গুজরাটে মহিলা কনেস্টবল বিরক্ত হয়ে চাকরিতেই ইস্তফা দিলেন মন্ত্রীর ছেলে ও তার বন্ধুদের সাথে তর্কাতর্কিতে পড়ে !

গুজরাটে মহিলা কনেস্টবল বিরক্ত হয়ে  চাকরিতেই ইস্তফা দিলেন মন্ত্রীর ছেলে ও তার বন্ধুদের সাথে  তর্কাতর্কিতে পড়ে  !

সরকারী কাজ করছিলেন তিনি। আইন ভাঙার জন্য আটকে দেন কয়েকজনকে। তার ওপরওয়ালা বিষয়টি ধামাচাপা দিতে চেয়েছিলেন। বিরক্ত হয়ে চাকরিতেই ইস্তফা দিয়ে দেন ওই মহিলা কনেস্টবল। গুজরাটের ঘটনা। এরকম লিখেছে আহমেদাবাদ মিরর, ইন্ডিয়া টুডে, ইত্যাদি সংবাদ মাধ্যম।

বুধবার রাতে গুজরাটের সুরাটে রাস্তায় ডিউটিতে ছিলেন সুনীতা যাদব। নাইট কারফিউ ভেঙে গাড়িতে পাঁচজন ঘুরছিলেন। মুখে মাস্ক ছিল না। যখন তিনি তাদের আটকে, মাস্ক না থাকার কথা জিজ্ঞেস করেন, তারা যাদবকে নিজেরদের ক্ষমতার কথা বলেন, ।

একটি অডিও ক্লিপ ও একাধিক ভিডিও ভাইরাল হয়েছে সামাজিক মাধ্যমে।

ভিডিওতে  শোনা যাচ্ছে উপস্বাস্থ্যমন্ত্রীর কুমার কানাইয়ের ছেলে ও অন্যদের সাথে মহিলার তর্কাতর্কি হচ্ছে।

অডিওতে যাদব তিনি যে থানায় ছিলেন, তার ইন্সপেক্টরকে ফোন করে ঘটনার বর্ননায় বলছেন,পাঁচজনকে তিনি আটকে ছিলেন, তারা এমএলএ’র ছেলে প্রকাশকে ফোন করেছন,  প্রকাশ আসার পর তারা তাকে হুমকি দিচ্ছেন।
অভিযোগ যে প্রকাশ যাদবকে বলেছেন, তাদের যা ক্ষমতা তাতে সেখানেই তাকে ৩৬৫ দিন দাঁড় করিয়ে রাখতে পারেন। জবাবে যাদব বলেছেন, তিনি তাদের ক্রীতদাস না।
ভিডিওতে দেখা গেছে, কনেস্টবল ওই মন্ত্রীর সাথেও কথা বলছেন। কনেস্টবল ধন্যবাদও দিচ্ছেন তাকে।
যাদবের ওপরওয়ালা তাকে ওই জায়গা ছেড়ে চলে আসতে বলেন বলে খবর।

যাদব বিরক্ত হয়ে চাকরিতেই ইস্তফা দিয়েছেন।

 সুরাট পুলিশের সহকারী অধিকর্তা পি এল চৌধুরী বলেছেন, এই ঘটনায় তদন্তের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

মন্ত্রী কুমার কানাই বলেছেন, তার ছেলে সেসময় তার অসুস্থ শ্বশুরের জন্য হাসপাতালে যাচ্ছিলেন। তিনি করোনায় আক্রান্ত। সে সময় তার অবস্থা ভাল ছিল না।সুনীতা যাদব তার ছেলেকে জিজ্ঞেস করেছেন, গাড়িতে এমএলএ লেখা কেন। তার উচিৎ  ছিল, আমার ছেলে কী বলছে, তা বোঝার চেষ্টা করা।।

“আমি মনে করি, তারা দু’জনেই দু’জনকে আরও ভালভাবে বোঝার চেষ্টা করতে পারতেন,” বলেছেন কানাই।
লিখেছে ইন্ডিয়া টুডে শনিবারে, নিউজটি রবিবারে আপডেট হয়েছে। আহবেদাবাদ মিররও এরকম খবর করেছে। তারা লিখেছে বিভাগীয় তদন্ত শুরু হওয়ায় পর তিনি পদত্যাগ পত্র দিয়েছেন। দ্য স্ক্রলও লিখেছে, তার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হলে তিনি ইস্তফা দিয়েছেন বলে খবর।
 
এনডিটিভি রবিবারে লিখেছে, সুনীতা যাদবকে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সে বদলি করা হয়েছে।

