ত্রিপুরার পশ্চিম জেলায় দুই দিনে অন্তত দু’টি কোভিড কনটেন্মেন্ট জোন চিহ্নিত হয়েছে। একটি আমতলি থানা এলাকায় মতিনগরের ফুলতলি অঞ্চলে, আরেকটি সিধাই থানা এলাকার হেজামারার সুবলগড় পাড়ায়।
হেজামারার এলাকাটি কোভিড-ওয়ান নাইন’র হটস্পট হতে পারে বলে আশঙ্কাও করা হয়েছে। পশ্চিম জেলার শাসক কনটেন্মেন্ট জোনের জন্য নির্দেশ দিয়েছেন।
কনটেন্মেন্টে জোনে অনেক বিধি-নিষেধ, যেমন কনটেন্মেন্ট জোন প্রয়োগকারী, স্বাস্থ্য কর্মী, অত্যাবশ্যকীয় পরিসেবায় যুক্তরা ছাড়া কেউ এই জোনে যাওয়া-আসা করতে পারবেন না। অত্যাবশ্যকীয় কাজে কেউ আসলে-বা-গেলে তাদের নাম,ঠিকানা, ইত্যাদি লিখে রাখা হবে, চিকিৎসার প্রয়োজন ছাড়া কেউ এই জোনে রাস্তায়, পাব্লিক প্লেসে থাকতে পারবেন না, এই জোনের সবাইকে আরোগ্যসেতু অ্যাপ ব্যবহার করতে হবে। বাড়িতে বাড়িতে পৌঁছে দেয়া হবে অত্যাবশ্যকীয় জিনিস। কোনও অফিস খুলবে না, কোনও কাজ হবে না। তাছাড়াও আরও অনেক নিয়ম আছে।
ত্রিপুরায় সাড়ে ছয়শো ছাড়িয়ে গেছে কোভিড-ওয়ান নাইন আক্রান্তের সংখ্যা। সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী অধিকাংশেরই ‘ট্র্যাভেল হিস্ট্রি’ আছে। ত্রিপুরার বাইরে আটকে থাকা মানুষরা ট্রেনে করে আসা শুরু হওয়ার পর থেকেই মূলত কোভিড আক্রান্তের সংখ্যা বাড়া শুরু হয়েছে। এখন বিমানেও আসছেন। সাধারণভাবে প্রতি পাঁচ জনে একজন করে টেস্ট করা হচ্ছে।
সিপাহীজলা জেলার শাসক জুনের ২ তারিখ বলেছেন, চেন্নাই, পশ্চিমবঙ্গ থেকে বারো/তেরশো মানুষ এসেছেন, তাদের সবার পরীক্ষার ব্যবস্থা হচ্ছে। তিনি সেদিনই বলেছিলেন, কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারের এক বিচারাধীন বন্দীও কোভিড-ওয়ান নাইন পজিটিভ। তার বাইরের রাজ্যে যাওয়ার কোনও বিষয় নেই।
ত্রিপুরায় যারা কোভিড-পজিটিভ বলে পাওয়া যাচ্ছেন, প্রধাণত তাদের কোনও লক্ষণ নেই, অ্যাসিম্পটোমেটিক। তবে কারোরই কোনও লক্ষণ ছিল না, বা নেই , এমনটাও নয়।
হাসপাতালগুলিতে শ্বাসকষ্ট, জ্বর-সর্দি-কাশি নিয়ে যারা যাচ্ছেন, তাদেরও টেস্ট হচ্ছে।
দেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষ বর্ধন ৭ মে উত্তরপ্রদেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রী, স্বাস্থ্য আধিকারিকদের সাথে ভিডিও কনফারেন্সে সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটরি ইলনেস (সারি), ইনফ্লুয়েঞ্জা লাইক ইলনেস(আইএলএস) সমীক্ষা কোভিড-ওয়ান নাইন’র সাথে লড়াইয়ের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । কোভিড আক্রান্ত নয় এমন জেলায় এই লক্ষণের রোগীদের বের করার জন্য সমীক্ষা করার কথা বলেছিলেন তিনি। তাতেই বোঝা যাবে, অক্ষতিগ্রস্ত জেলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি।
কর্ণাটকে বাড়ি-বাড়ি সমীক্ষা চালিয়ে অন্তত ১৩,৩৪১ জনকে পাওয়া গেছে কোভিড, সারি , আইএলআই আক্রান্ত। শিক্ষক, বিএলও, প্রমুখদের এই কাজে লাগানো হয়েছে। তাছাড়াও ১.৩৭ লক্ষ মানুষকে অন্যান্য রোগে আক্রান্ত ( কোমর্বিডিটি) এবং ৪৮.৩৫ লক্ষ সিনিয়র সিটিজেন চিহ্নিত করা গেছে, তাদের কোরনা সংক্রমণের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ বলে ধরা হয়। কর্ণাটকে ১.৬৮ কোটি বাড়ির ১.১৩ কোটিতে এই সমীক্ষা শেষ হয়েছে। এটি দিন সাতেক আগের খবর।
