ঘরবাড়ি চুরমার হয়েছে, পরিবারের আশি বছরের মা হেনস্তা হয়েছেন, আক্রান্ত হয়েছেন ভাইয়ের স্ত্রী, নিজে বাড়িতে ছিলেন না, ছিলেন না তার স্ত্রী সোমা দাস, বেঁচে গেছেন।
বাড়ি আক্রমণের কথা সামাজিক মাধ্যমে লিখতেই সেখানে মন্তব্য, উনার বাড়ি আক্রমণ হয়েছে, উনাকে পায়নি? উনাকে একটা দেওয়ার দরকার ছিল।
আরেকজন লিখেছেন, যেমন কর্ম, তেমন ফল।
ত্রিপুরায় কমলপুর মহকুমায় এই ঘটনা। দিনের আলোতে। বাড়ি আক্রান্ত হয়েছে যুক্তিবাদের পক্ষে আন্দোলন করা দুলাল ঘোষের। তিনি পেশায় ইঞ্জিনিয়ার। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি হিন্দু ধর্ম অবমাননা করেছেন, ‘গীতা’ নিয়ে কটূক্তি করেছেন সামাজিক মাধ্যমে।
পুলিশ দুলাল ঘোষের বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়েছে। দুলালের মা বাড়ি আক্রমণের কথা জানিয়ে থানায় অভিযোগ করেছেন, আক্রমণকারী দু’জনকে চিনতে পেরেছেন বলে জানিয়েছেন। পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করেনি।
যুক্তিবাদী কাজকর্ম , সামাজিক কারণে দাঁড়ানো, স্বামী-স্ত্রী দু’জনেই এইরকম কাজে আছেন বহু বছর ধরেই।
ত্রিপুরা এসব নতুন দেখছে। ধর্ম নিয়ে উগ্রতা অন্তত এ রাজ্যে ছিল না। কোনও ধর্মগ্রন্থ নিয়ে মন্তব্যের জেরে বাড়ি ভাঙচুর, এই সংস্কৃতি ত্রিপুরায় নতুন।
কমলপুর বিজেপি মণ্ডল সভাপতি শ্যামল পাল, দুলালের বিরুদ্ধে থানায় গেছেন। বিশ্ব হিন্দু পরিষদ দুলাল ঘোষের শাস্তি দাবি করে মিছিল করেছে।
দুলাল ঘোষের বিরুদ্ধে এফআইআর দাখিল করার কিছু সময় পরেই তার বাড়ি আক্রান্ত হয়। কমলপুর শহরে একটি বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করার জন্য পাঠাগার আছে। সেটিও লুট হয়েছে দুপুরেই।
মানবাধিকার কর্মী এবং আইনজীবী পুরুষোত্তম রায় বর্মন ত্রিপুরা হিউম্যান রাইটস অর্গানাইজেসন ( টিএইচআরও)-র পক্ষে বলেছেন, দুলাল ঘোষের বিরুদ্ধে যে পুলিশ অভিযোগ নিয়েছে, তা হাইকোর্টে চ্যালেঞ্জ করা হবে। “ দুলাল ঘোষের মন্তব্য কোনওভাবেই হিন্দু ধর্মকে অপমান করা নয়। গীতা কারও কাছে পবিত্র ধর্মগ্রন্থ, গীতা কারও কাছে অপূর্ব সুষমামন্ডিত কাব্যগ্রন্থ , আবার অনেকের কাছে ব্রাহ্মণ্যবাদীর বাইবেলসূত্র এবং দলিতদের চিরদিন পায়ের নীচে রাখার মগজাস্ত্র,” বলেছেন পুরুষোত্তম।
দুলাল বা সোমা কী কাজ করেন ! মানুষকে যুক্তিবাদী করে তুলতে চেষ্টা করেন। হাতে-কলমে কাজ করে কুসংস্কার, অলৌকিকতার ঠগবাজির বিরুদ্ধে বিজ্ঞানমনস্ক করে তুলতে চেষ্টা করেন। সোমা দাসের জনস্বার্থ মামলার ফলেই রাজধানী আগরতলায় বিভিন্ন জায়গায় পাব্লিক টয়লেট এখন আছে।
COMMENTS