরে কোভিড-ওয়ান নাইন সংক্রান্ত কেনাকাটায় অনিয়ম হয়েছে বলে চিঠি দিয়েছিলেন। তিনি এই সরকারে স্বাস্থ্যমন্ত্রীও ছিলেন। বছরখানেকের মত তিনি মন্ত্রী ছিলেন। তিনি কোভিড-ওয়ান নাইন বিষয় নিয়ে দ্বিতীয় একটি চিঠিও দিয়েছেন, পিপিই ও স্যানিটাইজারের গুণমান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।