আজকের দিনে উনিশশো সাতান্ন সালে ঘটে গিয়েছিল একটি বিপ্লব। বিপ্লব ছিল মহাকাশবিদ্যায়। এই বিপ্লবকে সার্থক রূপ দিয়েছিল একটি দেশ , রাশিয়া। পশ্চিমা বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিল সেদিন রাশিয়া। সোভিয়েত ইউনিয়ন প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ স্পুটনিক’ মহাকাশে পাঠিয়েছিল ।
একটু ভাবুন মানুষ ওই দিনটিতে সর্বপ্রথম সক্ষম হলো নিজের মেধা , বুদ্ধি , পরিশ্রম এবং কারিগরি বিদ্যা কে সাথে নিয়ে মহাকাশ জয়ের স্বপ্ন দেখতে।
১৯৫৭ সালের আজকের দিনেই মানব ইতিহাসে মহাকাশ জয়ের যুগ শুরু হয়ে গিয়েছিল, রাশিয়ার হাত ধরে । এই একটি ঘটনা আগামীদিনের অনেক বাস্তবতাকে কিন্তু সুনিশ্চিত করেছিল ।
যে রকেটের মাধ্যমে এই কৃত্রিম উপগ্রহকে মহাকাশে পাঠানো হয়েছিল , এর শক্তি ছিল আমেরিকান রকেট থেকে অনেক বেশি। আমেরিকা এবং রাশিয়া তখন মহাকাশ জয় নিয়ে সম্মুখ সমরে অবতীর্ন। কোল্ড ওয়ার চলছে । কে আগে মহাকাশে উপগ্রহ পাঠাবে এই নিয়ে চলছে প্রেস্টিজ ফাইট। দান কিন্তু জিতে গেল রাশিয়া । কেন ? আমেরিকার নিউক্লিয়ার বোমার প্রযুক্তি ছিল রাশিয়ার তুলনায় উন্নত । রাশিয়ানদের তখনো সেরকম ধারণাই ছিল না কীভাবে আমেরিকান প্রযুক্তির মতো উন্নত নিউক্লিয়ার রকেট তৈরি করা যায় । রাশিয়া পুরো মনোযোগ দিয়ে দেয় অন্য বিষয়ে । ধ্বংসাত্মক উদ্দেশ্য নয় , নতুন কিছুকে সামনে নিয়ে আসার প্রেরণা । সারা পৃথিবী বুঝতে পেরেছিল , আজকের দিনেই , ৬৩ বছর আগে যে মানুষ ইচ্ছে করলে কী করতে পারে ।
এদিকে জহনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ে দুজন বিজ্ঞানী ব্যস্ত ছিলেন অন্য কাজে । তারা স্পুটনিকের গতিবিধির ওপরে নজর রাখছিলেন ।তারা দেখলেন স্পুটনিকের রেডিও সিগনালের ডপলার শিফট থেকে এর কক্ষপথ সম্পর্কে সম্পুর্ন ধারণা পাওয়া যাচ্ছে ।
বিংগো!!!
তারা জানালেন যদি কৃত্রিম উপগ্রহের অবস্থান জানা যায় , তাহলে উপগ্রহের ডপলার শিফট ব্যবহার করে পৃথিবীর মাটিতে কোথায় এই সিগন্যাল রিসিভ হচ্ছে সেটাও জানা যাবে । তাহলে বিষয়টা কী দাঁড়ালো ? আজকের দিনের জিপিএস’র শুরুয়াত হয়ে গিয়েছিল স্পুটনিকের উৎক্ষেপণের মধ্য দিয়েই । আমাদের গাড়িতে সেই কনসেপ্ট ব্যবহার করেই জিপিএস’র সাহায্য নিচ্ছি । স্পুটনিকের উৎক্ষেপণের মাধ্যমেই সুনিশ্চিত হয়েছিল একটি শিশুর জন্মগ্রহণ , গুগল ম্যাপ ।
স্পুটনিক একটি যুগের সূচনা করে দিয়েছিল। রাশিয়ার এই সাফল্য আমেরিকাকে বাধ্য করলো এক বছরের মধ্যেই নাসা’র প্রতিষ্ঠা করতে । এদিকে যেদিন স্পুটনিকের উৎক্ষেপণ হলো , এর ঊনত্রিশ তম দিনেই রাশিয়া লাইকা নামে একটি কুকুরকে পাঠালো মহাকাশে । মানুষ স্বপ্ন বুনতে শুরু করে দিলো , ফার্স্ট ম্যান ইন দ্য মুন । ভারত তখন শিশু রাষ্ট্র । মহাকাশ গবেষণা এদেশে তখন অঙ্কুর অবস্থায় , যদিও বলিউড ১৯৫৭ তেই পেয়ে গেছে ব্লক বাস্টার হিন্দি সিনেমা ‘মাদার ইন্ডিয়া’ — নার্গিস পর্দায় গাইছেন , ‘দুনিয়া মে হাম আয়ে তো জিনা হি পরেগা’ ।
স্পুটনিক ছোটই ছিল। মহাকাশে সক্রিয় ছিল ১৯৫৭ এর ২৬ অক্টোবর পর্যন্ত।৫৮ সেন্টিমিটার ব্যাসের স্পুটনিক জানিয়ে দিয়েছিল পৃথিবীতে পরের কয়েক দশক বিশ্ব রাজনীতি , শিক্ষা , অর্থনীতি কিভাবে শেকড় ছড়াবে । রাশিয়ার জাতীয় গর্ব যদি হয় স্পুটনিক , সারা বিশ্বের মানুষের কাছে অবশ্যই স্বপ্নের সহচর ।
COMMENTS