পশ্চিম ত্রিপুরা জেলায় দু’টি কনটেন্মেন্ট জোন রয়েছে এখন।
এই জেলার কয়েকটি হাসপাতালের তথ্য পাওয়া গেছে, শ্বাসকষ্ট, জ্বর-সর্দি-কাশি নিয়ে কতজন গেছেন,কতজনের কোভিড টেস্ট হয়েছে। কনটেন্মেন্ট জোনের কাছাকাছি হাসপাতালের তথ্যও আছে। তথ্যে গত মাসের প্রায় শেষ পর্যন্ত আছে।
চিহ্নিত সব রোগীকেই এই টেস্ট করা হয়নি। টেস্টের হার বিভিন্ন হাসপাতালে বিভিন্নরকম, সবচেয়ে বেশি টেস্টের হার ( সংশ্লিষ্ট হাসপাতালে চিহ্নিত) মোট সারি/আইএলএস, ইত্যাদি রোগীর ৭৫.২৬ শতাংশ, এবং সবচেয়ে কম ২৭.২৭ শতাংশ ।
হারের পার্থক্য কেন, সেই কারণ কিংবা সম্পর্কিত বিষয়, এবং আরও কোভিড নিয়েই আরও অন্যান্য বিষয় জানা যায়নি। স্বাস্থ্য দফতরের বিভিন্ন স্তরে এবং প্রশাসনিক স্তরে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়েছে, কেউ বলেছেন, তিনি বলতে পারবেন না, কেউ আবার অন্য কাউকে জিজ্ঞেস করতে বলেছেন, সেই তিনি হয়ত আরেকজনের কথা বলেছেন, আবার কাউকে ফোনে পাওয়া যায়নি, ইত্যাদি। যাদের পাওয়া গেছে কিংবা যাদের পাওয়া যায়নি, প্রত্যেকেই কোনও না কোনও স্তরের সর্বোচ্চ পদাধিকারী।
বাইরে থেকে আসা যারা কোভিড পজিটিভ ধরা পড়েছেন, সেইসব ক্ষেত্রে সাধারণভাবে কনটেন্মেন্ট জোন করা হয়নি।
খোয়াই, গোমতী, দক্ষিণ এবং ধলাই জেলায় কিছু নিষেধ জারি হয়েছে।
রাত নয়টা থেকে পাঁচটা পর্যন্ত কেউ চিকিৎসা,ইত্যাদি কারণ ছাড়া বের হতে পারবেন না। ৩০ জুন পর্যন্ত এই আদেশ থাকবে। নিরাপত্তা বাহিনীর লোকজন, জরুরী সেবায় যুক্ত, প্রমুখ ছাড়া কেউ চলাচল করতে পারবেন না।
তাছাড়া,
খোয়াই জেলায় বলা হয়েছে, বিয়ে এবং সৎকারের কাছে কেউ জেলা শাসকের অনুমতি নিয়ে থাকলে এই আদেশের বাইরে থাকবেন। খেলা, বিনোদন, রাজনৈতিক সভা, সাংস্কৃতিক সভা, ধর্মীয় অনুষ্ঠান, ইত্যাদি আয়োজন করা যাবে না।
গোমতী জেলায় বলা হয়েছে, স্বাস্থ্য বিষয় ছাড়া গর্ভবতী মহিলা, দশ বছরের কম বয়সের কেউ, পঁয়ষট্টি বছরের বয়সের বেশি কেউ সব জোনেই বাড়িতে থাকবেন। সরকারি জায়গায় থু থু ফেলা যাবে না। প্রকাশ্যে মদ, পান, গুটকা, তামাক ব্যবহার করা যাবে না। পরিবহনে এবং সরকারি জায়গায় সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে হবে। পাঁচ জনের বেশি জমায়েত নয়।
ধলাই জেলায় বলা হয়েছে, মিলনায়তন, স্যুইমিংপুল, জিমনাসিয়াম, সিনেমা হল, বার, ইত্যাদি খোলা যাবে না। ৭ জুন পর্যন্ত ধর্মীয় স্থান বন্ধ থাকবে। তাছাড়া কনটেন্মেন্ট জোনে পরবর্তী আদেশ না আসা পর্যন্ত বিধি-নিষেধ থাকবে।
দক্ষিণ জেলায় বলা হয়েছে, পাঁচ জনের বেশি জমায়েত করা যাবে না।
খোয়াই জেলায় অনুমতিপ্রাপ্তদের মুখে মাস্ক পরার কথা বলা হয়েছে। ধলাই জেলায় কাজের জায়গায় মাস্ক পরার কথা বলা হয়েছে।
তথ্য-সংস্কৃতি দফতের প্রেস রিলিজ থেকে এই চার জেলা সম্মন্ধে জানা গেছে।
COMMENTS