ত্রিপুরার ‘১০৩২৩’ শিক্ষকদের একটি সংগঠন অভিযোগ করেছে তাদের বিরুদ্ধে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে মামলা নিচ্ছে পুলিশ। বিজয় কৃষ্ণ সাহা অভিযোগ করেছেন, ১২ মে তারা শিক্ষাভবনে গিয়েছিলেন তাদের কিছু বিষয় নিয়ে, পরে তাদের সাতজনের বিরুদ্ধে মামলা হয়,জামিন অযোগ্য ধারাতেও অভিযোগ আনা হয়েছে। পরদিন দু’জন গিয়েছিলেন আগরতলায় রাজ্য পুলিশের সদর দফতরে ডিজিপি’র সঙ্গে দেখা করতে। সেখানে পুলিশ তাদের আটক করে সারাদিন থানাতে বসিয়ে রাখে। তবে জানা গেছে, তারা আদালত থেকে জামিন পেয়েছেন।
দুপুরে আগরতলা প্রেস ক্লাবের সামনে সংবাদ সম্মেলন করেছে অল ত্রিপুরা ১০৩২৩ সরকারী ১০৩২৩ এড-হক-পে শিক্ষক কর্মচারী সমিতি।
সুপ্রিম কোর্টে ত্রিপুরার এই ১০৩২৩ শিক্ষকদের নিয়োগের ব্যাপারে একটি আবেদন জানানোর ব্যাপারে বলেছিল রাজ্যসরকার। বিজয় সাহা আজ বলেছেন,আধিকারিকরা সেই ব্যাপারে গাফিলতি করেছেন, সে জন্য শুনানি হচ্ছে না।
ত্রিপুরা সরকার ২০১০ সালে, ২০১৩-১৪ সালে স্নাতক, অস্নাতক এবং স্নাতকোত্তর স্তরে শিক্ষক নিয়োগ করেছিল, পরে তারাই ‘১০৩২৩’ হিসেবে পরিচিতি পান। চাকরিগুলি নিয়ে মামলা হয়, আদালতের রায়ে সেসব চাকরি বাতিল হয়ে যায়। তারপরেও এড-হক শিক্ষক হিসেবে তারা চাকরি করছিলেন, মার্চ মাসের ৩১ তারিখ সেই চুক্তিবদ্ধ-মেয়াদও শেষ হয়ে গেছে।
সরকার ঘোষণা দিয়েছিল, তাদের অন্য দফতরে নিয়োগ দেয়ার জন্য সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করা হবে, সুপ্রিম কোর্ট অনুমতি দিলে তাদের নিয়োগ করা হবে। এই ঘোষণার সময় কিছু গ্রুপ-সি ও ডি শূণ্যপদের উল্লেখ করেছিলেন শিক্ষামন্ত্রী রতনলাল নাথ। পরে তিনি জানিয়েছেন, সুপ্রিমকোর্টে আবেদন করা হয়েছে, তারা বিষয়টি নিয়ে যোগাযোগ রাখছেন। চাকরিগুলি হয়েছিল যখন বামফ্রন্ট ক্ষমতায় ছিল। চাকরি বাতিলও হয় বামফ্রন্ট ক্ষমতায় থাকতে থাকতেই।
২০১৮ সালে বিধানসভা ভোটের আগে বিজেপি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তাদের চাকরির সমস্যা নিয়ম মেনে সমাধান করা হবে। বিজেপি নেতা, আসামের মন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা, শুধু তাদের নয়, চুক্তিবদ্ধ অন্যদেরও ‘ন্যায়’ দেবার কথা বলেছিলেন। তখনকার ত্রিপুরায় বিজেপির সভাপতি বিপ্লব কুমার দেবও তাদের সমস্যার সমাধানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। বিজেপি তাদের ‘ভিসন ডকুমেন্ট’-এ মানবিক দৃষ্টি থেকে এই সমস্যার সমাধান করার কথা বলেছে।
শিক্ষা নিয়ে বিজেপি অনেক প্রতিশ্রুতি দিয়ে রেখেছে। হিমন্ত বিশ্ব শর্মা একটি সভায় নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিতে বলেছিলেন, বিজেপি সরকার গঠনের পর কয়েকদিনের মধ্যে নতুন কলেজের ভিত্তি প্রস্থর স্থাপন হবে। নির্দিষ্ট সময় উল্লেখ করেছিলেন।
ভোটের আগে এই শিক্ষকদের প্রতিনিধিরা বিজেপি নেতাদের সাথে দিল্লি গিয়েছিলেন, ফিরে এসে ধন্যবাদ জানিয়ে র্যালি করেছিলেন। বিজেপি সরকার গঠনের পর অভিনন্দন জানাতে গিয়ে দুই সংগঠন রাস্তায় লোকও হাসিয়ে ছিল, কারা আগে থাকবে এই নিয়ে। আজ যারা সংবাদ সম্মেলন করেছেন, তারাও একাধিকবার বলেছেন, এই সরকার গঠনের পেছনে তাদের ভূমিকা ছিল। আরেকটি সংগঠনও এমন দাবি করে।
‘১০৩২৩’ শিক্ষকদের বিষয়টি নিয়ে বহু বছর ধরেই ত্রিপুরায় চাপান-উতোর চলছে। রাজনৈতিক অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ চলছেই। বিষয়টি বিধানসভার শেষ অধিবেশনেও উঠেছিল।
যারা মামলা করেছিলেন, তারা আবার বলেন, তারা কারও চাকরি চলে যাক, সেটা চাননি, নিজেদের চাকরি চেয়েছিলেন। মামলাকারীদেরও আবার কেউ কেউ ২০১২ সালে বিজ্ঞান স্নাতকের চাকরি পান। অভিযোগ আছে, চাকরি পেয়েও তারা মামলা তুলে নেননি।
‘১০৩২৩’ শিক্ষকদের মধ্যে পঞ্চাশজনের বেশি মারা গেছেন। গতকালও মারা গেছে একজন, মণিশঙ্কর চাকমা।