ত্রিপুরায় আমদানি হচ্ছে ‘লাভ জিহাদ’ নাম দিয়ে অপসংস্কৃতি !

প্রাপ্ত বয়স্করা নিজের ইচ্ছা মত বিয়ে করতে পারবেন , তা নিয়ে আদালতকে রায় দিতে হচ্ছে। এই সেদিনও এলাহাবাদ হাইকোর্ট এই রকম রায় দিয়েছে।

খুবই স্বাভাবিক বিষয়েও আদালতকে কথা বলতে হচ্ছে, বোঝা যায়, এ নিয়ে সমস্যা তৈরি করার লোকও আছে।

উত্তর প্রদেশেই বিজেপি সরকার ভিন্ন ধর্মে বিয়ে করা নিয়ে আইন করার জন্য বিল আনছে। চলতি কথায় ‘লাভ জিহাদ’ যে বিষয়কে বলা হয়, তাকে আইনি মোড়কে ফেলার চেষ্টা।

‘লাভ জিহাদ’ বলে সমস্যা তৈরি করা হচ্ছে। যদিও আদালতে এইসব ব্যাপার দাঁড়ায়নি।

ত্রিপুরায় দুই ধর্মের অনুসারীদের বিয়ে হলে, সেটি সামাজিক সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়নি। এখন এসব করা হচ্ছে। আগরতলার আদালত চত্বরে আইনজীবীদের আক্রমণ করা হয়েছে, সংখ্যালঘু অংশের ছেলে সংখ্যাগুরু অংশের মেয়েকে বিয়ে করায়।
সংখ্যাগুরু অংশের ছেলে সংখ্যলঘু অংশের মেয়েকে বিয়ে করেছেন সম্প্রতি ত্রিপুরায়, এমন উদাহরণ আছে, তখন অবশ্য তারা গন্ডগোল পাকাননি।

উদয়পুরে ব্রীজ অবরোধ করে রাখা হয় আজ। প্রশাসনের লোক গিয়ে, কথাবার্তা বলেন। জাতীয় সড়ক অবরোধ করা হলেও, তুলে দেয়া হয়নি।
কৃষিমন্ত্রী  প্রনজিৎ সিংহ রায় যান, কথা বলেন, অবরোধ উঠে যায়। দীর্ঘ কয়েক ঘন্টা এই অবরোধ ছিল।

উদয়পুরে  অভিযোগ, এক নাবালিকাকে অপহরন এবং তাকে অত্যাচারের। পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নেয়নি, পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ। পুলিশ, অভিযোগে ব্যবস্থা নেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। মন্ত্রীও তাদের কথা শুনেছেন। পুলিশের কাছে ব্যবস্থা নেয়ার দাবিতে  উদয়পুরে আজ পথ অবরোধে ‘লাভ-জিহাদ’ ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে। আইন করার দাবি। ‘লাভ-জিহাদি’-কে  ফাঁসির দাবি।

অপহরন,বা মেয়েদের বিরুদ্ধে অত্যাচারের  অভিযোগের পাশে এই রকম বিষয় ঢুকিয়ে দেয়ার বিষয় ত্রিপুরায় ছিল না। ভিন্ন ধর্মীদের মধ্যে বিয়ের ক্ষেত্রেও ছিল না।

অতি সম্প্রতি পশ্চিম ত্রিপুরা জেলায় দুইজন মহিলাকে খুঁটিতে বেঁধে মারধর করার ঘটনা হয়েছে। খবরও হয়েছে। এক ক্ষেত্রে এক নেতার স্ত্রী জড়িত থাকার অভিযোগ আছে, সে ক্ষেত্রে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন আছে। আরেকটি ক্ষেত্রে গ্রেফতার আছে ।

এক লোকগানের শিল্পীকে অনেকে ঘিরে ধরে রাস্তার পাশে হেনস্তা করার ঘটনা হয়েছে দুর্গা পূজার সময়ে। সামাজিক মাধ্যমে সেই ছবি ছড়িয়ে দেয়া হয়। পুলিশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠালেও, সেদিনই তারা জামিন পেয়ে গিয়েছিল। পুলিশের দুর্বলতায় জন্যই এমন হয়েছে বলে অভিযোগ।

সেসব ক্ষেত্রে  কোনও অপরাধীর শাস্তির দাবিতে  ‘লাভ-জিহাদ’ নিয়ে উৎসাহীদের কোনও ‘আন্দোলন’, ‘অবরোধ’ করতে দেখা যায়নি।

উদয়পুরে অবরোধের জন্য কারও  বিরুদ্ধে আইনি কোনও ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে শোনা যায়নি, যেমন বিরোধীরা মিছিল করলে মামলা করা হয়, গ্রেফতার করা হয়।

জাতীয় রাস্তা অবরোধের কারণেই পানিসাগরে গুলি চলেছে, একজন মারা গেছেন।গণপিটুনির জেরে  একজন ফায়ারম্যানও মারা গেছেন গত সপ্তাহে। ম্যাজিস্ট্রেট পর্যায়ে তদন্তের নির্দেশ হয়েছে।

আদালত চত্বরে আইনজীবী আক্রান্ত হওয়ার ঘটনায়  পুলিশ আইনজীবীকে বাড়িতে পৌঁছে দেয়া, সেখান থেকে একজনকে আটক করলেও, পরে  অসদর্থক ভূমিকা নিয়েছে বলে অভিযোগ। আক্রমণকারীরা ‘বজরংবলী’, ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান দিচ্ছিলেন সেদিন। পশ্চিম আগরতলা থানা গিয়ে আটক ব্যাক্তিকে ছাড়িয়ে আনতে ঘেরাও হয়। আইনজীবীরা পুলিশের ভূমিকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন।

আজ যারা উদয়পুরে যারা রাস্তা আটকালেন, তারাও গেরুয়াপন্থী।

সংখ্যালঘু বিজেপি নেতার হিন্দু স্ত্রী আছেন, সুখেই তারা ঘর-সংসার করছেন। সংবিধান সেই অধিকার সব ভারতীয়কেই দেয়।

উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা সেটা নিয়ে সাধারণের মধ্যে অশান্তি তৈরি করার চেষ্টা করে। ত্রিপুরায় এসব ছিল না, নতুন করে আমদানি হচ্ছে।

উল্লেখ্য, সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব বলেছিলেন, ত্রিপুরার মানুষ এখন ধর্মঘট পছন্দ করেন না। এখন মানুষ একমাত্র পথে নামেন, মোদিজীর জয়ে আনন্দ প্রকাশ করতে।

 

(কয়েকজন নিয়মিত পাঠক মতামত জানিয়েছেন, আগের শিরোনামটি খবরটির বিষয়কে ঠিকভাবে প্রকাশ করছে না বলে। সেই জন্য শিরোনামটি একটু বদলে দেয়া হল। )

COMMENTS