তিন বছরেও শাস্তি হল না। এখনও বিচার পাননি সাংবাদিক সুদীপ দত্ত ভৌমিকের পরিবারের লোকজন। ২০১৭ সালের ২১ নভেম্বর। শেষ দুপুর, হঠাৎ আসে খারাপ খবর। প্রথমে সাংবাদিকদের মোবাইলে ঘুরতে থাকে সে খবর। তার কিছুক্ষণের মধ্যেই আগরতলার বিভিন্ন চ্যানেলের স্ক্রিন ফুঁড়ে বেরিয়ে আসে ব্রেকিং নিউজ। ত্রিপুরার সাংবাদিক সুদীপ দত্ত ভৌমিক খুন হয়েছেন। গুলি করে মারা হয়েছে তাকে। দেহ মিলেছে আগরতলার একটু দূরে আর কে নগরে ত্রিপুরা ষ্টেট রাইফেলসের দ্বিতীয় ব্যাটালিয়নের হেডকোয়াটারে। বিভিন্ন নিউজ চ্যানেলের প্রথম খবর এবং ছবি স্ক্রিন শট নিয়ে পোস্ট হতে থাকে সামাজিক মাধ্যমেও। শুধু ত্রিপুরা না। সেই খবর ছড়িয়ে পড়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। দেশের মিডিয়াতে। তার মাত্র দুমাস আগে, ত্রিপুরার বুকে খুন হয়ে গেছেন তরুণ আরেক সাংবাদিক। শান্তনু ভৌমিক। বয়স হয়েছিল মাত্র ২৮। ২০ সেপ্টেম্বরের ঘটনা। ৬১ দিনের মধ্যে ত্রিপুরার মতো ছোট একটি রাজ্যে দু’দুজন সাংবাদিক খুন! ঘটনার আকস্মিকতায় অনেকেই বাকরুদ্ধ। সাংবাদিক সুদীপ দত্ত ভৌমিকের খুনের ঘটনায় অভিযোগ উঠেছিল, টিএসআর দ্বিতীয় ব্যাটালিয়নের কমান্ডেন্ট তপন দেববর্মার বিরুদ্ধে। সঙ্গে আরও তিন জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল। পুলিশ সেসময় তাদের গ্রেফতারও করে। সেসময় ত্রিপুরায় বামফ্রন্ট সরকার। সেই সরকার দু’টি হত্যাকান্ডেই আলাদ আলাদা স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন টিম (সিট) গঠন করেছিল। তদন্ত শুরু হয়েছিল। অন্যদিকে ত্রিপুরার বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠন, এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দল দুটি খুনের ঘটনায় সিবিআই তদন্ত দাবি করে। সিবিআইয়ের দাবিতে অনড় থাকে সাংবাদিক একটি অংশ, এবং কিছু রাজনৈতিক শক্তি। রাজ্যের কয়েকজন সাংবাদিক প্রতিনিধি সেই দাবি নিয়ে দিল্লিতে ছুটে যান। তারা দেখা করেন, রাষ্ট্রপতি, বিভিন্ন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান, আরও অনেকের সঙ্গে। তার আগে অবশ্য সাংবাদিক সুদীপ দত্ত ভৌমিক খুনের ঘটনায় ত্রিপুরায় বনধ পালিত হয়েছে। রাজ্যের অনেক খবরের কাগজ একদিন একযোগে তাদের সম্পাদকীয় কলাম সম্পূর্ণ কালো রেখেছেন, প্রতিকী প্রতিবাদ! এমন আরও অনেক প্রতিবাদ কর্মসূচী হয়েছে। আগরতলার রবীন্দ্র ভবনের সামনে প্রতিদিন সন্ধ্যায় সাংবাদিকরা এই দুই সাংবাদিকের খুনের সিবিআই তদন্ত এবং শাস্তির দাবিতে মোমবাতি জ্বালিয়েছেন।
বিজেপির নির্বাচনী ইস্তেহার বা ভিশন ডকুমেন্টে উঠে আসে সাংবাদিক খুনের বিষয়। বিজেপি প্রতিশ্রুতি দেয় ক্ষমতায় এলে দুই সাংবাদিকের খুনের ঘটনার তদন্তের জন্য সিবিআইকে ডেকে আনা হবে। ২০১৮ সালে ত্রিপুরার বিধানসভা নির্বাচনে অন্যতম ইস্যু হয়ে ওঠে দুই সাংবাদিক খুনের ঘটনা। ক্ষমতায় এসে বিজেপি সিবিআইকে তদন্তের ভার দেয়। কিন্তু দুটি খুনের ঘটনার একটিতেও তেমন কিছুই হয়নি এখনও!