লকডাউনে বাড়ির সীমানাই মাস্ক সপ !

ঘরে  স্বাভাবিক রোজগার বন্ধ। পরিস্থিতিতে  ছয় ক্লাস পড়ুয়া বাচ্চাও  এসেছে  রাস্তার  ধারে পরিবারের হাল ধরার কাজে। বাবা গ্রামে গ্রামে সাপ্তাহিক বাজার ঘুরে ঘুরে দর্জির কাজ করেন। মাস্ক তৈরি করছেন বাবা, মা আর ছেলেতে মিলে বাড়ির সীমানায় দাঁড়িয়ে বিক্রি করছেন। বাবা চেষ্টা করেছেন সামান্য আরও কিংবা অন্য কিছু  যদি সেলাই করা যায়।

আতঙ্কই যেন ভরসা রোজগারের !

ত্রিপুরার দক্ষিণ দিকে উদয়পুর থেকে কুড়ি কিলোমিটার বেশি দূরের গ্রাম মির্জা নোয়াপাড়ায় নারায়ণ দে’র  স্ত্রী-ছেলে সকাল-বিকাল  এখন দাঁড়ে ঝোলানো ‘দোকান’ নিয়ে বসছেন। প্রতিটি কুড়ি টাকা। কুড়িটি তারা আবার এমনিতেই দিয়েছেন, শহর থেকে  দাম দিয়ে সুবিধাজনক মাস্ক কেনা দূরে থাক, কুড়ি টাকা খরচের জো-ও অনেকের নেই যে !

নারায়ণ দে’র মত  পৃথিবীর অসংগঠিত শ্রমিকদের নব্বই শতাংশ থাকেন ভারতে ।

“ এই সঙ্কটে ৪০ কোটি মানুষ আরও দরিদ্রতায় জড়িয়ে পড়বেন। চলতি লকডাউন এই  সব শ্রমিকদের বিশেষ সঙ্কটে ঠেলে দিয়েছে,”  রাষ্ট্রসংঘের লেবার অর্গানাইসেন’র একটি  রিপোর্ট বলছে।

ইন্টারন্যাশনাল লেবার অর্গানাইসেন ( আইএলও)’র মতে দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের পর সবচেয়ে ভয়ঙ্কর বিশ্বব্যাপী এই সঙ্কটে ভারতে প্রায় ৪০ কোটি মানুষের মানুষের রোজগার ঝুঁকির মুখে পড়েছে।

রাষ্ট্রসংঘের লেবার অর্গানাইসেন কোভিদ-নাইন্টিন সংক্রমণে মানুষের কাজ হারানোর ভয়ঙ্কর ছবি সামনে এনেছে। রিপোর্টে বলা হয়েছে ,অসংগঠিত ক্ষেত্রে  কোটি কোটি মানুষ ইতোমধ্যেই কাজ হারিয়েছেন। আরও প্রায় কুড়ি কোটি মানুষের রোজগার নিয়ে ঝুঁকির মুখে।

বিশ্বের ক্ষেত্রে ১৯৫ মিলিয়ন, বা ২০ কোটির কিছু কম পূর্ণ সময়ের কর্মাচারীর রোজগার   ২০২০-র দ্বিতীয় কোয়ার্টারে ঝুঁকির মুখে পড়বে।

রাষ্ট্রসংঘের রিপোর্টে বলা হচ্ছে, উন্নয়নশীল অর্থনৈতিক অবস্থার দেশগুলিতে চাপ পড়বে সবচেয়ে বেশি।

“ ভারতে বিশ্বের  অসংগঠিত ক্ষেত্রের ৯০ শতাংশ শ্রমিক রয়েছেন। এই সঙ্কটে ৪০ কোটি মানুষ আরও দরিদ্রতায় জড়িয়ে পড়বেন। চলতি লকডাউন এই  সব শ্রমিকদের বিশেষ সঙ্কটে ঠেলে দিয়েছে।“ রিপোর্টটি বলছে।

বিশ্বে সাড়ে বারকোটি শ্রমিক মারাত্বক ঝুঁকিতে আছেন। মজুরি কমে যাওয়া, কাজের সময় কমে যাওয়া, ইত্যাদি সমস্যায় পড়তে হবে। অনেক শ্রমিকই কম মজুরি ও কম দক্ষতার কাজ করেন, তাদের আরও সমস্যা বাড়বে। হঠাৎআরও আয় কমে যাওয়ার ঝুঁকিতে আছেন।

আইএলও ডিরেক্টর গাই রাইডার বলেছেন,” আমাদের দ্রুত, একসাথে পদক্ষেপ নিতে হবে। সঠিক, জরুরি ব্যবস্থাই বাঁচা ও ধ্বংসের মধ্যে পার্থক্য গড়ে দিতে পারে।”

একটি অর্থনৈতিক অবস্থা ভেঙে পড়লে, তা সারা বিশ্বে প্রভাব ফেলবে। ৭৫ বছরের বেশি সময়ের মধ্যে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সবচেয়ে বড় পরীক্ষার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে।

আরব দেশগুলিতে ৮.১ শতাংশ , বা ৫০ লক্ষ পূর্ণ সময়ের শ্রমিক, ইউরোপে ৭.৮ শতাংশ বা ১২ লক্ষ এবং এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ৭.২ শতাংশ বা সাড়ে বার কোটি শ্রমিক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন।

থাকা ও খাওয়া পরিসেবা, উৎপাদন, খুচরা বিক্রি,ব্যবসা এবং প্রশাসনিক ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হতে পারে।

( আগরতলা, ত্রিপুরা )

COMMENTS