‘১০৩২৩’ শিক্ষকদের আনা সব স্পেশাল লিভ পিটিসনই খারিজ করে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। বিচারপতি উদয় উমেশ ললিত’র নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ বুধবারে এই নির্দেশ হয়েছে।
২৮ জুলাই এইসব আবেদনের শুনানি হয়েছিল, রায় গতকাল এসেছে।
মোটা কথায় যা বোঝা গেছে, এই শিক্ষকরা আর অন্যদের মতই শিক্ষক নির্বাচনের পদ্ধতির মধ্যে না গিয়ে শিক্ষকতার কাজ আর পাচ্ছেন না। সেই জন্য তারা ২০২৩ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত বয়সের ছাড় পাবেন। রাজ্য সরকার ‘ ওপেন এডভার্টাইজমেন্ট’ ছাড়া তাদের যে বিকল্প চাকরিতে নিতে চেয়েছিল, সেই আবেদনও বাতিল করে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।
” নির্বাচন এবং নিয়োগ, অবৈধ এবং অকার্যকর, সংশ্লিষ্টদের আর কোনও সুবিধা দেয়া যায় না,” রায়ে বলেছে আদালত। রাজ্য সরকার যে বয়সের ছাড় দিয়েছে, সেটা সঠিক এবং যথেষ্ট।
রাজ্য সরকার বিভিন্ন দফতরে গ্রুপ-সি এবং ডি পদে নিয়োগের কথা বলেছে। আবেদনকারীদের পক্ষে বলা হয়েছিল, সেটা অবনমন হবে। আদালত তা মনে করেনি।
রাজ্য সরকারের পক্ষে সিনিয়র এডভোকেট মনিন্দর সিং বলেছেন, নিয়োগই যেখানে অবৈধ, এবং নির্বাচন প্রক্রিয়া বাতিল করে দেয়া হয়েছে, সেখানে তাদের চাকরির আগের ব্যাপারকে কোনও ভাবেই স্বীকৃতি দেয়া যায় না। তাছাড়া বয়সের ছাড় দিয়ে তাদের যথেষ্ট সুযোগ দিয়েছে, তার বেশি সুবিধা তাদের দেয়া যায় না। তাছাড়াও তিনি বলেছেন, তন্ময় নাথের মামলায় হাইকোর্ট ( ত্রিপুরা হাইকোর্ট) নির্বাচন এবং নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল করে দিয়েছে যেহেতু সেগুলি খেয়ালখুশিমত হয়েছে এবং অবৈধ। হাইকোর্ট দেখেছে, নির্বাচন কেবলমাত্র মৌখিক ইন্টারভিউতে হয়েছে, সেখানে স্বজনপোষণ এবং পক্ষপাত হয়েছে।
একটি আবেদনে আদালতকে জানানো হয়েছিল, ত্রিপুরায় ২০,১৬৫ শিক্ষক পদ খালি আছে, এবং ১৬.০৯.২০১৬ থেকে ২৯.০৫.২০২০ পর্যন্ত ৪,৩০০ শিক্ষক নিযুক্ত হয়েছেন।
শিক্ষকদের কারও কারও পক্ষে দাঁড়িয়ে ছিলেন, সিনিয়র এডভোকেট ডঃ রাজীব ধাওয়ান। তিনি বলেছিলেন, এত সংখ্যক শূণ্যপদের কথা মাথায় রেখে, ২০১৯-২০ শিক্ষা বছরের শেষে যাদের চাকরি চলে গেছে, তাদের উপযুক্তভাবে নিয়োগ করা হোক। তাছাড়াও তিনি বলেছেন, কেউ শিক্ষক হিসেবে নির্বাচিত হন বয়সের ছাড়ের সুবিধায়, অথবা কেউ যদি বিকল্প কাজও পান, তবে কয়েকটি সমস্যা আছে, তাদের আগের চাকরির কোনও বিষয়ে গণ্য করা যাচ্ছে না, একেবারে গোড়া থেকে আবার শুরু করতে হবে এবং তাদের যদি গ্রুপ-সি এবং ডি পদ দেয়া হয়, সেটা অবনমন হবে।
আবেদনকারীদের পক্ষে ছিলেন সিনিয়ন এডভোকেট জয়দীপ গুপ্তা, তার বক্তব্যও ছিল যে গ্রুপ-সি এবং ডি পদে চাকরি অবশ্যই তাদের জন্য অবনমন হবে।
