পশ্চিম থানার লকআপে বিচারাধীন বন্দীর মৃত্যু ঘিরে রহস্য, ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে তদন্তের নির্দেশ

ত্রিপুরায় আরও একটি বিচার বিভাগীয় হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনা ঘটল। রাজধানী শহরের পশ্চিম  আগরতলা থানায়  মৃত্যু হয়েছে সুশান্ত ঘোষ নামে যুবকের।

ত্রিপুরায় এটিএম হ্যাকিং সংক্রান্ত একটি মামলায় গতকাল  তাকে গ্রেপ্তার করেছিল ত্রিপুরা পুলিশের সাইবার সেল।  তাকে তোলা হয় আদালতে । সেখান থেকে আনা হয় দুদিনের পুলিস রিমান্ডে।

সুশান্ত ঘোষ পশ্চিম থানার লকআপে ছিল। পুলিস সূত্রে যতটুকু জানাগেছে,  রাত বারোটার পর থানার ভেতরেই  তার ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়। তাকে নিয়ে যাওয়া হয় জিবিপি হাসপাতালে।

রবিবার সকাল সাতটা নাগাদ পুলিসের সাইবার সেলের এসপি সুশান্ত ঘোষের বাড়িতে যান। সেখানে তিনি তার আত্মীয়দের জানান, সুশান্ত অসুস্থ এবং হাসপাতালে  ভর্তি।

বাড়ির লোক  এসে দেখেন,মর্গে সুশান্তের দেহ। তারা কান্নায় ভেঙে পরেন হাসপাতাল চত্বরে। বাড়ির একমাত্র উপার্জনক্ষম মানুষকে হারায় পরিবারটি।

সুশান্ত ঘোষের বাড়ি  ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকা, লঙ্কামুড়ায় । তার একটি মিষ্টির দোকান আছে। তিনি বিবাহিত। তার দুই ছেলে বাবার সঙ্গে নিজেদের মিষ্টির দোকানে কাজ করে।

এলাকাবাসী এবং তার পরিবার সূত্রে জানা গেছে, কিছুদিন আগে বাংলাদেশ থেকে আসা কয়েকজন তার মিষ্টির দোকানে যা্ন,  চা-মিষ্টি খান। সেসময় কথা প্রসঙ্গে বাংলাদেশের  দুইজন সুশান্তকে জানান তাদের কাছে ডলার আছে, এবং তা ভাঙাতে চা্ন। সুশান্ত তাদের ডলার ভাঙানোর ব্যবস্থা করে দেন।

তার কিছুদিন পর  ব্যাঙ্ক এটিএম হ্যাকিং-এর অভিযোগে দুই বাংলাদেশি নাগরিক ধরা পড়েন। তারা সুশান্তের মিষ্টির দোকানের ঘটনা জানান পুলিশকে। গ্রেফতারের আগে  তিন দিন ধরে পুলিস হেড কোয়ার্টারে সুশান্তকে ডেকে  জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে বলেও জানা গেছে।

সুশান্তের বাড়ির লোকজনদের দাবি, তিনি একদম নির্দোষ। এটিএম হ্যাকিং-র ব্যাপারে তিনি কিছুই জানতেন  না।

পুলিশ  মুখে কুলুপ এঁটেছে।  প্রকাশ্যে  তারা কিছুই বলছে না ঘটনা নিয়ে।

থানায় একজন  আত্মহত্যা করলেন,  আর থানার পুলিস টের পেলন  না !  তাছাড়া,  লকআপে সিসিটিভি লাগানো থাকে ! এসব প্রশ্ন উঠছেই।

আজ সকালে মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেবকে এই ঘটনা নিয়ে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল।  তিনি বলেছেন, গোটা বিষয়টি ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে তদন্ত করানো হবে। জেলা শাসককে বলা হয়েছে তদন্ত করার জন্য। মুখ্যমন্ত্রীর বলেছেন,  দোষীদের ছাড়া হবে না। মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব যখন এই ঘোষণা দিচ্ছিলেন, তখন তার পাশে ছিলেন রাজ্য পুলিসের দায়িত্বপ্রাপ্ত ডিজিপি রাজীব সিং।

তিনেক আগে উদয়পুরের রাধাকিশোরপুর থানাতে মঙ্গল দাস নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছিল।

সুশান্ত ঘোষের ঘটনা গত তিন মাসে ত্রিপুরায় দ্বিতীয় ‘কাস্টডিয়াল ডেথ’এর ঘটনা।

 

আগরতলা, ত্রিপুরা

COMMENTS