ত্রিপুরায় কোভিডে মৃত্যু-হার এক শতাংশ !

ত্রিপুরায় করোনা পরিস্থিতি সঙিন হয়ে উঠেছে বেশ কিছুদিন ধরেই। উত্তরপূর্বাঞ্চলে এই রাজ্যেই মৃত্যু-হার সবচেয়ে বেশি,এই  হার বুধবারে এক শতাংশ পেরিয়ে গেছে। রাজ্যের প্রধান হাসপাতাল জিবিপি হাসপাতালে কোভিডের চিকিৎসা নিয়ে গুরুতর অভিযোগ প্রতিদিন আসছে রোগীদের পরিজনদের থেকে, মৃতের স্বজনদের থেকে।

আগরতলার হাঁপানিয়ার আয়ুষ্মান ভারত’র সুবিধাভোগী একজন আজ জিবিপি হাসপাতালে মারা গেছেন,বাড়ির মানুষ অভিযোগ তুলেছেন, তার রক্তের প্রয়োজন ছিল, তা তিনি পাননি। ত্রিপুরা মেডিক্যাল কলেজ(টিএমসি) -এ তাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সেখানে তার কোভিড পজিটিভ ধরা পড়ে, পাঠিয়ে দেয়া হয় জিবিপি হাসপাতালে। মৃতের স্ত্রী , তার নিকট আত্মীয়রা বলেছেন, তার মাঝে মাঝেই রক্ত দেয়ার প্রয়োজন হয়ে পড়ত, কিছুদিন আগে  রক্ত দেয়া হয়েছিল । এবারও রক্তের দরকার ছিল বলে তাদের দাবি। কিন্তু কোভিড পজিটিভ হওয়ায় তাকে জিবিপি হাসপাতালে পাঠানো হয়, পাঠানোর সময়েও নাকি তাদের কাছে অ্যাম্বুলেন্সের জন্য টাকা চাওয়া হয়, আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পের আওতায় তারা চিকিৎসা করান,ইত্যাদি বলে-কয়ে ব্যবস্থা করেন।

জিবিপি হাসপাতালে তাকে ঠিকমত চিকিৎসা দেয়া হয়নি বলে অভিযোগ। ভর্তি হওয়ার পর, রোগীর সাথে তার এক নিকট আত্মীয়ের কথা হয়,  চিকিৎসা পাচ্ছেন না বলে তিনি তাকে বলেছেন, সেই কল  রেকর্ডিং তার কাছে আছে বলে দাবি করে ওই আত্মীয় রোগীকে রক্ত না দেয়ার অভিযোগ করেছেন।

 

সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট দিয়ে প্রিয়াঙ্কা চোধুরি অভিযোগ করেছেন, অক্সিজেনের অভাবে জিবিপি হাসপাতালে তার বাবা মারা গেছেন। যিনি মারা গেছেন, তার আরেক আত্মীয় বলেছেন, কিছুদিন হোম আইসোলেসনে ছিলেন তিনি। ২৫ আগস্ট তিনি  নিজেই আসোলেসনে যান, ১ সেপ্টেম্বর তার কোভিড পজিটিভ শনাক্ত হয়। শ্বাসকষ্ট শুরু হলে তাকে রবিবারে জিবিপি হাসপাতালে আনা হয়।

বেশ কয়েকজন ত্রিপুরা সিভিল সার্ভিসের ক্যাডার কোভিড আক্রান্ত হয়ে ভর্তি আছেন। মঙ্গলবারে  খবর ছিল, একজনের অক্সিজেনের প্রয়োজন ছিল, সারাদিন যোগাযোগ, চেষ্টা, ইত্যাদি করে যান আধিকারিকরা,  সন্ধ্যার পর তাকে চিকিৎসক দেখেন এবং অক্সিজেন দেয়া হয় আটটার পর।

 

জিবিপি হাসপাতাল’র হেল্পডেস্ক নম্বরে ফোন করলে, সেটি বেজেই যায়, কেউ ধরেন না।

 

আজ ত্রিপুরার এক প্রবীন শিক্ষিকার শারীরিক অবস্থা জানার জন্য ফোন করেন অনেকে , তারা পাননি।