আবেদনকারী কারও কারও পক্ষে ছিলেন, সিনিয়র এডভোকেট কলিন গনজালভেস একটি নতুন বক্তন্য পেশ করেছেন। তিনি যেসব শিক্ষকের জন্য দাঁড়িয়েছিলেন, তারা বিকল্প চাকরি নিতে রাজি, তবে প্রয়োজনীয় যোগ্যতা অর্জনের সুযোগ তাদের দিতে হবে।
দাড়িয়ে ছিলেন কপিল সিবলও। শূণ্যপদের অবস্থা বিবেচনা করে তাদের উপযুক্ত চাকরি দেয়ার কথা বলেছেন তিনিও।
রাজ্য সরকারের উকিল মনিন্দর সিং বলেছেন, ২০,১৬৫ শিক্ষক পদ শূণ্য, এই তথ্য ঠিক নয়।
‘১০৩২৩’ শিক্ষকদের চাকরি থেকে ছাঁটাইয়ে আবারও সিলমোহর দিল সর্বোচ্চ আদালত। ছাঁটাই হওয়া শিক্ষকের সংখ্যা এখন ৮৮৮২ জন।
এই শিক্ষকদের চাকরি ত্রিপুরা হাইকোর্টের রায়ে কোপে পড়েছিল ২০১৪ সালে। পুরো নিয়োগনীতিই বাতিল করে দিয়ে তাদের চাকরি খারিজ করে দেয়া হয়। ২০১৭ সালে সুপ্রিম কোর্ট ত্রিপুরা হাইকোর্টের রায়ই বজায় রাখে। যদিও এড-হক হিসেবে তারা এই মার্চের ৩১ তারিখ পর্যন্ত কাজ করেছেন।
২০১৭ সালের রায়ের পরেও একাধিকবার এই বিষয়টি হাইকোর্ট-সুপ্রিম কোর্ট হয়েছে।
হাইকোর্টের মূল রায়ে বলা হয়েছিল, এই শিক্ষকদের কেউ নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়ায় টিকে যান, তবে তাদের চাকরির সিনিয়রিটি, ইত্যাদি সব ঠিক থাকবে।তারপর ২০১৭ সালে তাদের নিয়মিত চাকরিই চলে যায়, তারা এড-হক ভিত্তিতে চাকরিতে রয়ে যান।
বামফ্রন্ট আমলে তাদের চাকরি হয়েছিল, একাধিক বছরে বিজ্ঞপ্তি বেরিয়েছিল, এবং সেই আমলেই তাদের চাকরি চলে যায়। সরকার ‘পাশে আছি’ বার্তা দিয়েছিল।
প্রায় একই বার্তা এখনের বিজেপি সরকারও দিচ্ছে।
ত্রিপুরায় গত বিধানসভা নির্বাচনে এটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
বিজেপি ত্রিপুরায় ২০১৮ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে বহুবার তাদের বিষয়ে বলছে। এখন বিজেপি ক্ষমতায়। তাদের নির্বাচনী ইস্তেহার ‘ভিসন ডকুমেন্ট’-এ মানবিক দৃষ্টিতে বিষয়টি সমাধানের কথা বলা হয়েছে। বিজেপি নেতা ডঃহিমন্ত বিশ্ব শর্মা শুধু তাদের না, অন্যান্যদেরও ‘ন্যায়’ দেবার কথা বলেছিলেন। কেন্দ্রীয় মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রীর সাথে এই শিক্ষকদের দেখা করিয়ে দেয়া, সেখানে খাওয়ানো, ইত্যাদি সাংবাদিকদের বলেছিলেন। ‘ঘুমা ঘুমা কে চালানা’ বলে একটি ভিডিও তো এখনও সামাজিক মাধ্যমে মাঝে মাঝেই জেগে ওঠে।
কিছু শিক্ষক তখন দিল্লি গিয়েছিলেনও। ফিরে এসে মিছিল করে বিজেপিনেতাদের ধন্যবাদ জানিয়েছিলেন। তখন সংসদে এই বিষয় উঠবে বলে খুব শোনা যেত। শিক্ষকদের অনেকেই এই সরকার গঠনে বিশেষ ভূমিকা নিয়েছেন বলে প্রকাশ্যেই বলে থাকেন।
শিক্ষামন্ত্রী রতন লাল নাথ, বিকল্প ব্যবস্থা একটা কিছু হবেই বলে রেখেছেন অনেকবার।