সকালে ত্রিপুরার উদয়পুরে একটি খবরের কাগজের সব কপি নষ্ট করে দেয় দুস্ক্রিতীকারীরা। একটি বাসে করে গোমতী, দক্ষিণ জেলার পত্রিকা নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। বাসটি উদয়পুরে পৌঁছলে গাড়ি থেকে সব খবরের কাগজ নামিয়ে ছিঁড়ে ফেলা হয়। রাস্তায় ফেলে দেয়া হয়।
এ ঘটনায় খবরের কাগজের সম্পাদক এবং মালিক অনল রায় চৌধুরী পুলিশের কাছে একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন। অনল রায় চৌধুরী বলেছেন, প্রায় ছয় হাজার কপি পত্রিকা নষ্ট করে দেয়া হয়েছে। উদয়পুরের রাজারবাগ মোটরস্ট্যান্ডে এ ঘটনা ঘটেছে। বিএমএস নেতা রাজু মজুমদারের নেতৃত্বে ৩০-৪০ জনের একটি দল এ ঘটনা করেছে। রাজ্য পুলিশের ভারপ্রাপ্ত ডিজি, গোমতী জেলার এসপি, উদয়পুরের এসডিপিও এবং রাধাকিশোরপুর থানার ওসির কাছে তিনি ফোনে এবং ম্যাসেজ করে অভিযোগ জানিয়েছেন। কিছুক্ষণের মধ্যে অভিযোগের হার্ডকপি পৌঁছে দেয়া হবে।
অনল রায় চৌধুরী বলেছেন, গোটা ঘটনা খুব দুর্ভাগ্যজনক। এমন ঘটনা আগে ঘটে নি। মিডিয়া ফ্রেটাররনিটিকে তিনি এগিয়ে আসার আহ্বান করেছেন এ ঘটনার বিরুদ্ধে। তিনি বলেছেন, তিন ধরে তাদের খবরের কাগজে কৃষি দপ্তরের একটি দুর্নীতি নিয়ে খবর প্রকাশিত হচ্ছে। তাতে ১৫০ কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে বলে অভিযোগ। এর সঙ্গে দপ্তরের অধিকর্তা এবং মন্ত্রীর নাম জড়িয়েছে। এসব নিয়ে খবর করায় এই আক্রমণ বলে তিনি মনে করছেন। তিনি বলেছেন, যেদিন প্রথম খবর প্রকাশিত হয়, তার পরের দিন থেকেই তার খবরের কাগজের বিরুদ্ধে গোমতী জেলার বিভিন্ন জায়গায় বিজেপি মণ্ডল কমিটির উদ্যোগে মিছিল হয়েছে।
অবশ্য ত্রিপুরাতে খবরের কাগজের প্যাকেট নষ্ট করার অভিযোগ এটাই প্রথম না। ত্রিপুরায় বিজেপি আইপিএফটি সরকার আসার পর অন্য একটি খবরের কাগজ, যা বিরোধী দলের মুখপত্র হিসাবে স্বীকৃত ছিল তাদের প্যাকেট রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় নষ্ট করা হয়েছে। ঐ খবরের কাগজের পক্ষ থেকে এবং বিরোধী সিপিআই(এম)-এর পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছিল পত্রিকার হকার এবং এজেন্টদের মারধর এবং হুমকি দেয়া হয়েছে। যাতে সেই নির্দিষ্ট খবরের কাগজ বিলি না করা হয়। এমন ঘটনার অভিযোগ একটি না, ধারাবাহিকভাবে এসেছে।
গত বছর নির্দিষ্ট সেই খবরের কাগজের রেজিষ্ট্রেসন এবং আরএনআই ইস্যু তুলে পত্রিকার ছাপা বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। যদিও এই খবরের কাগজটি প্রায় ৪০ বছর পুরানো। পরে আদালত থেকে পত্রিকার কর্তৃপক্ষ ছাপার অনুমতি নিয়ে আসে। পত্রিকাটি আবার চলতে শুরু করে।
বছর দেড়েক আগে বিশালগড়ে আরও একটি খবরের কাগজের খবরের প্রতিবাদে গেরুয়াপন্থীরা মিছিল সংগঠিত করেছে। ঐ খবরের কাগজের কর্তৃপক্ষ নিজেদের উত্তরপূর্বাঞ্চলের মধ্যে বাংলায় নিজদের সবচেয়ে বেশি প্রচারিত বলে দাবি করেন।
কোন একটি খবরের কাগজে প্রকাশিত খবর নিয়ে আপত্তি থাকতেই পারে। কিন্তু তার জন্য নির্দিষ্টভাবে প্রতিবাদ জানানো যায়। তা বলে রাস্তায় মিছিল করে ঐ পত্রিকার বিরুদ্ধে কথা বলা বা বয়কটের ডাক দেয়া একদমই নীতি বিরুদ্ধ।
ত্রিপুরাতে সংবাদপত্র এবং সাংবাদিকদের উপর আক্রমণের আরও বেশ কিছু খবর সম্প্রতি সময়ে উঠে এসেছে।
এসেম্বলি অব জার্নালিস্ট, ত্রিপুরার সংবাদ মাধ্যমের কর্মীদের সবচেয়ে বড় প্ল্যাটফর্ম দাবি করেছে গত ৩০ মাসে ২৪ জন সাংবাদিক আক্রান্ত হয়েছেন। সেপ্টেম্বর মাসে মুখ্যমন্ত্রী নিজে সংবাদ মাধ্যম নিয়ে কিছু বক্তব্য রাখেন। মুখ্যমন্ত্রীর সেই বক্তব্যকে এসেম্বলি অব জার্নালিস্ট সংবাদ মাধ্যমের বিরুদ্ধে হুমকি হিসাবে দেখছে। এবং তার বিরুদ্ধে তারা আন্দোলন করছে।