ত্রিপুরায় আদালত চত্বরে আক্রান্ত দুই আইনজীবী। পুলিশ বাড়ি পৌঁছে দিল একজনকে। গ্রেফতার এক। আইনজীবীদের তীব্র প্রতিক্রিয়া।

ত্রিপুরায় আদালত চত্বরে আক্রান্ত দুই আইনজীবী। পুলিশ বাড়ি পৌঁছে দিল একজনকে। গ্রেফতার এক। আইনজীবীদের তীব্র প্রতিক্রিয়া।

 

 

 

 

 

তেমন দৃষ্টান্ত নেই ত্রিপুরায়, অন্তত স্মরণকালে নেই,  আদালত চত্বরেই আক্রমণ হল দুই আইনজীবীর উপর। আগরতলা জেলা আদালত চত্বরে।

দুই ধর্মের দুই প্রাপ্ত বয়স্ক ছেলে-মেয়ে ভালবেসে বিয়ে করেছেন। ছেলের নামে থানায় মামলা হয়েছে। আদালতে মেয়েটি বলেছেন, নিজের ইচ্ছাতেই বিয়ে করেছেন। ছেলেটি জামিনও পেয়ে গেছেন।

 

উগ্রলোক কিছু লোক  দুই আইনজীবীকে হেনস্তা করেন, কেন তারা ছেলেটির পক্ষে দাঁড়িয়েছেন, তার জন্যই আক্রমণ বলে আইনজীবীদের সূত্রে জানা গেছে। পুলিশ একজনকে ধরেও ফেলে।

 

আইনজীবী গৌতম বণিক হেনস্তার শিকার হন। তাকে বাঁচাতে গিয়ে রোষের মুখে পড়েন আইনজীবী অরিন্দম বসাক।

ত্রিপুরা বার অ্যাসোসিয়েসনের সম্পাদক কৌশিক ইন্দু বলেছেন, আইনজীবীরা পুলিশকে ডাকেন। আদালত কতৃপক্ষও ডাকেন। পুলিশ এসে গৌতম বণিককে আক্রমণকারীদের ঘেরাটোপ  থেকে উদ্ধার করে বাড়ি পৌঁছে দিয়েছেন। একজনকে পুলিশ আটক করেছে। পুলিশের ভূমিকা ভাল ছিল।

 

প্রথমে আক্রান্ত আইনজীবীরা অভিযোগ দাখিল না করলেও, রাত দশটার দিকে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন। আইনজীবী অরিন্দম ভট্টাচার্য ,  তার জুনিয়রকে অশ্রাব্য গালিগালাজ ও হেনস্তা করা, প্রাণনাশের হুমকি, ইত্যাদি  অভিযোগ করাই শুধু  নয়, ভোঁতা কিছু দিয়ে শারীরিক আক্রমণ এবং পাঁচ হাজার টাকা মুখ-ঢাকা দুস্কৃতীকারীরা নিয়ে গেছেন বলে আইনজীবী ভট্টাচার্য  লিখেছেন পুলিশকে। অরিন্দম মামলাটিতে ‘আসামী’ পক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন। তিনি লিখেছেন, বিচারক জামিন দেয়ার পর, বন্ড দেয়ার জন্য জুনিয়রদের রেখে তিনি আদালত থেকে বেরিয়ে পড়েন। বিকাল সাড়ে তিনটা-পৌনে চারটা নাগাদ ফোনে তার জুনিয়র ঘটনা জানান।

পুলিশ জানিয়েছে, সুশান্ত মোদক নামে একজনকে আটক করা হয়েছে, পুলিশ হেফাজতে আছেন সুশান্ত।

রাতে পশ্চিম আগরতলা থানায়,  আটক হওয়া ব্যাক্তিকে ছাড়িয়ে আনতে ‘বজরঙ্গি’ স্লোগান দেয়া কিছু লোক জড়ো হয়েছিলেন। ‘কেন আটকে রেখেছে! কী করে আটকে রাখে’, তারা বলাবলি করছিলেন।

