আজ দিল্লি ভোট

সকাল আটটা থেকে দিল্লিতে বিভানসভা ভোট শুরু হয়েছে। লড়ছেন ৬৭২ জন, লড়াই হচ্ছে ত্রিমুখী।

প্রথম দুই ঘন্টায় ভোট হয়েছে মাত্র সাড়ে চার শতাংশ।

জাতীয় রাজনীতিতে এই বিধানসভা নির্বাচন বিশেষ গুরুত্ব দখল করে নিয়েছে। এই নির্বাচন আম আদমি পার্টির জন্য লিটমাস টেস্ট ।

কয়েক মাসের কেন্দ্রীয় সরকারের নীতি,সিদ্ধান্তগুলো দেশের রাজধানীর নির্বাচকমণ্ডলী কতটা মেনে নিয়েছেন, বিজেপি’র জন্য এর প্রাথমিক পরীক্ষা এই নির্বাচনেই হচ্ছে।

২০১৫ সালের বিধানসভা নির্বাচনে সারা ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক অন্য বার্তা নিয়ে এসেছিল আম আদমি পার্টি (আপ) ।

৭০ টি আসনের মধ্যে আপ একাই দখল করেছিল ৬৭ টি আসন। বিজেপির দখলে গিয়েছিলো তিনটি ।কংগ্রেস একটি আসনও পায়নি।

সারা দেশের রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে দিল্লি বিধানসভা নির্বাচন নিয়ে যথেষ্ট চর্চা হচ্ছে। একদিকে কেন্দ্রীয় সরকারের সিটিজেনশিপ আমেন্ডমেন্ট অ্যাক্ট বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম আঁতুড়ঘর হিসেবে পরিচিত দিল্লীর শাহিনবাগ । মাত্র কিছুদিন আগেই লোকসভায় পেশ হয়েছে বাজেট।বিরোধীরা এই বাজেট নিয়ে সমালোচনায় মুখর। বি জে পি বলছে অসম্ভব ভালো বাজেট। দিল্লী বিধানসভা নির্বাচনকে ঘিরে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে চলছে চাপান-উতোর ।

বিভিন্ন দলের নেতাদের ভোট প্রচারে করা একাধিক মন্তব্য রাজনৈতিক উত্তেজনা ক্রমশ বাড়িয়েছে।

আম আদমি পার্টি গত পাঁচ বছরে তাদের সরকারের সাফল্যের খতিয়ানকে প্রচারের মূল ইস্যু করে নির্বাচকমণ্ডলীর সামনে তুলে ধরেছে। সারাদেশেই স্বাস্থ্য এবং শিক্ষা ক্ষেত্রে দিল্লি সরকার বেশ কিছু উদ্ভাবনমুখী পরিকল্পনা নিয়ে যথেষ্ট সফলতা লাভ করেছে। এই বিষয়গুলো আম আদমি পার্টি প্রচারে সামনের দিকে রেখেছে ।

বিজেপির প্রচারের মূল বিষয় ছিল সংবিধানের ৩৭০ ধারা তুলে দেয়া, সিটিজেনশিপ আমেন্ডমেন্ট অ্যাক্ট এবং হিন্দুত্ব জাতীয়তাবাদ।

বিজেপির হয়ে প্রচারে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী মাঠে নেমেছিলেন । সাথে ছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ , উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর এবং এক ঝাঁক বি জে পি সাংসদ।

ভারতের নির্বাচন কমিশনকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের নির্বাচনী প্রচারে করা বেশ কিছু অনভিপ্রেত মন্তব্যের জেরে কঠোর হতে হয়েছে।

বিজেপি’র যোগী আদিত্যনাথ, অনুরাগ ঠাকুর, সম্বিত পাত্র , পরভেশ ভার্মাকে কমিশন একদিকে যেমন কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে তেমনি অনুরাগ ঠাকুর ও ভার্মার নির্বাচনী প্রচার কাজের ওপর নিষেধাজ্ঞাও জারি করেছে ।

গতকালই কমিশন থেকে কারণ দর্শানোর নোটিশ পেয়েছেন দিল্লীর মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল । কেজরিওয়াল একটি বিতর্কিত ভিডিও তার ট্যুইটারে প্রকাশ করার জন্য কারণ দর্শানোর নির্দেশ পেয়েছেন।আজ বিকাল পাঁচটার মধ্যেই তাকে জবাব দিতে হবে।

ভোটের কাজে নিযুক্ত হয়েছেন ৪০ হাজারেরও বেশি নিরাপত্তাকর্মী ।১৯০ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী এবং প্রায় ১৯ হাজার হোমগার্ড নির্বাচনী কাজে নিযুক্ত হয়েছেন । ২৬৮৯ টি পোলিং স্টেশনের মধ্যে ৫৪৫ টি পোলিং স্টেশন কে ক্রিটিক্যাল হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

গত কয়েকদিনে ভারতের নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব প্রাপ্ত বিভিন্ন আধিকারিকরা প্রায় ৫৩ কোটি টাকার মদ , ড্রাগস, অলংকার বাজেয়াপ্ত করেছেন । এই সবকিছুই নির্বাচনে ভোটারদের প্রভাবিত করার জন্য ব্যবহৃত হতো বলেই অভিযোগ ।

