ছোট্ট একটি গ্রহের নাম পণ্ডিত যশরাজ। বৃহস্পতি এবং মঙ্গলের মাঝামাঝি এই গ্রহাণু। বটোভেন, মোৎসার্ট গ্রহাণুর সাথে মহাকাশে ঘুরছে যশরাজ।
ভারতীয় উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের উজ্জ্বল নক্ষত্র পণ্ডিত যশরাজ আমেরিকায় মারা গেছন সোমবারে। বয়স হয়েছিল নব্বই। তার মেয়ে দুর্গা যশরাজ সংবাদ সংস্থাকে এই খবর নিশ্চিত করেছেন। সব পদ্ম পুরস্কার পেয়েছিলেন যশরাজ। পেয়েছেন সঙ্গীত নাটক আকাদেমি পুরস্কারও। আশি বছরের বেশি সময় ধরে যশরাজ সঙ্গীতের সাথে যুক্ত ছিলেন। অসংখ্য এলবাম করেছেন, এবং সিনেমার গানে সুর দিয়েছেন। ইন্টারন্যাশনাল এস্ট্রোনোমিকাল ইউনিয়ন ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে তার সম্মানার্থে একটি মাইনর প্ল্যানেটের নাম রেখেছে পণ্ডিত যশরাজ। এই প্রথম ভারতীয় কোনও সঙ্গীত শ্রষ্ঠার নামে কোনও গ্রাহাণুর নাম রাখা হয়েছে।
হরিয়ানায় জন্ম নিয়েছিলেন তিনি ১৯৩০ সালে। এখন থাকতেন আমেরিকার নিউ জার্সিতে।ভারত ছাড়াও তিনি আমেরিকায় ও কানাডায় গান শেখাতেন। কার্ডিয়াক এরস্টে মারা গেছেন, তখন ভারতীয় সময়ে বিকাল পৌনে তিন। মেওয়াতি ঘরানার গায়ক ক্লাসিক্যালে দক্ষ যশরাজ সেমি ক্লাসিকাল গেয়ে খ্যাতির আলোয় আসেন। যশরাজের বাবা ছিলেন রাজ দরবারের গায়ক। যশরাজ নিজেও রাজ দরবারে গেয়েছেন। অভিনেত্রী দুর্গা যশরাজ ছাড়া, শারাঙ্গ দেব পণ্ডিত তার এক ছেলে। সুরকার যতিন-ললিত, অভিনেত্রী সুলক্ষণা ও বিজেয়েতা পণ্ডিত তার বড়ভাইয়ের ছেলে-মেয়ে। হায়দরাবাদে কাটিয়েছেন কিশোর বেলা, মাঝে মাঝেই গুজরাতে যেতেন।সেখানেই তার মেওয়াতি ঘরাণার সাথে পরিচয়। ষোল বছর বয়সে রেডিওতে গাইতে ১৯৪৬ সালে চলে আসেন কলকাতায়। ফিল্ম ডিরেক্টর ভি শান্তারামের মেয়ে মধুরাকে বিয়ে করে চলে যান মুম্বাইয়ে। বাবার কাছে সঙ্গীতের তালিম নেয়া শুরু করলেও, চার বছর বয়সে বাবা মারা যান। বড়ভাই পণ্ডিত প্রতাপ নারায়ণের কাছে তবলা শেখেন। চৌদ্দ বছর বয়সে কণ্ঠ সঙ্গীতে তালিম নেয়া শুরু করেন। পণ্ডিত মণিরম, জয়ন্ত সিং বাঘেলা, মাওয়াতি ঘরাণার গুলাম কাদির খান,এবং আগ্রা ঘরাণার বল্লভদাস দামুজি’ কাছে তালিম নিয়েছেন। ২০০৮ সালে শেষ ফিল্মে কাজ করেছেন, ১৯২০ নামের একটি হরর মুভিতে। অনুরাধা পড়োয়াল, সাধনা সরগম, তৃপ্তি মুখার্জি, সুমন ঘোষ, এইসব পরিচিত শিল্পীরা তার ছাত্র।
আমেরিকা ও কানাডা’র বেশ কয়েকটি জায়গায় মিউজিক স্কুল চালাতেন তিনি। নব্বই বছর বয়সেও স্কাইপে ধরে ছাত্রদের ডাকে সাড়া দিতেন।
রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী এবং সঙ্গীত শিল্পীরা তার মৃত্যুতে শোক ব্যক্ত করেছেন। ” আমি বিধ্বস্ত,” বলেছেন শঙ্কর মহাদেবন।