ভারতে লকডাউন শুরু। দেশে করোনাক্রান্ত ছাড়িয়ে সাড়ে পাঁচশ,বিশ্বে ৪ লাখ। পিছিলে গেল টোকিও অলিম্পিক।

ভারতে লকডাউন শুরু। দেশে করোনাক্রান্ত ছাড়িয়ে সাড়ে পাঁচশ,বিশ্বে ৪ লাখ। পিছিলে গেল টোকিও অলিম্পিক।

ভারতে করোনা ভাইরাস আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা পাঁচশ ছাড়িয়ে গেছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রক হিসাব দিচ্ছে ৫১৯ জন , সন্ধ্যা রাত পর্যন্ত। কেরালা এবং মহারাষ্ট্রে সবচেয়ে বেশি, ৮৭ এবং ৮৬। মৃত্যু ,দশ। তবে আলাদা করে  রাজ্যগুলির দেয়া হিসাব নিলে মোট আক্রান্তের সংখ্যা রাত নয়টায় ৫৫১ জন।

প্রধানমন্ত্রী সার দেশে আগামী ২১ দিন লকডাউন ঘোষণা করেছেন।

উত্তরপুর্বাঞ্চলে প্রথম করোনা ভাইরাস রোগী নিশ্চিত হয়েছে মণিপুরে মঙ্গলবার সকালে। তেইশ বছরের এক ইংল্যান্ড ফেরতা ছাত্রী। তার বিমান আগরতলা হয়ে গেছে। সহযাত্রীদের খোঁজ চলছে।

সারা দেশে করোনা সংক্রমণ এবং আতঙ্ক উপরের দিকে উঠছে। সোমবারে কলকাতায় একজন মারা গেছেন, তার বিদেশ যাবার কোনও বিষয় ছিল না। উত্তরপ্রদেশের বিলাসপুর গিয়েছিলেন, ফিরেছেন ট্রেনে। তাছাড়াও দেশে আরও এমন দু’জনের শরীরে ভাইরাসটি পাওয়া গেছে যাদের বিদেশ যাবার ব্যাপার নেই। ভারতে এই সংক্রমণ তৃতীয় স্তরে পৌঁছে গেল কিনা, আশঙ্কা রয়েছে।

সারা বিশ্বে এখন পর্যন্ত আক্রান্ত ৪ লাখের বেশি, মৃত্যু হয়েছে, ১৭,২৬০ জনের। সুস্থ হয়েছেন, ১,০৩,৭৪৮  জন।

ইতালির অবস্থা ভয়াভয়। সবচেয়ে বেশি মৃত্যু সেখানে। স্পেন, আমেরিকাও ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। চীনে প্রথম ধাপে কমে গেলেও, আবার ৬৭ জনের সংক্রমণের খবর পাওয়া গেছে। চীনে হান্তা ভাইরাসে এক জনের মৃত্যু হয়েছে, ৩২ জনের পরীক্ষা চলছে। এই ভাইরাসটি ইঁদুরের শরীর থেকে আসে।

করোনা ভাইরাসের জন্য টোকিও অলিম্পিক পিছিয়ে গেছে  ২০২১ পর্যন্ত।

 

 

আলাদা আলাদা সূত্রের তথ্য মিলিয়ে ভারতে আক্রান্তের সংখ্যা ৫৫৬ ছাড়িয়ে গেছে । নতুন আক্রান্ত পঞ্চাশ।

রাত দশটা ছাব্বিশে’র খবরে, মহারাষ্ট্রে  এখন পর্যন্ত রাজ্যে ১০৭ চিহ্নিত হয়েছেন।কেরালার তথ্য অনুযায়ী, সেখানে ১০৫ জন। কর্নাটকে নতুন চারজনকে নিয়ে মোট সংখ্যা ৪১ জনে পৌঁছেছে। তেলেঙ্গানায়  দশজন বিদেশিকে নিয়ে  ৩৭ জন। উত্তরপ্রদেশে একজন বিদেশিকে নিয়ে ৩৫ জন। গুজরাটে ৩৩ জন, দিল্লিতে ২৯ জন। রাজস্থানে ৩২ জন, তাতে দুইজন বিদেশি। হরিয়ানাতে চৌদ্দ বিদেশিকে নিয়ে ৩০ জন। পাঞ্জাবে মঙ্গলবারের পাঁচজন নিয়ে ২৯ জন। লাদাখে ১৩ জন, পশ্চিমবঙ্গে ও মধ্যপ্রদেশে  , মধ্যপ্রদেশে ৯ জন করে, তামিলনাড়ুতে ১৮ জন, চণ্ডিগড়ে ৬ জন, অন্ধ্রপ্রদেশে ৭ জন, জম্মু-কাশ্মীরে ৭ জন। উত্তরাখন্ডে ৫ জন।  বিহার,হিমাচলপ্রদেশ, ওড়িষা, এই তিনরাজ্যে দুইজন করে। পদুচেরি এবং ছত্তিশগড়ে,মণিপুরে  একজন করে।

