যাযাবর কিছু মানুষ ক্যাম্প ফেলেছেন ত্রিপুরা-আসাম সীমান্তের চোরাইবাড়িতে।
কাঠবেড়ালি, পাখি ধরেন তারা। তেমন কারণেই কদমতলা থানার তারকপুর এলাকায় গিয়েছিলেন তিনজন।
তাদের দেখে ‘ছেলে ধরা ( কুসুধরা)’ বলে লোকজন বলে তাদের মারপিট করেন। তবে সেই ‘জনতা’র মধ্যেই কেউ কেউ তাদের মারতে নিষেধ করেন, কিংবা কেউ কেউ ‘ মাইরা কিতা করতায়’ বলে মার-প্রিয়দের আটকানোর চেষ্টা করেন। ছেলেগুলি কাঠবিড়ালি, পাখি ধরতে এসেছে বলছিলেন, তবুও ‘মাইর না দিলে কতা বারৈত নায়’ বলার লোকও ছিলেন। শেষে তারা নিরাপত্তা বাহিনীর জওয়ানদের হাতে এসে পৌঁছান, তাদের সামনেই শেষ একবার লাথি মেরেই দেয়া হয়।
পুলিশ পরে খবরা-খবর নিয়ে ছেড়ে দেয় ছেলেদের।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।
তারকপুরে মারপিটে স্থানীয় প্রভাবশালী দুইজন জড়িত ছিলেন বলে শোনা গেছে।
উত্তর ত্রিপুরায় কয়েক বছর আগেও একবার ছেলেধরা গুজব রটেছিল। কৈলাশহরে মারাত্মক জখম হয়েছিলেন এক মহিলা।
বছর দুই আগের ঘটনা এখনও ফিকে হয়ে যায়নি।
ত্রিপুরার পশ্চিম জেলার মোহনপুরে দুই ভিনদেশই কাপড় ফিরিওয়ালাকে পিটিয়ে মেরেছিল মানুষ। নিরাপত্তা বাহিনীর ক্যাম্পে ঢুকেও নিস্তার পাননি। তাদের বাঁচাতে লাঠি চলেনি। সেই ঘটনা দুপুরের দিকে।
তার আগের রাতে পারিবারিক ঝমেলায় খুন হয় এক নাবালক। সেই ঘটনা থেকে গুজব ছড়ায় মানুষের ‘কিডনি’ চোর চক্র এসেছে রাজ্যে। নাবালকের শরীরে গভীর ক্ষত ছিল। এক জনপ্রতিনিধিও একটি ‘চক্র’র কথা বলেছিলেন।
দুপুরে সেই ঘটনার পর, গুজব আরও ছড়ায়। রাজ্যের একাধিক জায়গায় একাধিক খুন হয় সেদিন। কেউ কেউ অল্পেতে রক্ষা পান। দক্ষিণ ত্রিপুরায় এক শিল্পী গুজব বিরোধী ঘোষণায় বেরিয়ে খুন হয়ে যান গণপিটুনিতে। নির্মম সেই দৃশ্যও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছিল। পুলিশ ছিলেন, বিশেষ ভূমিকা দেখা যায়নি। এই খুনটি ছাড়া আর কোনও ক্ষেত্রে, প্রথম যেখানে হয়েছিল, মোহনপুরে এখন পর্যন্ত কেউ গ্রেফতার হয়েছেন বলে শোনা যায়নি।
সারা দেশেই গণপিটুনি এবং তাতে মৃত্যুর ঘটনা হচ্ছে। গত কয়েকবছরে তা বেড়েছে। গরু পাচারকারী বলে স্বঘোষিত গো-রক্ষকদের মারে মৃত্যু বেশ কিছু হয়েছে। আদালত এইগুলি আটকাতে কিছু নির্দেশিকাও দিয়েছিল। বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে মামলা পরিচালনায় পুলিশের ভূমিকা নিয়েও সারা দেশে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। পেহেলু খান’র বিষয়টি বিশেষ উল্লেখযোগ্য।
কিছুদিন আগে মহারাষ্ট্রের পালঘরে দুই সাধু মারে মারা গেছেন। এই ক্ষেত্রে কাজে অবহেলার জন্য বেশ কয়েকজন পুলিশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। কয়েকজনের চাকরিও গেছে।
ভারতবর্ষ, এত বড় দেশ, এই দেশে নিজের পাড়ার বাইরে নিরাপদ থাকবে না ?
COMMENTS