আহমেদাবাদ মিরর, দ্য স্ক্রল, ইত্যাদি সংবাদ মাধ্যম সোমাবারেও খবর করেছে।
আহমেদাবাদ মিরর লিখেছে, সুনীতা যাদব ‘সিক লিভ’-এ গেছেন। রবিবারে তাকে পুলিশ সদর দফতরে ডেকে পাঠানো হয়েছিল, বিষয়টি জানতে। তারপর তিনি ‘সিক-লিভ’-এ গেছেন।
মন্ত্রীর ছেলে প্রকাশ ও তার দুই বন্ধু দুষন্ত জিভ্রাজ গোধানি এবং সঞ্জয় কাকদিয়াকে গ্রেফতার করা হয়েছিল, তাদের জামিনে ছাড়া হয়েছে।
সেই খবরেই লেখা হয়েছে, ‘লেডি সিংহম’ রুক্ষ ভাষায় কথা বলছেন বলেও একটি ভিডিও প্রকাশ হয়েছে।
প্রকাশ জামিনে বেরিয়ে এসে বলেছেন, ” এখন মানুষ বুঝতে পারবেন কী ভাষায় তিনি ব্যবহার করেছেন।”
মন্ত্রী কুমার কানাই বলেছেন মিররকে বলেছেন, ” সুনীতা যাদব ফোনে আমার সাথে কথা বলেছেন, আমি তাকে বলেছি আইনি ব্যবস্থা নিতে, কিন্তু অপমানকর ভাষা ব্যবহার না করতে। তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, প্রকাশ যে গাড়িটি চালাছিল, তার মালিক কে । আমি বলেছি, আমার । আমার ছেলের সেটি ব্যবহার করার অধিকার আছে।” তিনি দাবি করেছেন, তার ছেলে জোড়হাতে কথা বলছিলেন।
প্রকাশ সুনীতা যাদবকে ৩৬৫ দিন সেই জায়গায় পোস্টেড করার হুমকি দিয়েছেন কিনা। মন্ত্রী জবাব দিয়েছেন, ” তিনি আমার ছেলেকে ব্যাঙ্গ করে বলেছেন তাকে গান্ধীনগরে বদলি করে দিতে। তার জবাবে সে বলেছে, তারা তাকে বদলি করতে চান না তিনি সেখানেই থাকতে পারেন। ভিডিওতে এটি তার ( সুনীতা) সুবিধায় ব্যবহার করা হয়েছে।

দ্য উইক লিখেছে সোমবারে, গুজরাটের এখন কোভিডের এপিসেন্টার সুরাট। একজন মহিলা কনেস্টবল এবং উপমন্ত্রীর ছেলের মধ্যে মধ্যরাতের তর্কাতর্কির বিষয়টি থামছেই না । বিভিন্ন জায়গা থেকে এই আইন প্রয়োগকারীর প্রতি প্রচুর সমর্থন আসছে।
সামাজিক মাধ্যমে #i_support_sunita_yadav, #isupportsunitayadav and #Sunita.Yadav ট্রেন্ডিং হচ্ছে।
তিনি চাকরি থেকে ইস্তফা দিয়েছেন বলে খবর, কিন্তু তা গৃহীত হয়নি। সূত্র বলছে, এভাবে ইস্তফা গৃহীত হয় না, তার জন্য প্রক্রিয়া আছে।
তাকে যারা সামাজিক মাধ্যমে সমর্থন জানিয়েছেন তার মধ্যে আছেন, প্রাক্তন আইপিএস অফিসার ডি জি বনজারা, অভিনেত্রী স্বরা ভাস্কর।
বনজারা ট্যুইট করেছেন,আমি কনেস্টবলের থেকে বাজে এসপিদের দেখেছি। আমি এমন কনেস্টবলদের দেখেছি , সুযোগ পেলে তারা ভাল এসপি হতেন। আমি সুনীতা যাদবকে সমর্থন করি। তার সাহস এবং কর্তব্যপরায়নতাকে প্রশংসা করি। আইন যারা ভাঙেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে, তা সে যেই হোন।
স্বরা ভাস্কর লিখেছেন, কাজের জন্য তিনি পদোন্নতির যোগ্য। বদলে তাকে হতাশায় ইস্তফা দিতে হল । আমাদের দেশে সরকারী চাকুরেকে তার কাজ করার জন্য এই কি পুরস্কার ?
সাধারণের সমর্থন তিনি পাচ্ছেন। মহিলা উদ্যোগপতি রুজানা খামবাতা এবং সমাজকর্মী মীনাক্ষী জোসিও তাকে সমর্থন জানিয়েছেন।
একাধিক ভিডিও ভাইরাল হয়েছে।
দ্য উইক লিখেছে, একটি ভিডিওতে তিনি বলছেন, মন্ত্রীর ছেলে হলে আরও জরুরী কোভিড সময়ে আইন মানা।
ভিডিও তে বোঝা যাচ্ছে , তিনি হতাশ যখন তাকে ( সুনীতা) পুলিশ ইনস্পেক্টর ছেড়ে আসতে বলেছেন।
মন্ত্রীর ছেলে তাকে বলেছেন, আগেও অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে, তিনি আইন অমান্যকারীকে ওঠ-বোস করিয়েছেন। তার আগে তিনি বলেছেন, ৩৬৫ তাকে দাঁড় করিয়ে রাখবেন। মন্ত্রীর সাথে কথা বলেছেন তিনি, মন্ত্রী তাকে বলেছেন, ‘ফলো দ্য রুল।’
একটি ক্লিপে শোনা যাচ্ছে, তিনি গালাগাল দিয়ে বলছেন, তার হাত বাধা, তিনি চলে যাচ্ছেন। তাকে চলে যেতে বলা হয়েছে।
রবিবারে ট্যুইটারে সুনীতা লিখেছেন, ” আইন, আইনই। সবাইকেই তা অবশ্যই মানতে হবে !!!!!”

দিন দুয়েক আগে গুজরাটেই বিজেপি’র এক নেতা রাস্তায় গাড়ির বনেটে বিশাল কেক তলোয়ার দিয়ে কেটে জন্মদিন পালন করেন। তার বন্ধুরা মদ ছিটিয়ে জন্মদিন উদযাপন করেন। গুজরাটে মদ নিষিদ্ধ। তাছাড়া পার্টি করে দূরত্বের দফারফাও করেছেন।

তারা পার্টি করেছেন, লোকেরা দাঁড়িয়ে দেখেছেন।

COMMENTS