 

ত্রিপুরা বার অ্যাসোসিয়েসন’র সভাপতি আইনজীবী মৃণাল কান্তি বিশ্বাস  প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, “শরীর খারাপ বলে আজ কোর্টে যাইনি। যা শুনতে পেয়েছি, তা অত্যন্ত নিন্দনীয়। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার অন্যতম আদালত, বিচার ব্যবস্থা। মানুষের শেষ ভরসার জায়গা। সেই জায়গাতেই এমন হলে, বলার আর কিছু থাকে না।সব শুভ বুদ্ধি সম্পন্ন মানুষকে এই রকম ঘটনার বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে আহ্বান রাখছি।“

 

তাছাড়াও তিনি জানিয়েছেন, দুইজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষ নিজের পছন্দে বিয়ে করতেই পারেন। সেজন্য  ধর্ম, জাত-পাত, ইত্যাদির জন্য  আইনে আটকায় না। আমাদের সংবিধান সেই অধিকার আমাদের দিয়েছে। বিভিন্ন সময়ে সুপ্রিম কোর্টও তাই বলেছে। প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ কে, কাকে বিয়ে করবেন, সেটা অন্য কেউ নির্দেশ করতে পারেন না, জোর করতে পারেন না, বাধাও দিতে পারেন না। সেটা করলেই বরঞ্চ বেআইনি হবে।

“ আদালত চত্বরেই আইনজীবীরা আক্রান্ত হলে, তারা কীভাবে স্বাধীনভাবে কাজ করবেন! আইনি ব্যবস্থাকে যারা পকেটে পুরতে চাইছেন, তাদের বিরুদ্ধে কঠিন ব্যবস্থা নেয়ার আবেদন রাখছি সরকারের কাছে। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হোক,” বলেছেন সারা ভারত আইনজীবী ইউনিয়নের  ভাস্কর দেববর্মা।

 

সারা ভারত আইনজীবী ইউনিয়নের যুগ্ম সম্পাদক হরিবল দেব নাথ বলেছেন, বলার কোনও ভাষা নেই, নিন্দা জানানোর ভাষাও নেই। ত্রিপুরায় আইনের শাসন কোন্‌  জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছে, এই ঘটনা, তার প্রমাণ। দু’জন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষ নিজের পছন্দেই বিয়ে করবেন। এ কোন্‌ সংস্কৃতি ! একজন আইনজীবী তার পেশার কাজ করবেন, এটাই স্বাভাবিক। অপরাধী কে , তার বিচার আদালত করে। যেকোনও অভিযুক্তই আইনি সহায়তা পেতে পারেন, এটা তার অধিকার, তেমনি আইনজীবীও তার পক্ষে দাঁড়াতে পারেন। বরঞ্চ কাউকে আইনি সহায়তা না দেয়াই অনৈতিক কাজ। উগ্র-হিন্দুত্ববাদী কিছু লোক এই কাজ করেছে।  তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা না নিলে, ইউনিয়ন আন্দোলনে যাবে।

 

সামাজিক মাধ্যমে এই দু’জনের বিয়ে নিয়ে  পোস্ট পড়েছে।

ত্রিপুরাতে দুই আলাদা আলাদা ধর্মের মানুষের মধ্যে বিয়ে এই প্রথম নয়। কিছুদিন আগেই সংখ্যালঘু অংশের এক মেয়েকে ভালবেসে বিয়ে করেছেন তেলিয়ামুড়ার এক ছেলে। বিশালগড়েও কিছুদিন আগে এমন ঘটনা আছে। সংখ্যালঘু অংশেরও ছেলে অন্য ধর্মের মেয়েকে বিয়ে করেন, তবে লাভ-জিহাদ, ইত্যাদি বলে প্রচার এখানে ছিল না। এসব নতুন হচ্ছে।

 

 

COMMENTS