এই প্রতিবেদকও ফোন করেছিলেন, কেউ ধরেননি। এই প্রতিবেদক আগেও এক রোগীর খবর জানতে অন্তত দুইদিন ফোন করেছিলেন, বেজেই গেছে, কোনও সাড়া পাওয়া যায়নি।

 

জিবিপি হাসপাতালের সুপারকে রক্ত না পাওয়ার অভিযোগ কিংবা হেল্পডেস্ক নম্বরে ফোন করে সাড়া না পাওয়ার কথা জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল।

রক্ত না পাওয়ার অভিযোগের ব্যাপারে তিনি বলেছেন যে  তাকে কেউ এরকম ব্যাপার জানা্ননি, “ আমার কাছে এমন রিপোর্ট করেননি কেউ।”

হেল্পডেস্ক’র ব্যাপারে তার বক্তব্য, “ ফোনটার সমস্যা  হয়েছে। বিএসএনএল’র মাধ্যমে করার চেষ্টা করছি।“ দু’একদিনের মধ্যে হবার আশা করেছেন তিনি।

অল ত্রিপুরা গভর্নমেন্ট ডক্টর্স অ্যাসোসিয়েসন’র সাধারণ সম্পাদক ডাঃ রাজেশ চৌধুরি দ্য প্লুরাল কলাম’র সাথে সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ফোনটি কোনও ডাক্তার না নার্সকেই ধরতে হয়, সেটা সব সময় সম্ভব হয় না। তিনি বলেছিলেন, কয়েকটি ল্যাণ্ডফোন দিয়ে একটি কল  সেন্টার চালুর প্রস্তাব তারা দিয়েছেন।

এটিজিডিএ সরকারকে দেয়া চিঠিতে কিছু অসুবিধার কথা তুলে ধরে,কিছু প্রস্তাব রেখেছিল। সেখানে বলা হয়েছিল, ক্রিটিক্যাল পেসেন্ট আর গুরুতর নয় , এমন রোগী মিলেমিশে থাকছেন। স্পেশালিটি ট্রিটমেন্ট দেয়া যাচ্ছে না, রোগীর পরিবার খবর পাচ্ছে না, ইত্যাদি। কলসেন্টার চালু, ডাক্তারের সংখ্যা বাড়ানো, ভর্তির সময় রোগীর অবস্থা অনুযায়ী ভাগ করে নেয়, প্রফেসরদের দিয়ে চিকিৎসা মনিটর করা,ইত্যাদি প্রস্তাব রাখা হয়েছিল।

রবিবার থেকেই বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে রাউন্ড দেবেন বলে তিনি দ্য প্লুরাল কলাম-কে রবিবার দুপুরে বলেছিলেন।

 

 

ত্রিপুরায় বুধবারে কোভিডে মৃত্যু-হার পৌঁছে গেল এক শতাংশে।

তার মানে গড়ে  একশ জন কোভিড আক্রান্তের মধ্যে একজন মারা যাচ্ছেন রাজ্যে।

বুধবার সন্ধ্যায় স্বাস্থ্য দপ্তর থেকে যে কোভিড বুলেটিন দেয়া হয়েছে তাতে দেখা যাচ্ছে এখন মৃত্যু হার এক শতাংশ। একদিনে মারা গেলেন আরও  সাতজন। মোট মৃত্যুর সংখ্যা, ১৬৭। মঙ্গলবারে মৃত্যুর সংখ্যা ছিল, ১৬০।

ত্রিপুরায় এখন কোভিড আক্রান্তের সংখ্যা ১৬ হাজার ৭৩৯। যার মধ্যে এক্টিভ রোগীর সংখ্যা ৬৫৫৪। সুস্থ হয়ে বাড়ি থেকে ফিরে গেছেন ৯৯৯৩।

সুস্থতার হার বুধবার দাঁড়িয়েছে ৫৯.৭৮ শতাংশে। মঙ্গলবারের থেকে  আরও কমেছে। মঙ্গলবার ছিল ৫৯.৮৩ শতাংশ। বুধবারে সুস্থ হয়ে বাড়িতে ফিরেছেন ৩৪০ জন।

( ১০ সেপ্টেম্বর,  বিকাল ৪ঃ৩২-এ তথ্যে অতি সামান্য  সংশোধন করা হল।)

COMMENTS