ত্রিপুরায় কোভিড ভ্যাকসিন নষ্ট হচ্ছে এগারো শতাংশ। সবচেয়ে বেশি সিপাহীজলা জেলায় ১৫ শতাংশ, সবচেয়ে কম ঊনকোটি জেলায়, এই জেলায় অবশ্য টীকা দেয়ার সেসনও কম। খোয়াই জেলায় টীকাকরণের হাল খারাপ। বলেছেন চিফ ইম্যুনাইজেসন অফিসার ডাঃ কল্লোল রায়। ” নানা কারণেই ভ্যাকসিন নষ্ট হয়। প্রোগ্রামেটিক ওয়েস্ট, মানে দিতে গিয়ে কিছু নষ্ট হয়েই থাকে। সিরিঞ্জে কিছুটা ওষুধ লেগে থাকে। খোলার পর চার ঘন্টা পার হয়ে গেলে সেই ভায়ালটি আর ব্যবহার করা যায় না। সব ভ্যাকসিনের জন্যই এরকম নিয়ম আছে, যদিও একেকটির একেক রকম।” ডাক্তার রায় ব্যাখ্যা করেছেন।
“কোভিড পোর্টালে আজ দেখাচ্ছে ত্রিপুরায় ১৯ শতাংশ ভ্যাকসিন ওয়েস্ট হয়েছে । সেটা সম্ভব নয়। ১৯-২০ শতাংশ ভ্যাকসিন নষ্ট হওয়ার মানে প্রতি পাঁচটি ডোজে একটি করে নষ্ট হচ্ছে। ফিল্ড লেভেলে যারা আছেন, তারাই ডাটা এন্ট্রি করছেন। তাদের আরও ট্রেনিং করাতে হবে, কী করে কী করতে হয়,” বলেছেন ন্যাশনাল হেলথ মিসন’র ত্রিপুরা ডিরেক্টর ডাঃ সিদ্ধার্থ শিব জয়সওয়াল।
ডাঃ জয়সওয়াল’র মতে চার-পাঁচ শতাংশ নষ্ট হচ্ছে।
“প্রতিটি ভায়ালে দশটি করে ডোজ থাকে, সাঙ্ঘাতিক এক্সপার্ট না হলে দশটি ডোজ বের করা সম্ভব নয়, তাতেও সব সময় দশ ডোজ পাওয়া যায় না। দিতে গিয়ে একটু অল্প নষ্ট হয়। আবার একটি ভায়ালে সামান্য একটু রয়ে গেলে, তা নিয়ে অন্য ভায়ালের ডোজের সাথে মিশানো যাবে না। তাতেও কিছুটা নষ্ট হয়। একটি ভায়াল থেকে কয়েকটি ডোজ খরচ হল, তারপর কেউ এলেন না দীর্ঘ সময়,তাতে বাকী সবটাই নষ্ট হয়ে যাবে। দিনের শেষ দিকে এক-দুই জন এলেও তাকে না করা যাবে না, তাদের দিতে হয়, রয়ে গেল কিছুটা ওষুধ, তা আর ব্যবহার করা যাবে না। পর পর অনেককে একসাথে দেয়া গেলে নষ্ট কম হবে।” মনে করেন চিফ ইম্যুনাইজেসন অফিসার।
ত্রিপুরায় প্রথম পর্যায়ে প্রায় ৪৬ হাজার স্বাস্থ্যকর্মীকে টীকা দেয়ার জন্য লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে। পনেরদিন ধরে চলছে টীকা দেয়ার কাজ। এখন পর্যন্ত ২৭,৭০৫ জনকে টীকা দেয়া গেছে বলে জানা গেছে। লক্ষ্যের ৬০ শতাংশের মত টীকা নিয়েছেন। “গতকাল লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮,০৩৮ জনকে দেয়ার। দেয়া গেছে ৩,৩১৫ জনকে। একটু কমই। নতুন টীকা এসেছে, এই নিয়ে ভয়, আতঙ্ক আছে। তাই এমনটা হচ্ছে।” বলেছেন ডাঃ কল্লোল রায়। ” এই নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। তবে স্বাস্থ্যকর্মী সবাই। নিজেদের নিজেদের মোটিভেট করার কথা। অঙ্গনওয়াড়ি এবং আশা কর্মীও অনেক আছেন। তাদের থেকে অংশগ্রহণ একটু কম।” ডাঃ রায় মনে করছেন।
তিনিই জানালেন, দক্ষিণ ত্রিপুরা জেলায় সবচেয়ে ভাল টীকা নেয়ার হার। খোয়াই জেলায় সবচেয়ে কম। খোয়াই জেলায় গতকাল ৯৭৮ জনেকে দেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নেয়া হয়েছিল, নিয়েছেন ২০৯ জন। সিপাহীজলা জেলায় ১৫ শতাংশ নষ্ট হচ্ছে ভ্যাকসিন, ঊনকোটিতে সবচেয়ে কম ৩ শতাংশ। তিনি জানালেন, আজ থেকে সব অনলাইন ডিজিটাইসড ব্যবস্থা, গতকাল পর্যন্ত ফিজিক্যাল ফরমেটে লেখা যেত এসব। দুপুর একটা পর্যন্ত গতকাল আর আজ মিলিয়ে ৬১১ ডোজ নষ্ট হয়েছে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রক ভ্যাকসিন দিতে গিয়ে ১০ শতাংশ পর্যন্ত নষ্ট হওয়াকে অনুমতি দিয়েছে, ডাঃ জয়সওয়াল বলেছেন।
পাঞ্জাব, পশ্চিমবঙ্গ, ইত্যাদি কয়েকটি রাজ্য ভ্যাকসিন নষ্ট হচ্ছে না বলে দাবি রেখেছে।
পাশের রাজ্য আসামে এক হাজার ডোজ ভ্যাকসিন স্টোরেজের গণ্ডগোলে নষ্ট হয়েছে।
ত্রিপুরায় কোভিডে মৃত্যুর হার ১.১৬ শতাংশ, উত্তরপূর্বাঞ্চলে সবচেয়ে বেশি। ভারত সরকার স্যানিটাইজেসন করা, মাস্ক ব্যবহার করতে বলেছে এখনও, ত্রিপুরায় নেতা-মন্ত্রীরাই তা মানছেন না। পাব্লিক প্লেসে মাস্ক ছাড়াই তাদের দেখা যাচ্ছে, মুখ্যমন্ত্রীকেও।