 

সরকারি তথ্য অনু্যায়ী দেশে আক্রান্তদের মধ্যে ৪১ জন বিদেশি আছেন। মোট আক্রান্তের ৩৬ জন ভালো হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন।

 

বিমান, ট্রেন, সড়ক পরিবহন বন্ধ করে দেয়া হয়েছে একদিন আগেই, রাত বারটা থেকে শুরু হয়ে গেল সারা দেশে লক-ডাউন। তার আগেই , দেশের চুরাশিটি জেলা লকডাউনে ছিল, রাজস্থান, ত্রিপুরা, পশ্চিমবঙ্গ, চণ্ডিগড়,দিল্লি,গোয়া,জম্মু-কাশ্মীর, নাগাল্যান্ড লকডাউন করেছে দেশের আগেই। মহারাষ্ট্রে বড় বড় শহরগুলি কয়েকদিন ধরেই বন্ধ। মহারাষ্ট্র এবং পাঞ্জাব, এই দুই রাজ্যে কারফিউ জারি হয়েছে। কেন্দ্র গোটা দেশকে লকডাউনে নিয়ে গেলেও, রাজ্যগুলিকে নির্দেশ দিয়েছে , প্রয়োজন হলে অতিরিক্ত আরও কিছু বিধিনিষেধও চালু করা যেতে পারে।

 

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি রাজ্য সরকারগুলিকে বলেছেন, লকডাউনে যেন কড়াভাবে বিধিনিষেধ মানা হয়, তিনি দেখেছেন, অনেকেই তা মানছেন না। অনেকেই লকডাউনকে গুরুতর বিষয় হিসেবে দেখছেন না। “ আজ আমারা কী করব, সেটাই ঠিক করবে, আগামীতে এই দেশে কী হতে পারে। এখন যা অবস্থা , আমাদের সকল্প বারে বারেই দৃঢ় করতে হবে,” বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। যদি  আমরা ব্যার্থ হই, তাহলে চড়া মূল্য দিতে  হবে সবাইকে। সামাজিকভাবে দূরত্ব রাখাই একমাত্র রাস্তা এই ভাইরাসকে আটকানোর, বলেছেন তিনি।   তিনি অবশ্য আতঙ্কিত না হবার পরামর্শও দিয়েছেন। দেশে কোনও অত্যাবশ্যকীয় জিনিসের অভাব হবে না, প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। সরকার স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর জন্য ১৫ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের কথা জানিয়েছেন।

ক্যাবিনেট সচিব প্রত্যেক রাজ্যের সচিবকে  লিখেছেন, তারা যেন চব্বিশ ঘন্টা পরিস্থিতি নজরে রাখেন। কেউ বিধি-নিষেধ না মানলে কড়াভাবে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে।

রেশন দোকান, ফল, মুদি, ফল, সব্জী, দুধ,মাছ-মাংস, পশু খাদ্য, ওষুধ , ইত্যাদি দোকান খোলা থাকবে। শেষ কৃত্যে কুড়ি জনের বেশি মানুষ যাবেন না। লকডাউনের জন্য  যদি কেউ সরকারি সাহায্য পাইয়ে দেবার মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দেয়, দুই বছর পর্যন্ত জেল হতে পারে।

 

প্রধানমন্ত্রী লকডাউনের ঘোষণা দিলেও , সরাসরি আর্থিক প্যাকেজ কিছু ঘোষণা করেনি। আয়কর দেয়ার দিনক্ষণ পিছিয়ে দেয়া হয়েছে। অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন বলেছেন, শীঘ্রই আর্থিক প্যাকেজ ঘোষণা হবে।

ইতিমধ্যেই কোটি কোটি মানুষের রুটি-রোজগার বন্ধ হবার মুখে। শুধু পর্যটন শিল্পেই চার কোটি মানুষের পেটে টান পড়েছে। পর্যটন শিল্প সম্পর্কিত একটি সংগঠন , সরকারি তহবিলের দাবি জানিয়েছে।

 

বিদেশ থেকে স্যানিটাইজার ও ভেন্টিলেটর আমদানি বন্ধ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর মেডিক্যাল রিসার্চ ১১৮ সরকারি ল্যাবরেটরি, দিনে  ১২০০০ নমুনা পরীক্ষার করা যাবে, এবং সাড়ে পনের হাজার কালেকসন সেন্টারসহ ২২ বেসরকারি ল্যাবকে করোনা ভাইরাস পরীক্ষার  নেটওয়ার্কে এনেছে।     ভারতের একটি বেসরকারি সংস্থা এই টেস্টের কিট তৈরি করেছে, ভারতে প্রথম। দাম পড়বে প্রতিটি ৮০ হাজার, পরীক্ষা করা যাবে ১০০ নমুনা। সংস্থাটি

সুখের খবর একটাই, দিল্লিতে গত ৪০ ঘন্টায় নতুন কোনও সংক্রমণ চিহ্নিত হয়নি।

COMMENTS