ত্রিপুরা হাইকোর্টের বর্তমান কোন বিচারপতিকে দিয়ে সুশান্ত ঘোষের মৃত্যুর ঘটনার তদন্ত করানোর দাবি করেছে সিপিএম। জাতীয় মানবাধিকার কমিশন যেন এ বিষয়ে হস্তখেপ করে সে দাবিও করেছে দল। সোমবার সকালে সিপিএমের এক প্রতিনিধি দল যায় ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া লঙ্কামুড়াতে সুশান্ত ঘোষের বাড়িতে। সেখানে তারা কথা বলেন পরিবারের সঙ্গে। তাদের সহমর্মিতাও জানান। পরে সিপিএম’এর পক্ষ থেকে দলের পশ্চিম জেলা কমিটির সম্পাদক পবিত্র কর কথা বলেন সংবাদ মাধ্যমের প্রতিনিধিদের সঙ্গে। তিনি বলেন, ঘটনার সময় যেসব পুলিস কর্মীরা থানাতে ছিলেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হোক অবিলম্বে।
পবিত্র করসহ সিপিএম নেতা কর্মীরা যখন সুশান্ত ঘোষের বাড়িতে তখন সেখানে যান বড়জলা কেন্দ্রের বিজেপি বিধায়ক দিলীপ দাসও। তিনিও পরিবারটিকে সান্তনা দেন। পরিবারটিকে আর্থিক সাহায্য করার ব্যাপারে তিনি মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করবেন বলে জানিয়েছেন সংবাদ মাধ্যমকে।
রবিবার সকালে ত্রিপুরার পশ্চিম আগরতলা থানাতে সুশান্ত ঘোষের মৃতদেহ উদ্ধার হয়। পুলিসের দাবি থানার টয়লেটের দরজার কব্জার সঙ্গে টাওয়েল দিয়ে আত্মহত্যা করে সুশান্ত। যদিও তার পরিবারের দাবি, পুলিস ষড়যন্ত্র করে তাকে খুন করেছে। এবং ফাঁসির ঘটনা বলছে। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ইতিমধ্যে ম্যাজিস্ট্রট পর্যায়ে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন ঘটনার। শুরু হয়েছে বিভাগীয় তদন্ত। কংগ্রেস সিপিএম দাবি করছে বিচার বিভাগীয় তদন্তের।
শনিবার ত্রিপুরা পুলিসের সাইবার ব্রাঞ্চ গ্রেপ্তার করেছিল সুশান্ত ঘোষকে। গত নভেম্বর মাসে আগরতলায় বেশ কিছু এটিএম হ্যাকিং’এর ঘটনা ঘটে। ঐ ঘটনায় তদন্তে বেরিয়ে আসে দুজন তুর্কি নাগরিক এবং দুজন বাংলাদেশি নাগরিক এটিএম হ্যাকিং’এর ঘটনার সঙ্গে যুক্ত। শুধু ত্রিপুরা না, এই দলটি মুম্বাই, কলকাতা, গৌহাটি, এবং দিল্লিতেও এটিএম হ্যাকিং করে বহু কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। নভেম্বর মাসের ১৯ তারিখ কলকাতার বেলঘরিয়া থানা দুই তুর্কি নাগরিক ফতেহ আলদেমির এবং হাকান জানবুরকান’কে গ্রেপ্তার করে। পরবর্তী সময়ে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে দুই বাংলাদেশি নাগরিক মহম্মদ হান্নান এবং মহম্মদ রফিকুল’কেও গ্রপ্তার করে। ১ জানুয়ারি তদন্তের জন্য এই চারজনকে ত্রিপুরার সাইবার ক্রাইম ব্রাঞ্চ আগরতলায় আনে। পরদিন তাদের আদালত থেকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১৫ দিনের পুলিস হেফাজতে আনা হয়। পুলিসের দাবি এই চারজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেই ত্রিপুরার লঙ্কামুরার বাসিন্দা সুশান্ত ঘোষের নাম উঠে আসে। সে কারনেই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। পুলিসের দাবি, এটিএম হ্যকারদের লজেস্টিক সাপোর্ট যুগিয়েছিল সুশান্ত। শনিবার গ্রেপ্তারের আগে বেশ কয়েকদিন পুলিস ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে সুশান্তকে।
সুশান্ত ঘোষের পরিবার এবং তার ছেলেরা জানিয়েছে, তাদের বাবা এটিএম হ্যাকিং’এর সঙ্গে যুক্ত না। কিন্তু চার হ্যাকার আখাউরাতে তাদের মিষ্টির দোকানে এসেছিল। তাদের সঙ্গে থাকা ডলার ভাঙাতে সাহায্য করেছিল সুশান্ত একথা বলেছে পরিবারের লোকজন।
সোমবার নিহত সুশান্ত ঘোষের ছোট বোন অভিযোগ করেন, বিভিন্ন সময়ে সে যখন তার দাদার সঙ্গে দেখা করতে থানাতে গেছে তখন তার দাদা আশঙ্কা করেছিল তাকে মেরে ফেলা হবে। তার জন্য বোনকে দেখা করতেও বারণ করেছিল সুশান্ত।
ছবি ব্যবস্থাপনায় অভিজিত
আরও খবর এ নিয়েঃ
পশ্চিম থানার লকআপে বিচারাধীন বন্দীর মৃত্যু ঘিরে রহস্য, ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে তদন্তের নির্দেশ
দরজার কবজার সঙ্গে ঝুলে ছিল সুশান্ত’র দেহ ?
ত্রিপুরায় পুলিশি হেফাজতে বন্দীর মৃত্যু নিয়ে বিরোধীদের কড়া সুর
আগরতলা, ত্রিপুরা