অভি, ভাই আমার, ভাই আমাদের, দীর্ঘ চুমু!

অভি, ভাই আমার, ভাই আমাদের, দীর্ঘ চুমু!

অভি, ভাই আমার, ভাই আমাদের, দীর্ঘ চুমু!
___________________________________

অভি, আমাদের ছোটভাই, ফটোজার্নালিস্ট দুপুরে মারা গেছেন। এটাই ঘটনা। বাস্তবতা নেই তাতে। তরতাজা বয়স চৌত্রিশের অভি কয়েকমিনিটে একেবারে ঠান্ডা হয়ে গেছেন। ঘটনা তাই, বাস্তবিক নয় তবে। এখন মানুষের গড় আয়ুর হিসেবেও না মেলা অঙ্ক। সেই অঙ্ক এখনও তার জন্য শুরুই হয়নি। ভুল হিসাব, চূড়ান্ত ভুল, এই অঙ্ক মিলিয়ে নেয়ার উপায় কিছু নেই।

অভি, সাবজেক্টের মাথা এত বড় হয়ে মাঝখানে! রুল অব থার্ডস! এই ভিডিও তোমার কোন্ বন্ধু তুলে দিয়েছেন!
অভি, সরকারের কাছে কী চান, প্রশ্নটির বাইরে আরও কিছু জিজ্ঞেস করা যায় তো!
অভি, এত দেরি কেন!

সব কথার জবাবে অভি বলে দিত, আগামীকালকা এক্টা স্টোরি দিমু!

পরশু রাতে অভি’র সাথে খুনসুটি।
—‘অভি বিয়া কবেরে!’
—‘বিয়া কর্তাম্না !’
দুপুরেই আজ শোনা গেল, অভির বিয়ের তোড়জোড় চলছিল। স্বাস্থ্য সুঠাম করতে আজ সকালেই একটি জিমনাসিয়ামে ভর্তি হবার কথা বলে এসেছেন।

আমরা চেয়েছিলাম, অভি ক্যামেরা করুক, খবর জোগাড় করুক, প্রশ্ন করুক ঠিকঠাক, তুলে আনুক নিটোল স্টোরি। করোনার দুপুরে ক্যামেরা রোলিং রাখুক। আমরা কম্প্যুটারে বসে রুল অব থার্ডস ধরে যাব। আরও বেশি কিছু হলে, দুপুরে সাটার টেপারও একটা স্টোরি না হয় লিখেই দেব।

দুপুরে তন্ময়ের ফোন, অভি মারা গেছে। প্লেন ভয়েজ, প্লেন টেক্সট! ফলে শুনতে কোনও অসুবিধা না হলেও, একাধিকবার জিজ্ঞেস করা, বলা কথাই আবার বলা এবং শোনা, বুঝতেও অসুবিধা হয় না। তবে বাস্তবিক নয় বলে, আমি আসছি বলা। আরও প্লেন ভয়েজে প্রশ্ন, তার কী হয়েছিল!

সাংবাদিকরা প্রত্যেকদিন এমন খবর শুনে থাকেন, লিখে থাকেন। পাশের ভাইটি মারা গেল, আমাদের বাস্তবতা, ঘটনা, এমন কথার ফাঁদে কোনওরকম যুক্তি না খোঁজার যথার্থতার মুখোশ আঁটা।

অভিকে দেখতে এসেছিলেন প্রধানত ক্যামেরার ছেলেরাই। সিনিয়র সাংবাদিক হাতে গোনাই এক/দু’জন। তার হাউজের বাইরে সিনিয়র সাংবাদিকদের তার বাড়িতে আমি অন্তত দেখতে পাইনি। পরে একজনকে দেখেছি।

অভিজিৎ রাহা আগরতলার বেশ কয়েকটি জায়গায় কাজ করেছেন। একটি স্যাটেলাইট চ্যানেলেও। চুপচাপ, ঠান্ডা, দৌড়ে থাকা ছেলে। বাড়িতে মা, বড়ভাই আর বৌদি। ছোট্ট বাড়ি, অতি নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবার।

অভির শেষযাত্রার সময় নিজের থেকে পালিয়ে যেতে চেয়েছি। রাকেশের বেলায়ও মিছিল শুরু হতেই পালিয়ে গেছি। প্রলয়দার সময় পালাতে না পেরে কোথাও খবরে নাম দেখেছি।

এই শহরের একজন খ্যাতনামা শিক্ষক বলছিলেন, এখন যা চাপ, এই দমবন্ধ চাপ নিয়ে কাজ করে যাওয়া সাংঘাতিক, মন থেকে শরীরে এই চাপ আসে হয়ত, দীপঙ্কর! একান্ত ব্যাক্তিগত নিভৃত আলাপ বলেই নাম তুলে রাখলাম।

আমি অভির কপালে একবার শেষবার একটি চুমো দিতে চেয়েছিলাম, অন্তত দু’বার এগিয়ে গিয়েও ফিরে এসেছি। গোপনে আমাদের এই স্থবিরতা অভি টের পায়নি।

অভি, ভাই আমার, ভাই আমাদের, দীর্ঘ চুমু!

COMMENTS