নগদ টাকা বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে প্রায় ১০ কোটি টাকা ,চার কোটি টাকার মদ বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে ,বিভিন্ন কফ সিরাপ এবং ড্রাগ বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে প্রায় ৬ কোটি টাকার, এবং প্রায় ৩২ কোটি টাকার অলংকার ।

ভারতের নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ অনুযায়ী প্রতিটি রাজনৈতিক দল এবং প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে নির্বাচনী আচরণবিধি মেনে চলতে হয়। নির্দেশিত নির্বাচন আচরণ বিধি অনুসরণ না করার জন্য মোট ৫৩৪ টি এফ আই আর দাখিল করা হয়েছে। ৩৭ টি এফ আই আর সরাসরি আম আদমি পার্টির বিরুদ্ধে দাখিল করা হয়েছে ।

২১ টি গণনা কেন্দ্রে ১১ ফেব্রুয়ারি ভোট গণনা করা হবে।

ভারতের নির্বাচন কমিশনের তথ্য মোতাবেক দিল্লির মোট জনসংখ্যা ২,০১,৪৩,৬৮৬ এবং এর মধ্যে মোট ভোটারের সংখ্যা ১,৪৭,৮৬,৩৮২ জন অর্থাৎ মোট জনসংখ্যার প্রায় ৭৩%ই ভোটার।

ভোটারদের মধ্যে ১৮ থেকে ২৫ বছর বয়সী আছেন ১৭,৩৪,৫৬৫ জন। এই ভোটাররা প্রায় ১২% । বেশ কয়েকটি বিধানসভা কেন্দ্রে কমবয়সী ভোটাররা জয় পরাজয়ের ব্যবধান গড়ে দেবেন বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অভিমত।

প্রতিদ্বন্দ্বী ৬৭২ জন প্রার্থীর মধ্যে মহিলা প্রার্থীর সংখ্যা ৭৯ জন।

সব থেকে বেশি প্রার্থী আছেন নতুন দিল্লি বিধানসভা কেন্দ্রে।এই কেন্দ্রে মোট ২৮ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। অপরদিকে প্যাটেল নগর বিধানসভা কেন্দ্রে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সংখ্যা সব থেকে কম ,মাত্র চারজন।

আম আদমি পার্টি অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের সাথে জোট বাঁধে নি। একাই ৭০ টি বিধানসভা কেন্দ্রে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে।

বিজেপি, জনতা দল ইউনাইটেড এবং এল জে ডি’র সাথে জোট গঠন করেছে। বিজেপি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে মোট ৬৬ টি আসনে জনতা দল ইউনাইটেড এবং এল জে ডি দুইটি করে আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে ।

কংগ্রেস গত বিধানসভা নির্বাচনে ভালো ফলাফল করতে পারেনি। এবার রাষ্ট্রীয় জনতা দলের সাথে জোট গঠন করেছে। কংগ্রেস প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আছে ৬৬ টি আসনে। চারটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে আর জে ডি।

ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি এবং সিপিআইএম তিনটি করে আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে ।নির্দল প্রার্থী আছেন ১৪৮ জন ।

প্রাথমিক ধারণা অনুযায়ী এই নির্বাচনে ইভিএমের ব্যালট ইউনিট ব্যবহৃত হবে ৩৪,২২২টি । কন্ট্রোল ইউনিট ব্যবহৃত হবে ৮৭৬৫ টি ।২০,৩৮৫ টি ভি ভি পি এ টি ব্যবহৃত হবে।

ভোটার সংখ্যার বিচারে সবথেকে ছোট বিধানসভা কেন্দ্র হচ্ছে চাঁদনিচক। এখানে মোট ভোটার আছেন ১,২৫,৬৮৪ জন। অপরদিকে সবথেকে বড় বিধানসভা কেন্দ্র হচ্ছে মাতিয়ালা। এখানে মোট ভোটার আছেন ৪,২৩,৬৮২ জন ।

আম আদমি পার্টির প্রচারে অরবিন্দ কেজরিওয়ালই ছিলেন দলের মুখ্যমন্ত্রীর মুখ। অন্যদিকে দল ক্ষমতায় এলে বিজেপি’র মুখ্যমন্ত্রী কে হবেন এনিয়ে কোনও আগাম ঘোষণা দেওয়া হয় নি । একই অবস্থা কংগ্রেসেরও।

রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে প্রচারে হাড্ডা হাড্ডি লড়াই করেছে বিজেপি এবং আম আদমি পার্টি ।এই দুই দলই ভোটারদেরকে বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করার চেষ্টা করেছে । এই বিধানসভা নির্বাচনে ভোটের হার যথেষ্ট বেশি হবার সম্ভাবনা রয়েছে।
কেজরিওয়ালকে কমিশনের নোটিশ , গ্রেপ্তার সিসোদিয়ার ও এস ডি
সুপ্রিম কোর্টে ১০৩২৩ শিক্ষকের এসএলপি’র শুনানি ১৬ মার্চ

COMMENTS