পর্ন ফিল্ম দেখিয়ে, মদ খাইয়ে শিশুদের যৌন নির্যাতন করতেন উত্তরপ্রদেশের এক গৌড়ীয় মঠের মহারাজ। অন্তত চারজনের ক্ষেত্রে যৌন নির্যাতনের ডাক্তারি প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে খবর। বাচ্চাদের ভাল পড়াশোনা করানো হবে বলে বাড়ি থেকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। অভিযোগ এমনই মারাত্বক। বাচ্চাগুলি ত্রিপুরার কাঞ্চনপুরের এবং মিজোরামের মামিত জেলার। “ কাঞ্চনপুরের চারটি শিশু এবং মিজোরামের ছ’টি শিশু । তারা এখন একটি হোমে আছে। মামলা হয়েছে এই ব্যাপারে। আইনি প্রক্রিয়া কিছু বাকী আছে, সেটা শেষ হলে বাচ্চারা রাজ্যে ফিরে আসবে,” বলেছেন ত্রিপুরার কমিসন ফর প্রটেকসন অব চাইল্ড রাইটস ( টিসিসিপিসিআর)’র চেয়ারপার্সন নীলিমা ঘোষ। বেশ কয়েক বছর আগে কাঞ্চণপুরের রিয়াং শরনার্থী ক্যাম্প থেকে ভাল পড়াশোনার নাম করে বাচ্চাদের নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। তারাও নির্যাতনের শিকার হয়েছিল। আসামের হাইলাকান্দি জেলার মিজোরাম সীমান্তের এক আড়কাঠির মাধ্যমে তারা চালান হয়ে ছিলেন। তখন আনন্দমার্গীয় আশ্রমের নাম অভিযোগে এসেছিল।
পুলিশ মহারাজ বাবাজীকে গ্রেফতার করেছে। দশ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে, তারা আট থেকে পনের বছরের বাচ্চা ছেলে, একজনের বয়স শুধু আঠার হয়েছে।যে বাচ্চারা যোন নির্যাতনের শিকার বলে ডাক্তারের রিপোর্টে আছে, তারা নয় থেকে বার বছরের। উত্তর প্রদেশের মুজাফফরনগরের সুখতীর্থে গৌড়ীয় মঠের প্রধান , যিনি নাম নিয়েছেন, ভক্তিভূষণ গোবিন্দ মহারাজ, বাচ্চাদের যৌন নির্যাতন করতেন এবং তাদের মারতেনও। কথা না শুনলে বাচ্চাদের খাবার দেয়া হত না, পুলিশ বলেছে সংবাদমাধ্যমে। ভক্তিভূষণ ও তার সাগরেদ অখিলেশ দাসকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে বাচ্চাদের বক্তব্য রেকর্ড হয়েছে।
“পসকো আইনসহ আরও অন্তত তিনটি ধারায় ভক্তিভূষণের নামে অভিযোগ আনা হয়েছে, “ উত্তর প্রদেশ পুলিশের ইনস্পেক্টর সঞ্জীব কুমার বলেছেন। আশ্রমটি ২০০৮ সাল থেকে চালু আছে, সেখানে দু’টি ক্লাসরুম , একটি ব্ল্যাকবোর্ডা আর দু;টি ল্যাপটপ দেখা পাওয়া গেছে। বাচ্চাদের টেকনিকাল এডুকেসনের নামে আটকে রাখা হয়েছিল। আরেকরটি বড় হল ঘরে বাচ্চারা থাকত, সেটি এখন বন্ধ করে দেয়া হয়েছে, বলেছেন সঞ্জীব সংবাদমাধ্যমকে। জেলা প্রশাসন চাইল্ড হেল্পলাইনে ফোন পেয়ে আশ্রমে যায়,বাচ্চাদের সাথে কথা বলার পর, ঘটনা বেরিয়ে আসে। অভিযোগ পাওয়া গেছে, বাচ্চাদের দিয়ে ধোয়ামোছা করানো, গরুকে খাওয়ানো, গোবর পরিস্কার করানো হত, কথা না শুনলেই বেধরক মার। খাওয়া বন্ধ করে দেয়া হত। পর্ণ ফিল্ম দেখিয়ে ভক্তিভূষণ যৌন নির্যাতন করতেন । বিষয়টি ন্যাশনাল কমিসন ফর প্রটেকসন অব চাইল্ড রাইটস’র ( এনসিপিসিআর) কাছেও পৌঁছেছে। এনসিপিসিআর , তাদের ত্রিপুরা ও মিজোরামের, উত্তর প্রদেশের কমিসন , তিনরাজ্যের পুলিশ ও প্রশাসনিক অফিসারদের নিয়ে ভার্চুয়াল মিটিঙ করেছে এই ব্যাপারে গত সপ্তাহে । এনসিপিআর’র কাছে ভক্তিভূষণ বাচ্চাদের মাদকাসক্ত করতেন বলেও অভিযোগ আছে।
ত্রিপুরার চাইল্ড রাইটস প্রটেকসন কমিসনের চেয়ারপার্সন নীলিমা ঘোষ ছাড়াও, একজন ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট এবং পুলিশ সুপার সেই মিটিঙে ছিলেন।
“ বিষয়টি খুবই গুরুতর। বাচ্চাদের ব্যাপারে নিয়মিত খোঁজ রাখা হচ্ছে। আইনি কিছু বিষয় শেষ হলেই , তাদের ফিরিয়ে আনার ব্যাপারটি চূড়ান্ত হবে। পড়াশোনার কথা বলে নিয়ে এরকম করা, কোনওভাবেই তা হতে দেয়া যাবে না,” বলেছেন নীলিমা ঘোষ।
“ বছর খানেক আগে বিহার থেকে আঠারোজন বাচ্চাকে উদ্ধার হয়েছিল। সেটি একটি বৌদ্ধ প্রতিষ্ঠান ছিল, সেখানেও এই পড়াশোনার কথা বলেই নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।আমরা যখন বাচ্চাদের পাই, মাথার চামড়ায় ঘা-ও দেখতে পেয়েছি। বিলোনিয়ার ছিল বারটি শিশু , কৈলাশহরের তিন জন, অন্যরাজ্যের কয়েকজন, সব মিলিয়ে আঠারো জনকে পাওয়া যায় তখন,” বলেছেন তিনি।
কয়েক বছর আগে রিয়াং শরনার্থী শিবির থেকে বাচ্চাদের ভাল পড়াশোনার কথা বলে নিয়ে গিয়ে কাজে লাগিয়ে দেয়া হয়েছিল বলে ফিরে আসা বাচ্চারা বলেছিল। ত্রিপুরা পুলিশের সেসময়ের ডিজি কে টি ডি সিং তখন বলেছিলেন, এটা পরিস্কার চাইল্ড ট্রাফিকিং বলেই দেখা যাচ্ছে। তারপরেও তেমন কাণ্ড কমেনি।
আসামের রেল স্টেশন থেকে রিয়াং শরনার্থী শিবিরের বাচ্চারাই উদ্ধার হয়েছে।
বিহারের ঘটনা।
এখন এই গৌড়ীয় মঠ’র ঘটনা,সেখানে কাঞ্চনপুরের বাচ্চারাই ছিল ।
_______________________________________________________________________________________________
এনসিপিসিআর’র ভিডিও। জনস্বার্থে দেয় হল ।