সীমান্ত অরক্ষিতই। পারাপার আছেই।

https://youtu.be/aCeO3MIUmII

সোনামুড়ার মনাইপাথর এলাকা থেকে সকালে দুই রোহিঙ্গা টিনএজারকে ধরেছে পুলিশ। উনিশ বছরের নাজিমুল্লা এবং আঠারো বছরের মিনারা।

‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’-র বাহাদুরি আছে, মুখে মুখে বেশ শক্তপোক্ত, সীমান্ত পাহারাই ঢিলে, পর পর ঘটনা তাই ইঙ্গিত করে।

কয়েকদিন আগেই দুইজন ভারত- বাংলাদেশ সীমান্ত পেরিয়ে ত্রিপুরায় আসেন। তারা বক্সনগর দিয়ে ত্রিপুরায় ঢুকেছে বলে পুলিশের দাবি।
বক্সনগর থেকে তারা চলে যান মনাইপাথরে। সেখানে ইকরাম হোসেন নাকে একজনের বাড়িতে ছিলেন। যাত্রাপুর থানার পুলিশ সেই বাড়িতে হানা দিয়ে দুজনকে তুলে এনে আদালতে পেশ করেছে।
রোহিঙ্গা যুবক যুবতীকে আটক করে। বাড়ির মালিক ইকরাম হোসেনকেও গ্রেফতার করা হয়েছে। এদিনই তাদের আদালতে তোলা হবে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
বাংলাদেশে কোথায় থাকতেন, ইত্যাদি জানার চেষ্টায় আছে পুলিশ।
কাজের খোঁজেই তারা এদিকে এসেছিলেন। ত্রিপুরা ছেড়ে অন্য রাজ্যে যেতেন।
মায়ানমারে রাষ্ট্রীয় হিংসার বলি রোহিঙ্গা মুসলিমরা হাতে প্রাণ নিয়ে সমুদ্র পেরিয়ে বাংলাদেশে উঠে আসেন। তারপর সেখান থেকে ছড়িয়ে পড়েন নানা জায়গায়, ভারতের নানা রাজ্যে কাজের খোঁজে ঢুকে পড়েন।
গত এক বছরে শুধু সাতলক্ষ রোহিঙ্গা নিজের দেশ ছেড়ে বাংলাদেশে ঢুকেছেন।

দিন কয়েক আগে আসামের চুড়াইবাড়িতে শিশ-নারীসহ তেরজন রোহিঙ্গা অংশের মানুষ ধরা পড়েছেন আসাম পুলিশের হাতে।
তারা বাংলাদেশ থেকে অবৈধভাবে সীমান্ত পেরিয়ে ত্রিপুরা হয়ে কাজের আসাম যাচ্ছিলেন, কাজের খোঁজে হায়দ্রাবাদ, দিল্লি, ইত্যাদি জায়গায় যাওয়ার ইচ্ছা ছিল তাদের।

বাংলাদেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিজিবি’র প্রধান মেজর জেনারেল সাহিনুল ইসলাম গুয়াহাটিতে গত সপ্তাহে বলেছেন, যতদিন না রোহিঙ্গারা তাদের নিজের দেশ মায়ানমারে ফিরে যাচ্ছেন, ততদিন ভারত এবং অন্যান্য দেশের জন্য এই সমস্যা রয়েই যাবে।

সর্বোচ্চ পর্যায়ে বিএসএফ-বিজিবি মিটিঙ ছিল গুয়াহাটিতে।

“রোহিঙ্গা অংশের শরনার্থী মানুষেরা তাদের নিজের দেশ মায়ানমারে ফিরে গেলেই সমস্যার সমাধান হবে, এই সমস্যা নয়ত রয়েই যাবে,” বলেছেন তিনি।

” সীমান্তে প্রায়ই রোহিঙ্গা মানুষ ধরা পড়েন। কক্সবাজারের শরনার্থী ক্যাম্প থেকে পালিয়ে তারা ঢুকে পড়তে চান। তাদের অনেকের কাছেই রাষ্ট্রসংঘের কার্ডও থাকে।” তিনি বলেছেন।

ইদানিংকালে ত্রিপুরার ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত দিয়ে মায়ানমার’র রোহিঙ্গা অংশের মানুষের এ দেশে আসা বেড়ে গেছে।
নিরাপত্তা বাহিনীর একাধিক সূত্র বলছে, ইদানিং কালে এই আসা বেড়েছে বিশেষভাবে।

নিজের দেশে থাকতে না পেরে জীবনের মারাত্মক ঝুঁকি নিয়ে বাংলাদেশে আসেন তারা। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, ইত্যাদি এলাকায় রোহিঙ্গাদের হাজার হাজার মানুষ বিভিন্ন শিবিরে আছেন। সেখানে কাজের অভাব। কাজের খোঁজে তারা ভারতে ঢুকে থাকেন, মানব পাচার চক্রের খপ্পরে পড়েন।

ত্রিপুরা থেকে বাসে গুয়াহাটি যাবার পথে আসামের অংশে চুড়াইবাড়িতে যে তের জন রোহিঙ্গা পুলিশের হাতে ধরা পড়েছিলেন, পুলিশের কাছে তারা বলেছেন, কাজের খোঁজেই তারা বাংলাদেশ থেকে এসেছেন। হায়দ্রাবাদ, দিল্লি, বা কাশ্মিরে তারা যেতে চান।

যারা ধরা পড়েছেন, তাদের মধ্যে শিশু, মহিলাও আছেন।
তের জনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বয়স যার, তিনি ৩৩ বছরের।

২০১৭ সাল থেকেই শুধু সরকারি হিসাবে বাংলাদেশে সাড়ে সাত লক্ষ রোহিঙ্গা শরনার্থী বাংলাদেশে এসেছেন।

কোভিড সময়ে কাজের টান বেড়ে গেছে, মরিয়া হয়ে রোহিঙ্গারা কাজের খোঁজে সীমান্ত পেরিয়ে আসেন, ধরা পড়লে জেলে যেতে হবে,তারা জানেন, জেলে থাকলে তবু খাবার পাওয়া যায়, এরকমই অনেক রোহিঙ্গা মানুষ মনে করেন, বলেছেন এক পুলিশ অফিসার।

বিএসএফ-বিজিবি মিটিং শেষে বিএসএফ প্রধান রাকেশ আস্তানা বলেছেন, গত এক বছরে ভার‍তে ৩২০৪ অবৈধ বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী ধরা পড়েছেন।
তবে তিনি এও বলেছেন, যদি সেই অনুপ্রবেশকারীদের অপরাধমূলক কোনও যোগসূত্র না থাকে, তবে তাদের বাংলাদেশের কাছে তুলে দেয়া হয়। অন্যক্ষেত্রে পুলিশের কাছে।
বিজিবি প্রধান এই নিয়ে দাবি করেছেন, বাংলাদেশের দিক থেকে ভারতে কোনও অবৈধ অনুপ্রবেশ হচ্ছে না। বাংলাদেশের জিডিপি বাড়ছে। ভারতে অনুপ্রবেশের কোনও কারণ নেই।

COMMENTS