প্ৰথম খবর

ভালবাসাই জিতে যায় !

By thepongkor

June 15, 2020

বাংলাদেশে গিয়ে লকডাউনে আটকে গেছেন ত্রিপুরার একটি পরিবার। এখন আছেন আগরতলা-আখাউরা চেক পোস্টের কাছেই একটি শ্মশান আশ্রমে। দেশে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তারা ফিরতে চান। আশ্রম এলাকার মানুষ তাদের সাহায্য করছেন খুব। দিন পাঁচেকের মধ্যে তারা দেশে ফেরার সম্ভাবনা আছে।

চট করে পড়ে ফেলা যায়  এই কয়েকটি লাইনে মোট কথা বোঝা গেল, তবে আসল কথাটিই বাকী আছে।

 

আটকে পড়ে টাকা ফুরিয়ে গেছে  , যা  নিয়ে গিয়েছিল পরিবারটি। সাথে থাকা সামান্য যা অলঙ্কার ছিল, তা বিক্রি করতে হয়েছে। বিক্রি হয়েছে আট ক্লাস পড়ুয়া মেয়ের পায়ের নূপুরও। সেটা জানতে পেরে স্থানীয় মানুষ আবার সেরকম জিনিস তাদের হাতে তুলে দিয়েই দেশে ফেরত পাঠাতে চান। বাংলাদেশে গিয়ে কেউ, বিশেষত কোনও ভারতীয় অলঙ্কার বিক্রি করে আসবেন ! না, সেটা তাদের আথিতেয়তায় কুলোয় না।

 

আগরতলার এয়ারপোর্টের কাছে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকা লঙ্কামুড়ার রিপা বর্মন দাস ছেলে-মেয়ে নিয়ে বাংলাদেশে গিয়েছিলেন নয় মার্চ। নারায়ণগঞ্জের বারদীর একটি আশ্রমে পূজা দিতে তাদের যাওয়া। সন্তানদের আবদারে সমুদ্র দেখতে গিয়েছিলেন কক্সবাজারে।

২৩ মার্চ বারদীতে পৌঁছে আটকে যান লকডাউনে। ২৬ মার্চ থেকে বাংলাদেশে পরিবহনও বন্ধ হয়ে যায়। গলার সোনার চেন বিক্রি করে চলে কিছুদিন। মেয়ের পায়ের নূপুর বিক্রি করে কোনও রকমে আসেন আখাউড়া চেকপোস্টে। ততদিনে চেকপোস্ট দিয়ে যাত্রী যাতায়াত বন্ধ হয়ে পড়েছে।

দিশাহারা বর্মন পরিবার আখাউড়ায় প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ করেন। আখাউড়া, বাংলাদেশের একটি উপজেলা। উপজেলা প্রশাসনের এক্সিকিউটিভ ম্যাজেস্ট্রেট তাহমিনা রেইনা , শান্তিবন শ্মশানের লোকনাথ আশ্রমে তাদের থাকার ব্যবস্থা করে দেন। ১৫ মে থেকে সেখানেই আছেন তারা।

আশ্রমে তাদের থাকা-খাওয়া চলছে। সেই দায়িত্ব নিয়েছেন আশ-পাশের মানুষজনই। করোনা পরিস্থিতিতে আশ্রমে ভক্তের আনাগোনাও কম, আশ্রমের আয় কমে গেছে। তাই বলে ভারতীয় এই পরিবারের অসুবিধা হতে দিচ্ছেন না কেউ। আশ্রমে আমিষ খাওয়া চলে না, সে কথাও মাথায় রেখেছেন মানুষ। ছেলে-মেয়ে দু’টির কথা মাথায় রেখে  আশ্রমের বাইরে কারও বাড়িতে মাঝে মাঝে খাওয়ার ব্যবস্থা করছেন।

তাদের সাথে কথা বলে মনের সাহস দিচ্ছেন পড়শিরা। গাছ থেকে এনে দিচ্ছেন আম। দোকান থেকে বিস্কুট। কেউ কেউ দিচ্ছেন নগদ টাকাও।

সাংবাদিকরা পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে জড়িয়ে গেছেন তাদের দেখভালে।

নূরনবী ভূইঞা, বিশ্বজিৎ পাল , দুই সাংবাদিক। তারা বলছেন, বাচ্চা মেয়েটিকে একটি নূপুর দেয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন এক ব্যবসায়ী। মা’র গলায় সোনার চেন ফিরিয়ে দিতে টাকা তোলা হচ্ছে। এটা করা না গেলে বাংলাদেশের ঋণ থেকে যাবে। অতিথির কাছে মান-সম্মান থাকবে না।

 

সাংবাদিক হান্নান খাদেম জানাচ্ছেন, রিপা বর্মনের পরিবার এখনও আখাউরাতেই আছেন। দিন পাঁচেকের মধ্যে তাদের দেশে ফেরার সম্ভাবনা আছে।

“ কয়েকদিন আগে ভারতীয় নাগরিকদের একটি দল দেশে ফিরে গেছেন। তখন আখাউড়ার সাংবাদিকরা তাদের বিষয়টি ঢাকার ভারতীয় হাইকমিসন’র নজরে আনেন। কমিসন তাদের সাথে যোগাযোগ করেছে বলে জানতে পেরেছি। আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই তাদের ফেরার সম্ভাবনা আছে। আগরতলার ইন্দ্রনগর ও শ্যামলীবাজার এলাকার তিনজনও আটকে আছেন। তারা এখন বান্দরবন আছেন। তাদেরও একই সাথে ফেরার সম্ভাবনা আছে,” বলেছেন খাদেম।

 

অচেনাই আপনজন, দেশ নয়, ধর্ম নয়, জাত নয়, গায়ের রঙ নয়, ভাষা নয়, ভালবাসাই জিতে যায়, সেটা ভারত হোক, বাংলাদেশ হোক কিংবা নাইজেরিয়া।

‘কাঙলাদেশ’ বলা যে ইতরামো আজকাল সামাজিক মাধ্যমে দেখা যায়, সেসব  কোথায়ও দাঁড়ায় না, ভালবাসার যে ঋণ, তা শোধবোধ হয় না, ভালবাসায় কে জিততে চায় !

 

ভিডিও ও তথ্য ঋণঃ আখাউড়ার আমাদের সহযোদ্ধারা। বিশেষ উল্লেখঃ নূরনবি ভূইঞা, বিশ্বজিৎ পাল, হান্নান খাদেম।

ভিডিও কিছুদিনের পুরানো। পরিবারটি যখন শান্তিবন আশ্রমে থাকতে শুরু করেছেন, তার কয়েকদিনের মধ্যে এই ভিডিও তোলা হয়েছিল। আমাদের কাছে পৌঁছাতে কিছুটা দেরি হয়ে গেল।