ত্রিপুরার বেশ কয়েকজন সাংবাদিক,শিল্পী, প্রকাশক, সাহিত্যিক মুখ্যমন্ত্রীর কাছে চিঠি দিয়েছেন ‘১০৩২৩’ শিক্ষকদের আলোচনা করে সমস্যার সমাধান করতে। “এড়িয়ে থাকার বা উপেক্ষা করার ভুল এবং অবাঞ্ছিত পথ ছেড়ে এই শিক্ষকদের স্থায়ী সমাধানে এখুনি আন্তরিক উদ্যোগ গ্রহণ করুন”, তারা লিখেছেন।
ত্রিপুরা দর্পন পত্রিকা’র সম্পাদক সমীরণ রায়, স্যন্দন পত্রিকা’র সম্পাদক সুবল কুমার দে, প্রবীণ সাংবাদিক সত্যব্রত চক্রবর্তী, প্রমুখ রয়েছেন সাংবাদিকদের মধ্যে। শিল্পি স্বপন নন্দী যেমন আছেন, কবি মানস দেববর্মন, রতুল দেববর্মন, রামেশ্বর ভট্টাচার্য, সাহিত্যিক মুকুল রায়, প্রকাশক দেবানন্দ দাম, শুভব্রত দেব আছেন, আইনজীবী পুরুষোত্তম রায় বর্মন আছেন।
‘১০৩২৩’ বলে পরিচিত শিক্ষকদের চাকরি গেছে আদালতের রায়ে। আদালত, তাদের যে নিয়োগনীতিতে নিয়োগ করেছিল, সেটাই বাতিল করে দিয়েছে। ৩১ মার্চ তাদের চাকরি গেছে, শেষদিকে তারা চুক্তিতে ছিলেন।
তারা চিঠিতে লিখেছেন, গোল্ড মেডেল পাওয়া শিক্ষিকাও বাড়ি ফিরে আত্মঘাতী হলেন, শিশুকে নিয়ে শিক্ষিকা মা শীতে পড়ে আছেন রাস্তায়, এসব সহ্য করা যায় না। ২০১৮ সালের বিধানসভা ভোটের আগে তাদের সমস্যার সমাধানের আশ্বাস তারা পেয়েছিলেন, সেই কথা মনে করিয়ে দিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর কাছ থেকে পাওয়া আশ্বাসের কথাও তারা মনে করিয়েছেন।
মুখ্যমন্ত্রীর কাছে যারা চিঠি লিখে আবেদন করেছেন তাদের সমস্যা সমাধানের জন্য, তাদের কেউ কেউ বিধানসভা ভোটের আগে পালা বদলে সহায়ক ভূমিকাও নিয়েছিলেন। মুখ্যমন্ত্রীর শপথ গ্রহণের পর এক সভায় বক্তৃতায় উল্লেখও ছিল। পেশাগত দায়িত্বে আইনজীবী’র উপস্থিতিও ছিল যে মামলার রায়ে তাদের চাকরি গেছে, সেই মামলায়। তারাও শিক্ষকদের এই অবস্থার পরিবর্তন চেয়ে চিঠি দিলেন।
‘১০৩২৩’ শিক্ষকদের বড় অংশ জয়েন্ট মুভমেন্ট কমিটি’র ব্যানারে ৭ ডিসেম্বর থেকে আগরতলায় অবস্থান করছেন। বিজেপি ক্ষমতায় আসার আগে তাদের সমস্যার সমাধানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, এমনকী আইন সংশোধনের কথাও বলেছিলেন বিজেপি নেতারা।
অবস্থানে থাকা শিক্ষকদের একটা অংশও এই সরকার গঠনে সহায়ক ভূমিকা নিয়েছিলেন বলে তাদের নেতারা নিজেরাই বলেছেন। তারা এই সরকার গঠনের পর একবার ধন্যাবাদ জানিয়ে র্যালিও করেছিলেন। সেই র্যালিতে কে আগে থাকবেন, সেই নিয়ে লোক হাসানো অবস্থাও হয়েছিল।
ত্রিপুরার শিক্ষামন্ত্রী গতবছর একাধিক বার তাদের জন্য ‘বিকল্প’ ব্যবস্থার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। এই শিক্ষকদের চোখের জল পড়ুক, তিনি তা চান না বলেছিলেন। এমনকী, তাদের বেতন কীরকম হতে পারে, তাও বলেছিলেন। তাদের বেতন ( যা পাচ্ছিলেন তার) ‘আশে-পাশে’ থাকবে বলেছিলেন। এখন অন্য বেকারদের সাথে কিছু গ্রুপ-সি ও ডি পদের জন্য পরীক্ষা দিতে বলছেন। এখন আর তারা শিক্ষা দফতরের কর্মী নয় বলে দায়িত্ব খালাস করছেন।
‘১০৩২৩’ শিক্ষকদের একটা অংশ, যারা এখন বিজেপি’র আদর্শে সংগঠন করার কথা বলেন, তাদের নেতারা ২০১৮’র ভোটের আগে দিল্লি ঘুরে এসে বলেছিলেন, তাদের বিষয় আইন মন্ত্রক ঘুরে সংসদে উঠবে। সংসদে তা উঠেনি। সেই নেতারা ‘ভ্যালিডেসন’ অ্যাক্ট, ইত্যাদি বলতেন, জাল্লিকাটু’র মত সংশোধনের কথা বলতেন, এখন আর সেসব বলেন না, বিজেপি’র প্রভারীর সাথে দেখা করে ফুলের তোড়া দেন।