ত্রিপুরায় অন্তত একটি দুর্গা পূজার অনুমতি তুলে নিয়েছে প্রশাসন।কোভিড বিধিনিষেধ না মানার জন্যই এই ব্যবস্থা। দুর্গা পূজার তিনদিন পার করে, চারদিনের মাথায় টনক নড়ল প্রশাসনের। আজই দুর্গা পূজার শেষ দিন।
ভারতরত্ন সংঘ’র দুর্গা পূজা প্যান্ডেল দুপুর দু’টোর মধ্যে বন্ধ করে দিতে, এবং সন্ধ্যা সাতটার মধ্যে মূর্তি বিসর্জন করে দিতে বলেছে জেলা প্রশাসন। এই ক্লাব পশ্চিম ত্রিপুরা জেলায়।
জেলা শাসক যে নির্দেশে দুর্গা পূজার অনুমতি তুলে নিয়েছেন, সেখানে ২৪ অক্টোবরের ভিড়ের কথা উল্লেখ করে বলা হয়েছে, ক্লাব সম্পাদক হলফনামা দিয়ে বলেছিলেন,একসাথে ১০/১৫ জনের বেশি ঢুকতে দেয়া হবে না, এবং শারীরিক দূরত্ব,ইত্যাদি বজায় থাকবে। সেই শর্তেই অনুমতি দেয়া হয়েছিল। ২৪ অক্টোবরের ভিড়ের কথা উল্লেখ করা হলেও, ব্যবস্থা নেয়া হল আজ, ২৬ অক্টোবর।
ভারতরত্ন সংঘ প্রতিবারেই বিশাল উঁচু ও বড় প্যান্ডেল করে থাকে। প্রচুর মানুষ ভিড় করেন। এইবারেও প্যান্ডেল বিশাল বড়ই করা হয়েছে। মানুষের ভিড়ও প্রচুর হয়েছে।
ভারতরত্ন সংঘের মত ভিড় না হলেও, অন্যান্য প্যান্ডেলেও যথেষ্ট ভিড় হয়েছে, অন্তত ১০-১৫ জনের বেশি মানুষ একসাথে শারীরিক দূরত্ব বজায় না রেখেই প্যান্ডেলে ঢুকেছেন। দ্য প্লুরাল কলাম সেসব ভিড়ের ছবি দেখিয়েছে দুর্গা পূজার শুরুর দিকেই। মাস্ক ছাড়া ঘোরাঘুরি, এবং প্রশাসনের মাইকিং-র খবরও দেখিয়েছে।
ভারতরত্ন সংঘ-এ ভিড় হওয়ার রেকর্ড আছে,তা মোকাবিলার আগাম প্রস্তুতি যে ছিল না, তা বোঝাই গেছে ভিড়ের চেহারায়।
ভারতরত্ন সংঘ’র এই দুর্গা পূজা উদ্বোধন করেছেন বিজেপি’র ত্রিপুরা প্রদেশ সভাপতি ডাঃ মানিক সাহা, সেই এলাকার বিধায়ক ডাঃ দিলীপ দাস, সাথে শাসক বিজেপি’র অন্য নেতারাও ছিলেন। উদ্বোধনের ফিতে কাটার ছবিতেও শারীরিক দূরত্ব রাখার দৃশ্য নেই। গতরাতে সেই পূজা প্যান্ডেলের মঞ্চ থেকে বিজেপি’র আরেক বিধায়ক রামপ্রসাদ পালকে বক্তৃতা দিতে দেখা গেছে।
জেলা প্রশাসন ভারতরত্ন সংঘ’র সভাপতি কৃষ্ণপদ সরকার এবং সম্পাদক প্রদ্যুৎ ধর চৌধুরী’র বিরুদ্ধে মামলা নিতে পোলিস সুপারকে লিখেছে। কৃষ্ণপদ সরকার বিদ্যুৎ বিভাগের সিনিয়র ম্যানেজার,একজন সরকারী কর্মচারী।
সম্পাদক প্রদ্যুৎ ধর চৌধুরী প্রাক্তন সরকারী কর্মচারী। কিছুদিন আগে তার বাড়িতে আক্রমণ হয়েছে অভিযোগ করে থানার সামনে দাঁড়িয়ে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, তিনি ক্লাব সম্পাদক হয়েছেন বলে, তার কাছে টাকা চেয়ে বাড়িতে হামলা হয়েছে। তার সম্পাদক হওয়াটা কারও কারও পছন্দ না। ক্লাবের বিষয়েও তিনি রাজনীতির প্রেক্ষাপট এনেছিলেন, বিজেপিকে বদনাম করতে নাকি সিপিআই(এম) ‘সন্ত্রাসীরা’ সচেষ্ট। প্রদ্যুৎ ধর চৌধুরী বলেছিলেন।
“২৬ তারিখ পর্যন্ত আমাদের অনুমতি ছিল, তারপরে যেহেতু অনুমতি পাওয়া যায়নি, তাই আমরা মূর্তি বিকাল পাঁচটার মধ্যে বিসর্জন করে এসে, এখন প্রসাদ খাচ্ছি,” প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন প্রদ্যুৎ।
” পূজা বন্ধ করার বিষয় নয়। বস্তুত ২৬ তারিখের পর আর আমাদের অনুমতি বাড়েনি। তাই আমরা মূর্তি বিসর্জন করে দিয়েছি। সন্ধ্যার পর করলে ভিড় বাড়বে, তাই সন্ধ্যার আগেই শেষ করেছি। আগামীকাল মঙ্গলবার, আগামীকাল করার প্রশ্নই ছিল না,” প্রথমে বলেছেন কৃষ্ণপদ সরকার। পরে বলেছেন, তাদের সাতটার মধ্যে প্রশাসন বলেছে বিসর্জন করে দিতে। তার নামে কোনও মামলা হয়নি, বলেছেন তিনি। ( জেলা শাসক, পুলিশকে নির্দিষ্টভাবে এফআইআর নিতে বলেছেন।)
আর কোনও দুর্গা পূজা প্যান্ডেল বন্ধ করা হয়েছে কিনা,ইত্যাদি জানতে চেয়ে পশ্চিম জেলার শাসকের কাছে ওয়াটসঅ্যাপে ম্যাসেজ করা হয়েছে, জবাব পাওয়া যায়নি।