প্ৰথম খবর

আজকের দিনেই গুগল ম্যাপের স্বপ্ন দেখিয়েছিল স্পুটনিক

By Master

October 04, 2020

আজকের দিনে উনিশশো সাতান্ন সালে ঘটে গিয়েছিল একটি বিপ্লব। বিপ্লব ছিল মহাকাশবিদ্যায়। এই বিপ্লবকে সার্থক রূপ দিয়েছিল একটি দেশ , রাশিয়া। পশ্চিমা বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিল সেদিন রাশিয়া। সোভিয়েত ইউনিয়ন প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ স্পুটনিক’ মহাকাশে পাঠিয়েছিল ।

একটু ভাবুন মানুষ ওই দিনটিতে সর্বপ্রথম সক্ষম হলো নিজের মেধা , বুদ্ধি , পরিশ্রম এবং কারিগরি বিদ্যা কে সাথে নিয়ে মহাকাশ জয়ের স্বপ্ন দেখতে।

১৯৫৭ সালের আজকের দিনেই মানব ইতিহাসে মহাকাশ জয়ের যুগ শুরু হয়ে গিয়েছিল, রাশিয়ার হাত ধরে । এই একটি ঘটনা আগামীদিনের অনেক বাস্তবতাকে কিন্তু সুনিশ্চিত করেছিল ।

যে রকেটের মাধ্যমে এই কৃত্রিম উপগ্রহকে মহাকাশে পাঠানো হয়েছিল , এর শক্তি ছিল আমেরিকান রকেট থেকে অনেক বেশি। আমেরিকা এবং রাশিয়া তখন মহাকাশ জয় নিয়ে সম্মুখ সমরে অবতীর্ন। কোল্ড ওয়ার চলছে । কে আগে মহাকাশে উপগ্রহ পাঠাবে এই নিয়ে চলছে প্রেস্টিজ ফাইট। দান কিন্তু জিতে গেল রাশিয়া । কেন ? আমেরিকার নিউক্লিয়ার বোমার প্রযুক্তি ছিল রাশিয়ার তুলনায় উন্নত । রাশিয়ানদের তখনো সেরকম ধারণাই ছিল না কীভাবে আমেরিকান প্রযুক্তির মতো উন্নত নিউক্লিয়ার রকেট তৈরি করা যায় । রাশিয়া পুরো মনোযোগ দিয়ে দেয় অন্য বিষয়ে । ধ্বংসাত্মক উদ্দেশ্য নয় , নতুন কিছুকে সামনে নিয়ে আসার প্রেরণা । সারা পৃথিবী বুঝতে পেরেছিল , আজকের দিনেই , ৬৩ বছর আগে যে মানুষ ইচ্ছে করলে কী করতে পারে ।

এদিকে জহনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ে দুজন বিজ্ঞানী ব্যস্ত ছিলেন অন্য কাজে । তারা স্পুটনিকের গতিবিধির ওপরে নজর রাখছিলেন ।তারা দেখলেন স্পুটনিকের রেডিও সিগনালের ডপলার শিফট থেকে এর কক্ষপথ সম্পর্কে সম্পুর্ন ধারণা পাওয়া যাচ্ছে ।

বিংগো!!!

তারা জানালেন যদি কৃত্রিম উপগ্রহের অবস্থান জানা যায় , তাহলে উপগ্রহের ডপলার শিফট ব্যবহার করে পৃথিবীর মাটিতে কোথায় এই সিগন্যাল রিসিভ হচ্ছে সেটাও জানা যাবে । তাহলে বিষয়টা কী দাঁড়ালো ? আজকের দিনের জিপিএস’র শুরুয়াত হয়ে গিয়েছিল স্পুটনিকের উৎক্ষেপণের মধ্য দিয়েই । আমাদের গাড়িতে সেই কনসেপ্ট ব্যবহার করেই জিপিএস’র সাহায্য নিচ্ছি । স্পুটনিকের উৎক্ষেপণের মাধ্যমেই সুনিশ্চিত হয়েছিল একটি শিশুর জন্মগ্রহণ , গুগল ম্যাপ ।

স্পুটনিক একটি যুগের সূচনা করে দিয়েছিল। রাশিয়ার এই সাফল্য আমেরিকাকে বাধ্য করলো এক বছরের মধ্যেই নাসা’র প্রতিষ্ঠা করতে । এদিকে যেদিন স্পুটনিকের উৎক্ষেপণ হলো , এর ঊনত্রিশ তম দিনেই রাশিয়া লাইকা নামে একটি কুকুরকে পাঠালো মহাকাশে । মানুষ স্বপ্ন বুনতে শুরু করে দিলো , ফার্স্ট ম্যান ইন দ্য মুন । ভারত তখন শিশু রাষ্ট্র । মহাকাশ গবেষণা এদেশে তখন অঙ্কুর অবস্থায় , যদিও বলিউড ১৯৫৭ তেই পেয়ে গেছে ব্লক বাস্টার হিন্দি সিনেমা ‘মাদার ইন্ডিয়া’ — নার্গিস পর্দায় গাইছেন , ‘দুনিয়া মে হাম আয়ে তো জিনা হি পরেগা’ ।

স্পুটনিক ছোটই ছিল। মহাকাশে সক্রিয় ছিল ১৯৫৭ এর ২৬ অক্টোবর পর্যন্ত।৫৮ সেন্টিমিটার ব্যাসের স্পুটনিক জানিয়ে দিয়েছিল পৃথিবীতে পরের কয়েক দশক বিশ্ব রাজনীতি , শিক্ষা , অর্থনীতি কিভাবে শেকড় ছড়াবে । রাশিয়ার জাতীয় গর্ব যদি হয় স্পুটনিক , সারা বিশ্বের মানুষের কাছে অবশ্যই স্বপ্নের সহচর ।