প্ৰথম খবর

কোভিড কোপে ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী!

By thepongkor

April 07, 2021

গতবছর পেরিয়ে গেলেও, সেকেন্ড ওয়েবে কোভিড’র কোপে পড়লেন ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব। সকাল সকাল এই খবর জানা গেছে।স্বাস্থ্য দফতর তাকে টেস্ট করে কোভিড পিজিটিভ পেয়েছে। হোম আইসোলেসনেই আছেন তিনি।

গত কিছুদিন যথেষ্ট সক্রিয় ছিলেন তিনি, ছুটে বেড়িয়েছেন রাজ্যের এই মাথা থেকে ওই মাথা। স্বশাসিত উপজাতি জেলা পরিষদ নির্বাচনে চুটিয়ে প্রচার করেছেন, জনসভা, রোড-সো, দলীয় কর্মীদের বাড়িতে দুপুরের খাওয়া, মিটিং। গতকালই নির্বাচন গেছে। গতকাল তার দলের প্রতিষ্ঠার দিন গেছে। সেসব অনুষ্ঠানেও গতকালও তাকে দেখা গেছে। সকাল না হতেই কোভিড আক্রান্ত হওয়ার খবর। তিনিই ট্যুইট করেছেন। ডাক্তারের কথায় নিজেকে ‘আইসোলেট’ করেছেন। সবাইকে নিয়ম মেনে চলতে বলেছেন।

কেন্দ্রীয় সরকার মাস্ক পরতে, শারীরিক দূরত্ব মানতে নির্দেশ জারি করেছে। ত্রিপুরা সরকারও সেই গাইডলাইন ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত মানার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সরকার সিদ্ধান্ত নিলেও, সেই সার্কুলার জারির পরেও খুব যে কেউ তা মানছেন, তা নয়। নেতা-মন্ত্রীদের মুখেও মাস্ক দেখা যাচ্ছে না।

গতবছর বিজেপি-আইপিএফটি’র বেশ কয়েকজন বিধায়ক কোভিডের কোপে পড়েছিলেন। বিরোধী সিপিআই(এম) বিধায়করাও আক্রান্ত হয়েছেন, তবে শাসকজোটের তুলনায় সংখ্যায় কম।

গতবছর এই সময়ে ত্রিপুরায় প্রথম কোভিড রোগী শনাক্ত হন। ভর্তির প্রথম দিনেই তার খাওয়া নিয়ে অভিযোগের ভিডিও ভাইরাল হয়। তারপরেই এক নিরাপত্তাকর্মী পজিটিভ শনাক্ত হন। কয়েকদিন পর হাসপাতালে কোনও রোগী ছিলেন না। মুখ্যমন্ত্রী ত্রিপুরাকে কোভিড মুক্ত ঘোষণা করেন।

রাজ্যের বাইরে থেকে যারা ট্রেনে আসছিলেন, তাদের পাঁচজনে একজনের সাম্পেল নিয়ে ছেড়ে দেয়া হত, তারা সাধারণ ট্রান্সপোর্টে, যে যেভাবে পারেন বাড়ি ফিরে যেতেন। পজিটিভ হলে খবর দেয়া হত, হাসপাতালে আনা হত। কিছুদিন পরেই হু হু করে রোগী বাড়তে থাকে। মৃত্যুহারে উত্তরপূর্বাঞ্চলে প্রথম হয়ে উঠে ত্রিপুরা। অব্যবস্থার অভিযোগ চরমে যায়। ত্রিপুরা হাইকোর্ট স্বপ্রণোদিত আবেদন নেয় এই নিয়ে।

অক্সিজেন নিয়ে প্রচুর সরগোল হয়। একরাতে বিজেপিরই বিধায়ক প্রাক্তন স্বাস্থ্যমন্ত্রী সুদীপ রায় বর্মন একজন ইঞ্জিনিয়ার নিয়ে ছূটে যান জিবিপি হাসপাতালে। অক্সিজেন সরবরাহ লো, তা ঠিক করতে গেছেন বলেছিলেন। পরদিন বিজেপি সাংসদ প্রতিমা ভৌমিক সাংবাদিক সম্মেলন করে ক্ষোব উগড়ে দেন। ঘটনা নিয়ে মামলা হয়, তবে ‘অজ্ঞাত পরিচয়’দের বিরুদ্ধে। ডাক্তারদের পুলিশ ডেকে পাঠান একাধিকবার। সুদীপ রায় বর্মনের বিরুদ্ধে আরেকটি কোভিড কেয়ার সেন্টারে ঢোকা নিয়ে মামলা হয়। তাকে ফ্যাসিলিটি আইসোলেসনে যেতে ডিএম নির্দেশ দেন। তিনি যাবেন না, সাফ ঘোষণা দেন, যাননি। প্রশাসনও আর কিছু করতে পারেনি।

জিবিপি হাসপাতালে রাজ্যের একমাত্র ট্রমা কেয়ার অংশে কোভিড ফ্যাসিলিটি চালানো হয়। গতবছরের শেষদিকে একটি আলাদা ব্লককে কোভিড হাসপাতাল করা হয়। ডাক্তারদের দাবি থাকলেও একেবারেই আলাদা করে শুধুমাত্র কোনও হাসপাতালকে কোভিড হাসপাতাল করা হয়নি। ঠিম যেমন, স্বাস্থ্য সচিব ১০০ বেডের আইসিইউ করার ঘোষণা সাংবাদিক সম্মেলনে দিলেও, তা এখনও রাজ্যের কোথাও হয়নি। ডাক্তাররা নতুন ডাক্তার-নার্স নিয়োগের দাবি বার বার করেছেন, বহু শূন্য পদ নিয়ে স্বাস্থ্য দফতর চললেও, নতুন নিয়োগ হয়নি।

ভারতে হু হু করে বাড়ছে কোভিড কেস। একদিনে আক্রান্ত পাওয়ার সংখ্যা একলাখ ছাড়িয়ে নতুন রেকর্ড হয়েছে দিন দুই আগে। পাশের বাংলাদেশেও নতুন নতুন রেকর্ড হচ্ছে। মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। বাংলাদেশের সাথে ত্রিপুরার ৮৫২ কিলোমিটার সীমানা। অবৈধ আসা-যাওয়া প্রচুর। ঘনঘনই ধরাও পড়েন।

ত্রিপুরায় এপ্রিলেই বেশ কতজন আক্তান্ত শনাক্ত হয়েছেন। গতকালও ১৪ জন আছেন। এখন অ্যাক্টিভ ৭০ জন। ত্রিপুরায় মৃত্যু-হার ১.১৬ শতাংশ। ত্রিপুরার জনসংখ্যার ১৬-১৮ শতাংশ ভ্যাকসিন পেয়েছেন, বলেছেন এনএচএম ত্রিপুরা ডিরেক্টর।  

 

 

ছবি-সৌজন্যঃ মুখ্যন্ত্রীর ছবি, মুখ্যমন্ত্রীর ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে।