ডাক্তারসহ অনেকেই কোয়ারাইন্টাইনের মত আছেন ত্রিপুরায়। আউটব্রেকের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যাবে না। দরকার আরও উপকরণ।

ডাক্তারসহ অনেকেই কোয়ারাইন্টাইনের মত আছেন ত্রিপুরায়। আউটব্রেকের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যাবে না। দরকার আরও উপকরণ।

করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় নেমে ত্রিপুরায় এখন ষোলজন ডাক্তারসহ প্রায় পঞ্চাশজন স্বাস্থ্যকর্মী নিজেরাও কোরাইন্টাইনের মত অবস্থায় আছেন। কোয়ারাইন্টাইনে বা আইসোলেসনে  থাকা মানুষের সাথে তাদের পার্থক্য এই যে তারা চিকিৎসা দিতে ওইসব ওয়ার্ডে যাচ্ছেন, আর সেখান থেকে ফিরে আসছেন, অস্বাভাবিক এই পরিস্থিতে তাদের জন্য নির্দিষ্ট  ঘরে। নিজের পরিবারের কাছে যেতে পারছেন না।

ত্রিপুরার বিভিন্ন জায়গায় কোয়ারাইন্টাইন হাউজ খোলা হয়েছে, তবে যা খবর, এখনও আগরতলা ছাড়া জেলায় জেলায় এসব জায়গায় এখনও কেউ নেই। এখনও এই রাজ্যে আক্রান্তের খোঁজ পাওয়া যায়নি। প্রথম দিকে আগরতলায় আইজিএম হাসপাতালে কোয়ারাইন্টাইন কোয়ার্টার খোলা হয়েছিল, তবে সেটা গাইডলাইন অনুযায়ী না হওয়ায় তা সরিয়ে নেয়া হয়েছে একটি হস্টেলে। যাদের রাখা হবে প্রত্যেককে টয়লেটওয়ালা  নিজস্ব ঘরে থাকতে দিতে হবে।

বিদেশ থেকে আসাদের বাড়িতে কোয়ারাইন্টাইন করে রাখা হচ্ছে,তাদের  থেকেও  এখনও কারও অসুস্থতার কথা শোনা যায়নি। এমনকী আইসোলেসনে যাদের নেয়া হয়েছিল,তাদের কারও বেলাতেই ভাইরাসটি পাওয়া যায়নি।

ডাক্তার এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের নিজেরা যেন নিরাপদ থাকেন সংক্রমণ থেকে, তার জন্য পোষাক রয়েছে, সেগুলি একবার ব্যবহার  করেই নষ্ট করে ফেলতে হয়। সেরকম পোষাকের অভাব রয়েছে। বুধবারে হাজার দেড়েক এই স্যুট আসার কথা আগরতলায়, তবে সব মহকুমা, জেলা, ইত্যাদি ধরলে, আরও অনেক অনেক  দরকার। দরকার চিকিৎসার যন্ত্রপাতির। সুখের কথা,  এখনও এখানে চিহ্নিত আক্রান্ত কাউকে চিকিৎসা করতে হচ্ছে না, আবার কেউ নেই , তাও বলা যায় না।

লকডাউনের ফলে এখন বাইরে থেকে কেউ আর আসতে পারবেন না।  তবে ইতিমধ্যেই যদি কেউ যদি ভাইরাসটি নিয়ে ঢুকে থাকেন, এবং হাসপাতাল পর্যন্ত এসে পৌঁছালে তাকে চিকিৎসার জন্য শুধু ডাক্তার-নার্স নয়, অন্য স্বাস্থ্যকর্মীরও দরকার, সেই হিসেবে অ্যাম্বুলেন্স চালক থেকে ইলেক্ট্রিসিয়ান পর্যন্ত দরকার হতে পারে। তাদের সবার জন্য যেমন পার্সোনাল প্রটেকসন এইড দরকার, দরকার প্রশিক্ষণও, বলছিলেন অল ত্রিপুরা  গভর্মেন্ট ডক্ট্ররস অ্যাসোসিয়েসন’র( এটিজিডিএ)  জেনারেল সেক্রেটারি ডাক্তার রাজেশ চৌধুরি। “ধরুন,  আইসোলেসন ওয়ার্ডে হঠাৎ ইলেক্ট্রিক  ওয়্যরিং  খারাপ হয়ে গেল, তখন একজন ইলেক্ট্রিসিয়ানকে সেখানে এসে কাজটি করে দিতে হবে। সব ধরনের মেডিক্যাল ডিপার্ট্মেন্টের লোক ত থাকবেনই, গাড়ি চালক, টেকনিসিয়ান, প্রমুখদেরও  নিয়ে  টাস্ক ফোর্স করে নিলে, তারা এই বিশেষ দায়িত্বে থাকবেন, কাজটি ঠিকভাবে হবে।”   তিনিই জানিয়েছেন, ডাক্তারা ও অন্যরা যে কোয়ারাইন্টাইনের মত আছেন, কিংবা দেড় হাজার পোষাক  আসছে।

ডাক্তার চৌধুরি বললেন, অ্যাসোসিয়েসন অনেকগুলি প্রস্তাব সরাকারের কাছে দিয়েছে। তারমধ্যে যেমন ডাক্তারদের নিরাপদ থাকার বিষয় আছে, তেমনি একটি টাস্ক ফোর্স তৈরি করার কথাও আছে। আছে সব স্বাস্থ্যকর্মীর  জন্য করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় প্রশিক্ষণের প্রস্তাব, রাজ্যের দু’টি মেডিক্যাল কলেজের  সিনিয়র ডাক্তারদের নজরদারি,ইত্যাদির দায়িত্ব দেয়ার কথা। প্রতিটি জেলায় এখুনি ঠিকঠাক যন্ত্রপাতিসহ আইসিইউসহ আইসোলেসন’র সুবিধা করা।

তাছাড়াও, তাদের প্রস্তাবে, কারও মৃত্যু হলে, সৎকারের জন্য প্রশিক্ষণ দিয়ে কর্মী তৈরি রাখার কথা আছে। চিকিৎসায় যুক্তদের প্রত্যেকের জন্য ২৫ লক্ষ টাকার বীমার কথা আছে।

তবে তারা,  আউট পেসেন্ট ডোর এখন  বন্ধ করে দিতেও বলেছেন।  ফিভার ক্লিনিক চালু করতে বলেছেন কিছু কিছু জায়গায়।

 

ত্রিপুরায় করোনা ভাইরাস আউটব্রেক হলে , কতটা সামাল দেয়া যাবে ?

করোনা ভাইরাস আক্রান্তদের ভেন্টিলেটরের দরকার লাগতে পারে। জিবিপি হাসপাতালে আইসিইউ, ফ্লু ওয়ার্ড, এন্থেসিয়া  ওয়ার্ড, ইত্যাদি মিলিয়ে যা আছে, তাতে দশটি মেশিন  করোনার জন্য ব্যবস্থা করা যেতে পারে। আর কয়েকটি অন্যান্য রোগীদের জন্য থেকে যাবে। চেষ্টা হচ্ছে,  এন্সথেসিয়া ওয়ার্ডের অন্যান্য রোগীদের জন্য কয়েকটি ভেন্টিলেটর রেখে , মেডিসিন আইসিইউটি করোনা আক্রান্তদের জন্য রেখে দেয়ার, আর যাদের ভেন্টিলেটর দরকার হবে না , তাদেরকে ভগৎ সিং যুব আবাসে রেখে  চিকিৎসা করা হবে।  আক্রান্তদের মধ্যে দশ শতাংশে জন্য ভেন্টিলেটর দরকার হতে পারে, বললেন ডাক্তার চৌধুরি। তিনিই জানালেন, এখন নতুন করে মেশিন কিনে এনে, বসানোর সুযোগ নেই। এটিজিডিএ সেক্রেটারি বলেছেন, বেসরকারি আইএলএস হস্পিটালের একটি আইসিইউকে এই কাজে ব্যবহার করার জন্য বলা হয়েছে।

 

ডাক্তার চোধুরির সাথে কথায় যতদূর বোঝা গেছে, এখন বিশেষ প্রয়োজন, ডাক্তার-নার্স-অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য নিজেদের রক্ষা করার প্রচুর উপকরণ, যার অভাব আছে। দরকার খুব তাড়াতাড়ি একটি টাস্কফোর্স করে রাখা খারাপ পরিস্থিতির জন্য। দরকার প্রশিক্ষণেরও। আর ভেন্টিলেটর, ইত্যাদি পরিকাঠামো যা আছে, সেটা দিয়েই চালাতে হবে।

 

একটি জেলা হাসপাতালের এক ডাক্তার নাম না বলার শর্তে বলেছেন, এখনই আরও উপকরণ দরকার। স্বাস্থ্যকর্মীরা  ভয়ে ভয়ে   কাজ করে গেলে , সমস্যা তৈরি হতে পারে। তিনিই বললেন, অ্যালকোহলযুক্ত স্যানিটাইজার দিয়ে বারে বারে হাত পরিস্কার কথা পরামর্শ দেয়া হচ্ছে, কিন্তু দোকানে দোকানে স্যানিটাইজার মিলছে না,ফলে মানুষ ইচ্ছা করলেও ঠিকঠাক ব্যবস্থা নিতে পারছেন না। তার কথায় এই ‘ইচ্ছাওয়ালা’ মানুষের সংখ্যা খুব বেশি না, যদি সবাই স্যানিটাইজার কিনতে চাইতেন, তবে  কী হত! এখন যদি কেউ আক্রান্ত হয়ে পড়েন, তাকে যেতে হবে আগরতলায়, জেলায়-মহকুমায় উপযুক্ত চিকিৎসা ব্যবস্থা নেই।

 

 

ত্রিপুরায় আউটব্রেকের সম্ভাবনা কতটুকু ? ডাক্তার চৌধুরি বলেছেন, সম্ভাবনা আছে। এখন লকডাউন শুরু হয়েছে, এখন কেউ আসবেন না। ফলে  অন্তত দুই সপ্তাহ পরেই বোঝা যাবে, কী হচ্ছে। যদি পরিস্থিতি সত্যিই খারাপ হয়, তখন হাসপাতালে হয়ত শুধু জ্রুরি পরিষেবা চালু রেখে, বাকী সব বন্ধ করে দিতে হবে এই রোগ সামলাতে।

ত্রিপুরার বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রচুর মানুষ বিদেশে , বিশেষত মধ্যপ্রাচ্যে থাকেন কাজের জন্য। তাদের অনেকেই ফিরে এসেছেন। ইউরোপ-আমেরিকা থেকেও ফিরেছেন অনেকে। আর ভারতের করোনা আক্রান্ত বিভিন্ন রাজ্য থেকে ছাত্র থেকে শুরু করে ইঞ্জিনিয়ার, প্রচুর ফিরে এসেছেন। ইতালি ফেরত একজনকে কোয়ারাইন্টাইন করতে হিমসিম খেতে হয়েছে স্বাস্থ্যকর্মী, পুলিশকে। আবার উদয়পুরে কয়েকজনকে বাড়িতে থাকতে বলা হয়েছিল, তাদের এখানে-সেখানে ঘোরাঘুরি করতে দেখা যাওয়ায় পুলিশকে  জানানো হয়েছে ব্যবস্থা করার। তাদের কথা জানা গেছে, জানা যায়নি, এমন লোকও থেকে যেতে পারেন। ত্রিপুরায় ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত বিশাল লম্বা, সেই সীমান্তের কোনওদিকে কেউ এসে পরতেই পারেন। দিন কয়েক আগেও আসার সময় আটক হয়েছিলেন, একসঙ্গে দশ /এগারো জন। সেই সীমান্ত দিয়ে বিদেশ( বাংলাদেশ নয়)  থেকে বাংলাদেশে ত্রিপুরায়  ঢুকে পরলে, তাদের কোনও হিসাবই কোথাও লেখা নেই। শুধু আগরতলা চেকপোস্ট দিয়েই অনেক অনেক মানুষ ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে গেছেন বাংলাদেশ থেকে , বা বাংলাদেশ হয়ে। হাসপাতালে এখনও জ্বরের রোগীরা একই সাথে অন্যরোগীদের পাশেই থাকেন আউট-ডোরে।  এই সব বিষয় দুশ্চিন্তা বাড়ায়।

ভারতে এখনও করোনা সংক্রমণ তৃতীয় স্তরে , মানে  যেখানে কম্যুনিটিতে ঢুকে  পড়ে ভাইরাসের উপস্থিতি, নেই। এইটা পরিসংখ্যান হিসেবে সান্ত্বনা হিসেবে মনে করা যেতে পারে।

COMMENTS