একবছর ধরে ত্রিপুরা স্বশাসিত উপজাতি জেলা পরিষদ আছে প্রশাসকের হাতে। হাইকোর্টের আদেশে ভোট হচ্ছে। ভোট আগামীকাল। মোয় আদন ২৮, তার তিনটি সাধারণ আসন। গত মে মাসে নির্বাচিত পরিষদের মেয়াদ শেষ হয়েছে। সরব প্রচার শেষ হয়েছে গতকাল চারটায়। যদিও মুখ্যমন্ত্রীর রোড-শো ধলাইয়ে তারপরেও চলেছে বলে অভিযোগ। ত্রিপুরার আয়তনের তিনভাগের দুই ভাগ জুড়ে জেলা পরিষদ এলাকা, তবে মোট জনসংখ্যার হিসাবে প্রায় উলটো ব্যাপার। প্রায় ১২.১৬ লাখ মানুষের বসবাস, ভোটার ৮.৬৫ লাখ। পুরুষ ও মহিলা ভোটার প্রায় সমান সমান। পুরুষ ভোটার মহিলা ভোটারের চেয়ে আট হাজারের মত বেশি।
ছয় হাজার ভোট কর্মী। বিভিন্ন মহকুমা সদর থেকে ভোট কর্মীরা রওনা হয়ে গেছেন ভোট কেন্দ্রগুলোর দিকে। আগামী সকাল সাতটা থেকে শুরু হবে ভোট নেয়া, চলবে বিকাল চারটা পর্যন্ত ১২.১৪৪ হাজার ভোট-কেন্দ্র। তাদের দু’শো মিটারে ১৪৪ ধারা জারি থাকবে। সিআরপিএফ, টিএসআর এবং রাজ্য পুলিশ নিরাপত্তার কাজে।
২৮ আসনে লড়ছেন ১৫৭ জন প্রার্থী। ২৮ জন বামফ্রন্ট্র প্রার্থী, ২৮ জন কংগ্রস, ২৩ জন তিপ্রা মথা, ৫ জন আইএনপিটি, ১৪ জন বিজেপি এবং ১৭ জন আইপিএফটি। বিজেপি ও আইপিএফটি জোট করে লড়ছে, তবে তিনটি আসনে দুই দলেরই প্রার্থী আছেন, সেটা নাকি ‘ফ্রেন্ডলি ফাইট’! কোথাও কোথাও বিজেপি’র লোকজন নির্দল হয়ে দাঁড়িয়ে পড়েছেন, নির্দল প্রার্থীর প্রচারে উড়েছে বিজেপি’র পতাকা।
তিপ্রা মথা এবং আইএনপিটি জোটে আছে। আইপিএফটি’র ‘তিপ্রাল্যান্ড’ স্লোগান ঝিমিয়ে পড়েছে, মথা-আইএনপিটি’র স্লোগান ‘গ্রেটার তিপ্রাল্যান্ড’। আইপিএফটি, মথা’র সাথে নির্বাচনে লড়ার ‘চুক্তি’ করেও মথাকে ডিচ করে বিজেপি’র কাছে ফিরে গেছে। মথা’র সাথে মার্জারের ঘোষণা দিয়েও আরেকদল জোটে নেই। এরকম সার্কাস্টিক বিষয় আছে এবারের ভোটে।
বিজেপি- আইপিএফটি ত্রিপল ইঞ্জিন স্লোগান দিয়েছে।
রাজ্যের প্রধান বিরোধী বামফ্রন্ট স্লোগান দিয়েছে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের এবং এডিসি এলাকার শান্তি সম্প্রীতি বজায় রাখার। কংগ্রেসের উপস্থিতি কার্যত কাগজে-কলমে।
প্রচারে সময়ে রাজনৈতিক মারপিট নানা জায়গায় হয়েছে। প্রার্থী আহত হওয়ার ঘটনাও আছে।
প্রথম বামফ্রন্ট আসার পরেই উপজাতি জেলা পরিষদ গঠিত হয় আশির দশকের শুরুতে। কংগ্রেস তখন তার তীব্র বিরোধিতা করেছিল। মথা’র প্রাণ পুরুষ ত্রিপুরার প্রাক্তন রাজ পরিবারের সদস্য প্রদ্যোত কিশোর দেববর্মন’র পরিবার তখন কংগ্রেসেই ছিলেন। সেই পরিবার থেকে কংগ্রেসের সাংসদ, বিধায়ক-মন্ত্রী হয়েছেন। প্রদ্যোত নিজেও কংগ্রস দলেই ছিলেন। গত লোকসভা নির্বাচনে তার বোন লড়েছিলেন, তখন তিনি ত্রিপুরা প্রদেশ কংগ্রেসের প্রধান। সেই ভোটের পর কংগ্রেস ছেড়ে তিপ্রা নামের সংগঠন গড়েন, ঘোষণা দিয়েছিলেন তিনি আর রাজনীতিতে নেই। ‘এডিসি’ ভোটের ঢাক বাজতেই রাজনীতিতে নেমে পড়েছেন। তার দলের পতাকায় সিম্বল, তার মুখের স্কেচ।
প্রায় পঁয়ত্রিশ বছরে জেলা পরিষদ নির্বাচনে বামফ্রন্ট দুইবার বাদে প্রত্যেকবারেই ক্ষমতায় এসেছে। ১৯৯০ সালে কংগ্রেস-টিইউজেএস যখন রাজ্যে ক্ষমতায় ছিল, তখন একবার বামফ্রন্ট ক্ষমতায় হারিয়েছিল।আরেকবার ২০০০ সালে। সেইবার অবশ্য মেয়াদ পূর্ণ করতে পারেনি আইএনপিটি। উগ্রপন্থীদের সাথে যোগ-সাজস, ইত্যাদি নানা অভিযোগ তুলে আইএনপিটি থেকে অনেকে বেরিয়ে এসে এনএসপিটি গঠন করে বামফ্রন্টের সমর্থনে সরকার গঠন করে, সেটাও মেয়াদ শেষের আগেই শেষ হয়ে যায়।