দশদিনও চালানো গেল না নেবারহুড ক্লাস। আগামীকাল থেকে বন্ধ থাকছে ত্রিপুরায় নেবারহুড ক্লাস। অতিরিক্ত সচিব ইউ কে চাকমা ২৯ আগস্ট থেকে নেবারহুড ক্লাস বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। কোভিড আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে যাওয়াতেই ক্লাস পরবর্তী নির্দেশ না আসা পর্যন্ত বন্ধ রাখার কারণ বলা হয়েছে নির্দেশে।
কোভিডে মৃত্যু শুক্রবারে মৃত্যু হয়েছে বিশালগড়ের এক স্কুল শিক্ষকের। তিনি এই সপ্তাহেও ক্লাস নিয়েছেন। সেই স্কুলের ছাত্র-শিক্ষকের কোভিড টেস্ট হবে বলে জানা গেছে। অন্যান্য স্কুলের ছাত্রদেরও কোভিড আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। সোনামুড়ার এক স্কুল ছাত্র মারা গেছে।
পাঁচজন পড়ুয়াকে নিয়ে একটি গ্রুপ করে ক্লাস ঘরের বাইরে খোলা জায়গায় ক্লাস করার নির্দেশ দিয়েছিল সরকার প্রথমে। পরে রোদ-বৃষ্টির কথা উল্লেখ করে বারান্দায়ও ক্লাস করার নির্দেশ হয়। ২০ আগস্ট এই ক্লাস শুরু হয়েছিল।
খোলা জায়গায় ক্লাস করানোর ছবি সংবাদ এবং সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে। খোলা জায়গায় ক্লাসের বন্দোবস্ত করতে গিয়ে কোথাও রাস্তায় বসেছেন ছাত্র-শিক্ষক, কোথাও মানুষ আসা-যাওয়া করছেন, সেই রাস্তার পাশে, কোথাও বর্ষার দিনেও আগাছার ঘাস জমিতে, কোথাও ছাত্র স্কুল ঘরের পেছনের জমিতে। এক শিক্ষক গাছের কাটা ডালে বসে ক্লাস নিচ্ছেন, এই ছবি প্রকাশ পাবার পর, নানারকম প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়।
ছাত্র-শিক্ষককে চূড়ান্ত ঝুঁকিতে ফেলে নেবারহুড ক্লাস চালু না করার জন্য অনেকেই মত দিয়েছেন আগে। প্রশ্ন থাকছেই, এক শিক্ষক কি জীবন দিয়ে নেবারহুড ক্লাস বন্ধ করে দিয়ে ছাত্রদের ঝুঁকি কম করে দিয়ে গেলেন!
নেবারহুড ক্লাস করার আগে টেলিভিসনে রেকর্ডেড ক্লাস চালানো, ওয়াটসঅ্যাপে ক্লাস করা, ইত্যাদি চালু হয়েছে। সেগুলি এখনও চালু থাকছে।
তবে সেসব ক্লাসের সুবিধা অনেক পড়ুয়াই নিতে পারছে না। এন্ড্রয়েড ফোন না থাকা, ইন্টারনেটের সুবিধা না থাকা, ইত্যাদি অসুবিধায় ভুগছে গরীব ও গ্রামের পড়ুয়ারা। এন্ড্রয়েড ফোন বিষয়ের কারণে অন্তত দু’টি আত্মহত্যার ঘটনার অভিযোগ রয়েছে। এক ক্ষেত্রে গরীব বাবা মেয়েকে ক্লাসের জন্য এন্ড্রয়েড ফোন কিনে না দিতে পেরে আত্মহত্যা করেছেন, আরেক ক্ষেত্রে এক ছাত্রী নিজেই এই কারণে আত্মহত্যা করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
নেবারহুড ক্লাস চালু করার নির্দেশেও ডিজিটাল ডিভাইসের অভাবে অনেকেই এই সুবিধা নিতে পারেনি বলে স্বীকার করে নেয়া হয়েছে।
নেবারহুড ক্লাস চালু করতে গিয়েও সরকার অবস্থান নিয়েছিল যে পড়ুয়ার অভিভাবক মত না দিলে, তাকে ক্লাসে আনা হবে না। কেউ ক্লাস করবে , কেউ না, এরকম যেন! প্রথমে ১০ নম্বরের পরীক্ষার কথা বলা হয়েছিল নেবারহুড ক্লাসে, পরে এই অবস্থানের আর উল্লেখ করা হয়নি। প্রায়োরিটি গ্রুপ করার কথা বলা হয়। দুর্বল ছাত্র, বছর বাঁচাও স্কিমে আসা ছাত্র, প্রমুখদের নিয়ে গ্রুপ করতে জোর দিতে বলা হয়। নেবারহুড ক্লাস শহরের অনেক স্কুলেই বিশেষ করা হয়নি। তারা ওয়াটসঅ্যাপ,ইত্যাদিতেই ক্লাস চালাচ্ছেন।
প্রতিদিন সব ছাত্রকে নিয়ে নেবারহুড ক্লাস করা চলতি সরকারী পরিকাঠামোতে বাস্তবিকভাবে করা যায় না, পাঁচজনকে নিয়ে গ্রুপ করলে, যত শিক্ষকের প্রয়োজন, তত সরকারী শিক্ষকই নেই। ‘১০৩২৩’ শিক্ষকদের চাকরি চলে যাওয়ায় এই সঙ্কট আরও গাঢ় হয়েছে।
নেবারহুড ক্লাস চালু হওয়ার পর, শিক্ষামন্ত্রী রতনলাল নাথ একবার বলেছেন, শিক্ষকদের একটা অংশ ঘরে বেতন চান, তারাই সংবাদমাধ্যমে এই ক্লাসের বিরোধিতা করাচ্ছেন।
বিরোধী সিপিআই(এম) বিধায়করা আজ মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব’র সাথে দেখা করেছিলেন। তারাও এই ক্লাসের বিপক্ষেই বলেছেন মুখ্যমন্ত্রীকে।
শুধু বৃহস্পতিবারেই ত্রিপুরায় কোভিড আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছেন ৫০৯ জন, মোট আক্রান্তের সংখ্যা সাড়ে দশ হাজার ছুইঁ ছুঁই। কোভিড পজিটিভিটির হার কয়েকদিন ধরে নয়/দশ শতাংশ চলছে। গতকাল তা এগার শতাংশ ছাড়িয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এই হার পাঁচের নীচে থাকাই পছন্দ করে। ত্রিপুরার কোভিড মৃত্যু হার বাড়ছে, কমছে সুস্থতার হার। মৃত্যু-হার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ত্রিপুরাতেই সবচেয়ে বেশি।