১৯৯২ সালে বাবরি মসজিদ ধ্বংসের ঘটনা পূর্বপরিকল্পিত ছিল না। আকস্মিক উত্তেজনার বশেই ঘটনাটি ঘটে । এমনই মন্তব্য করেছে সি বি আই’র বিশেষ আদালত।।
আজ লখনৌতে রায় ঘোষণার সময় ১৯৯২ সালে বাবরি মসজিদ গুঁড়িয়ে দেয়ার ঘটনার সাথে জড়িত থাকার অপরাধে ৩৩ জন অভিযুক্তকে নিরপরাধ ঘোষণা করেছে সি বি আই’র বিশেষ আদালত । অভিযুক্তদের মধ্যে ছিলেন বিজেপি নেতা এবং প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এল কে আদবানি , মুরলী মনোহর যোশী, উত্তরপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী কল্যাণ সিং সহ আরো অনেকে।
প্রায় দুই হাজার পৃষ্ঠার রায় ঘোষণা করতে গিয়ে সি বি আই’র বিশেষ বিচারপতি এস কে যাদব বলেছেন বাবরি মসজিদ গুঁড়িয়ে দেওয়ার ঘটনার সাথে কোন ধরনের পূর্বপরিকল্পনা থাকার যোগসুত্র খুঁজে পায়নি আদালত । উত্তেজনার বশেই হঠাৎ করে ঘটনাটি ঘটে গিয়েছিল । গুরুত্বপূর্ন হল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সি বি আই অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে এই ঘটনায় জড়িত থাকার কোনো সুনির্দিষ্ট প্রমাণ আদালতকে দেখাতে পারেনি । আদালতের মতে ১৯৯২ এর ৬ ডিসেম্বর সেখানে জড়ো হওয়া অনেক মানুষ উত্তেজনার বশে ষোড়শ শতাব্দীর স্থাপত্যটি ভেঙ্গে দেয় । আদালতের মতে কিছু সমাজবিরোধী মসজিদের উপরে উঠে মসজিদ ভাঙতে শুরু করে।
সিবিআই আদালতের কাছে যে সমস্ত অডিও জমা দিয়েছিল সেগুলো যথেষ্ট নয় বলেও আদালত মন্তব্য করেছেন ।। আদালত গত ১৬ সেপ্টেম্বর এই মামলায় অভিযুক্ত সবাইকে সশরীরে আদালতে আজ উপস্থিত থাকতে নির্দেশ দিয়েছিল। বিজেপি নেতা লালকৃষ্ণ আদবানি , মুরলী মনোহর যোশী , কল্যাণ সিং , এবং মহন্ত নিত্য গোপাল দাস ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উপস্থিত হন।
১৯৯২ সালে বাবরি মসজিদ ধ্বংসের সময় উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন কল্যাণ সিং। গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে রাজস্থানের রাজ্যপালের মেয়াদ শেষ করার পর সি বি আই’র বিশেষ আদালতে তার বিচার শুরু হয় । দেশের সুপ্রিম কোর্ট এবছরের আগস্ট মাসের ৩১ তারিখের মধ্যে এই মামলার চূড়ান্ত রায় ঘোষণার জন্য সি বি আই’র বিশেষ আদালতকে নির্দেশ দিয়েছিল । পরবর্তীতে একমাস সময় আবার বাড়ানো হয়। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ৩৫১ জন সাক্ষীকে আদালতে উপস্থিত করেছিল। ৬০০ এরও বেশি বিভিন্ন নথি আদালতের সামনে পেশ করে সি বি আই ।এই মামলায় ৪৮ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছিল। বিচার চলাকালীন সময়ে ১৭ জন মারা যান ।
২০১৭ সালের ১৯ এপ্রিল বাবরি মসজিদ ধ্বংসের সাথে পূর্ব পরিকল্পনার যোগ আছে এই অভিযোগে বিচারকার্য শুরু করার জন্য সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দিয়েছিল । নির্দেশে বলা হয়েছিল প্রত্যেকদিন যাতে এই মামলার বিচারকাজ চালানো হয়। আদালতকে সিবিআই জানায় যে অভিযুক্তরা বিশেষ পরিকল্পনা করেই কর সেবকদের উত্তেজিত করে। উত্তেজিত করসেবকরা বাবরি মসজিদ গুঁড়িয়ে দেয়।
অভিযুক্তদের পক্ষ থেকে বলা হয় যে তারা এই মামলায় নির্দোষ । তাদের বিরুদ্ধে যে সমস্ত অভিযোগ আনা হয়েছে তা একেবারেই মিথ্যা। কেন্দ্রের তদানীন্তন কংগ্রেস সরকার রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য বিজেপি নেতাদের এ ঘটনার সাথে জড়িত থাকার বিষয়টি সামনে এনেছে।
গত বছর একটি বিশেষ রায়ে সুপ্রিম কোর্ট বাবরি মসজিদের ভেতরে বিতর্কিত স্থানে রাম মন্দির নির্মাণ করার পক্ষে রায় দেন। সেই রায়ে ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর বাবরি মসজিদ গুঁড়িয়ে দেয়ার ঘটনাকে বেআইনি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল। মসজিদ নির্মাণের জন্য সেই রায়ে ৫ একর জায়গা বরাদ্দ করার কথাও বলা হয়েছে ।
COMMENTS