শাস্তি দিচ্ছে ‘নীতি পুলিশ’, এক মহিলার গায়ে তুলে দেয়া হল কুকুর

কুকুর গায়ে তুলে দেয়া হয়েছে, ‘নীতি পুলিশ’ নিজে কামড়েছে !
ত্রিপুরার দক্ষিন দিকে বিলোনীয়া। সেখানে ‘সামাজিক নীতি পুলিশ’র হামলায় একজন মহিলা এখন হাসপাতালে। মারধর, কামড়, ইত্যাদি শেষে মেয়ের জামাইয়ের মামার সাথে দুর্গামন্ডপে ‘বিয়ে’ হয়েছে তার। পুলিশ পরদিন সকালে তাদের মণ্ডপ থেকে হাসপাতালে পৌঁছে দিয়েছে। দশজন অভিযুক্ত, একজনকেও গ্রেফাতার করা হয়নি। পরশুদিন প্রায় সারারাত ধরে হয়েছে এসব।
মহিলা সম্প্রতি তার মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গে। গিয়েছিলেন মেয়ের শ্বশুরবাড়িতে। সঙ্গে আসেন মেয়ের মামা-শ্বশুর। পরশু রাতে মহিলার বাড়িতে হানা দেয় তার এলাকারই বেশ কয়েকজন। তাকে টেনে বের করে ঘর থেকে। ঘঢ়েই স্বামী ও বেয়াই। মারধর শুরু হয়। মহিলার গায়ে তুলে দেয়া হয়,কুকুর। আঁচড়ে শরীর ফালা-ফালা। দুর্বৃত্তরা নিজেরাও মহিলাকে কামড়ে দিয়েছে। মহিলাকে হিঁচড়ে নিয়ে যাওয়া হয় দুর্গা মণ্ডপে। বেয়াইয়ের সাথে ‘বিয়ে’ দেয়া হয়। মহিলা আপত্তি করলে, হুমকি আসে, ‘নগ্ন ছবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেব’। প্রাণ ও শরীরের কাপড় বাঁচাতে মহিলা ‘বিয়ে’ করেন। হাসপাতালে শুয়ে তিনি ক্যামেরার সামনেই এই অভিযোগ করছেন।
সিপিআই(এম) বিধায়ক সুধন দাস যখন জানতে পারেন এই ঘটনা, পুলিসকে খবর দেন। গতকাল সকালে যায় পি আর বাড়ি থানার পুলিশ। পুলিশ গিয়েই মহিলা এবং তার আত্মীয়কে উদ্ধার করে, দুর্গা মণ্ডপে তাদের বেঁধে রাখা হয়েছিল। অন্তত দশজনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এখনও কোনও কেউ গ্রেফতার নেই। সেখানকার মহকুমা পুলিশ আধিকারিক সৌম্য দেববর্মার দাবি, অভিযুক্তরা পালিয়ে গেছেন।
মহিলা একসময় পঞ্চায়েতে সিপিআই(এম) থেকে নির্বাচিত মেম্বার ছিলেন। পরিবারটি বাম সমর্থক হওয়ায় তাদের ওপর তিন মার্চ রাতে আতঙ্ক নামিয়ে আনা হয়েছিল বলেও অভিযোগ আছে।
দুই হাসপাতাল ঘুরে এখন তিনি একটি জেলা হাসপাতালে আছেন।
নীতি পুলিশের বক্তব্য, তিনি বেয়াইয়ের প্রেমে আসক্ত। ফলে পরিবেশ খারাপ হচ্ছে। এমন কোনও আইন যদিও দেশে নেই, তবে নীতি পুলিশের শাস্তি, এক্সট্রা জুডিসিয়াল ডিসিসন, তাতে মহিলা হাসপাতালে।
ত্রিপুরায় বেশ কয়েক বছর ধরেই মাঝে মাঝেই এরকম খবর পাওয়া যাচ্ছে। কমলপুর, কল্যাণপুর, বিশালগড়, ইত্যাদি। টাটা কালিবাড়ির ঘটনা এখনও লোকে বলেন, এবং তা রাজনৈতিকভাবেও প্রচারিত। তবে সেসব ঘটনায় পুলিশ-আদালত হয়ে দোষীরা জেলেও গেছেন।
বাম আমলেও, শাসকপন্থী বা বিরোধীপন্থী কোনও দলীয় কর্মী, যুব-ছাত্র সংগঠনের কোনও কর্মীকে এসব ঘটনা চলার সময় প্রতিবাদী হতে দেখা যায়নি। সেসব এলাকায় কোনও রাজনৈতিক দলের কেউ খবর জানতেন না, সেটি হয় না, তখন পঞ্চাশের বেশি ত্রিপুরা বিধানসভায় আসন পাওয়া বামফ্রন্টের কর্মী-সমর্থক কেউ ছিলেন না ওইসব এলাকায় ! ভোট পাওয়ার হিসাবে বামফ্রন্ট থেকে কয়েক শতাংশ কম ভোট পাওয়া বিরোধীদের কোনও কর্মী-সমর্থক ছিলেন না ! তখন এই সামাজিক সমস্যার জন্য কাউকেই নির্দিষ্টভাবে কোনও কাজ করতে দেখা যায়নি রাজ্যজুরে। ভোটের ভাষণে উল্লেখ হয়েছে। বিশালগড়ের এক ঘটনা তো পুলিশ গ্রেফতার করে আদালতে পাঠানোর পর সেই সূত্র ধরে দু/তিন দিন পর গণমাধ্যমে বের হলে, সেখানে তখনকার শাসকপন্থী নারী সংগঠন গিয়েছিল, নিজেদের তরফে খবরই পায়নি !
কমলপুরে তখনকার শাসকদলীয় পঞ্চায়েত সদস্য যুক্ত থাকায়, তাকে বের করে দেয়া হয়েছিল !
রাজনৈতিক সংগঠন কাজ না করলেও, হুঙ্কার শোনা যেত, ত্রিপুরাকে হরিয়ানা হতে দেব না !
এখন তাও শোনা যাচ্ছে না !

COMMENTS