শিক্ষক কমল দেবকে আরও কয়েকজন শিক্ষকের সাথে গতকাল আটক করা হয়েছিল, তাকে ছাড়েনি পুলিশ। গ্রেফতার করেছে। আদালতে তোলা হবে।
নিজেদের চাকরির দাবিতে শুক্রবারে আন্দোলন করছিলেন শিক্ষকরা। সবাই ১০৩২৩ শিক্ষক। কাজের দাবি জানিয়েছিলেন, নিয়মের দূরত্ব বজায় রেখেই। আগরতলার সার্কিট হাউজের সামনে গান্ধী মূর্তির সামনে তারা প্ল্যাকার্ড নিয়ে দাবি জানাচ্ছিলেন। বিশাল পুলিশ বাহিনী নামে, শিক্ষকদের তুলে নিয়ে যায়। তাদেরই একজন কমল দেব। আগরতলায় অন্য জায়গায়ও এই কর্মসূচী ছিল, তবে অন্য কোথাও পুলিশ শিক্ষকদের আটক করেনি।
গান্ধী মূর্তির পাশে দাঁড়িয়ে শিক্ষকরা রাস্তা অবরোধ করেননি, কিংবা সরকারী সম্পত্তি কিছু ভাঙচুর করেননি।
অরুন্ধতি নগরের পুলিশ মাঠে,দীর্ঘসময় আটকে রেখে তাদের ছেড়ে দেয়া হয়। সেখান থেকে কমল দেব বের হতেই পুলিশ তাকে অন্য একটি গাড়িতে তুলে নেয়। তাকে নিয়ে যায় এন সি সি থানায়। অন্য শিক্ষকরা খবর পেয়ে ছুটে যান সেখানে। কিন্তু কমল দেবের সঙ্গে কাউকে দেখা করতে দেয়া হয়নি। পুলিশ প্রথমে কিছু বলেনি, পরে অনেক রাতে জানায় কমল দেবকে গ্রেফতার করা হয়েছে, জানিয়েছেন ১০৩২৩ শিক্ষকদের একটি সংগঠনের নেতা বিজয় কৃষ্ণ সাহা।
গণতান্ত্রিকভাবে দাবি জানাতে গিয়ে গ্রেফতার হওয়ার ঘটনা ত্রিপুরাতে বহু বহু বছরের মধ্যে নেই। কয়েকবছর আগে আলাদা রাজ্যের দাবিতে অনেকদিন চম্পকনগরে জাতীয় সড়ক অবরোধ করেছিলেন একটি দলের কর্মীরা। কেউ গ্রেফতার হননি। মানিক সরকার মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন তখনকার কংগ্রেস নেতা সুদীপ রায় বর্মনের এক ভাই ও আরেকজনের কাছে বেআইনি অস্ত্র পাওয়া গেছে, এই অভিযোগে আটক করার পর, মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির সামনে রাস্তা দখল করে কংগ্রেসে কর্মীরা স্লোগান দিয়ে যাচ্ছিলেন, কেউ গ্রেফতার হননি। সুদীপবাবুর ভাইকেও থানা থেকে ছাড়া হয়েছিল। চম্পকনগরে যখন জাতীয় সড়ক অবরোধ ছিল, তখন বিজেপি মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির চারদিকের রাস্তা, যেদিকে একটি হাসপাতালেও যেতে হয়, সারাদিন অবরোধ করে রেখেছিল, পুলিশ তুলে দেয়নি।
কংগ্রেস-টিইউজেএস জোট আমলে বইয়ের দাবিতে আন্দোলন করতে গিয়ে পুলিশের গুলিতে এক ছাত্র মারা গিয়েছিলেন। সেই আমলেই খাদ্যের দাবি করে গুলি খেয়ে মরেছিলেন চিমতে হালাম।
সত্তরের দশকে নিজেদের দাবি আদায়ের আন্দোলনে নেমে শিক্ষকরা জেলে গিয়েছিলেন। অনেকের চাকরি গিয়েছিল। বামফ্রন্ট সরকার এসে তাদের চাকরি আবার ফিরিয়ে দিয়েছিল।
১০৩২৩ শিক্ষকরাই, যে সংগঠনের শিক্ষকরা আজ গ্রেফতার হলেন, তারাই আগের সরকারের সময়ে রাস্তায় নেমে চাকরির নিশ্চয়তার দাবি জানিয়ে ছিলেন, পুলিশ আসেনি। ১০৩২৩ শিক্ষকদের কেউ কেউ ট্রেন লাইনও অবরোধ করেছিলেন।
কমল দেব অল ত্রিপুরা ১০৩২৩ এড-হক শিক্ষক কর্মচারী সমিতি সংগঠনের সাথে যুক্ত। এই সংগঠনের প্রধান নেতা বিমল সাহা। বিজেপি-আইপিএফটি জোট সরকার গঠনে তাদের বিশেষ ভূমিকা আছে বলে তারা নানা সময়েই দাবি করেছেন। সরকারকে অভিনন্দন জানানোয় একবার দুই সংগঠনের প্রতিযোগিতায় রাস্তায় হাস্যকর পরিস্থিতিও তৈরি হয়েছিল।