বাড়ি থেকে যারা কাজ করছেন, তাদের নজরদারিতে রাখছেন মালিক, ডিজিটাল সার্ভিলেন্সকে কাজে লাগিয়ে।

বাড়ি থেকে যারা কাজ করছেন, তাদের নজরদারিতে রাখছেন মালিক, ডিজিটাল সার্ভিলেন্সকে কাজে লাগিয়ে।

বাড়ি থেকে যারা কাজ করছেন, তাদের নজরদারিতে রাখছেন মালিক। ডিজিটাল সার্ভিলেন্সকে কাজে লাগিয়ে তাদের সব কিছুই এখন অফিসের তালুবন্দী।

কোভিড সময় বাধ্য করেছে অনেককেই বাড়িতে থাকতে, সেখান থেকেই কাজ করছেন। আর এই সময়ে মালিক তাদের পেছনে ডিজিটাল গোয়েন্দা লাগিয়ে রেখেছেন।

একটি সফটঅয়্যার কারও মাউসের নাড়াচাড়া, কীবোর্ডে আঙুল চালানো, কোন্ কোন্ ওয়েবসাইট তিনি দেখছেন, কী ইমেল পড়ছেন, ইত্যাদি সব টুকে নিতে পারে। আরেকটি সফটঅয়্যার প্রতি দশ মিনিটে একবার করে ছবি তুলে পাঠিয়ে দিচ্ছে। এই সব সফটঅয়্যার কর্মীদের স্মার্টফোনে কিংবা ল্যাপটপে চালু করতে বাধ্য করা হচ্ছে কর্মীদের।
বাড়িতে কাজ করার সব কিছুই এভাবে নজরদারিতে চলে আসায় সবচেয়ে বিপজ্জনক হচ্ছে, কারও আর ব্যাক্তিগত বলে কিছু থাকছে না। পরিবারে ঢুকে যাচ্ছে অফিস।
কেউ হয়ত রান্নাঘরের কোনায় বসে কাজ করছেন, কেউ বেডরুমে, সবটাই খোলামেলা হয়ে যাচ্ছে।
কেউ উঠে টয়লেটে গেলেন, মিনিট খানেক কীবোর্ডে কাজ না করলেই, সফটঅয়্যার ডেকে বলছে, আর ষাট সেকেন্ড, কাজ শুরু না হলে, সিস্টেম বন্ধ হয়ে যাবে।
এইসব সফটঅয়্যারের বিক্রি হু হু করে বেড়ে গেছে।
কোথাও কোথাও আবার গোপন সফটঅয়্যার ঢুকিয়ে দেয়া হচ্ছে, কর্মী জানেনই না তার কী কী বিষয় অন্যখানে চলে যাচ্ছে।

আমেরিকায় এই অতিমারিতে প্রায় ৪২ শতাংশ মানুষই বাড়ি থেকে কাজ করছেন। ‘ঢিলেমি’ আটকাতে নাকি এইসব ব্যবস্থা।

বেশ কয়েকটি কোম্পানি যারা এইসব সফটঅয়্যার, ইত্যাদি তৈরি করে, তাদের বিক্রি এই সময়ে তিনগুণ হয়ে গেছে।

আমেরিকায় এই রকম গুপ্তচরগিরি আইনতই করা যায়। তবে কোনও কোনও রাজ্যের নিয়ম হচ্ছে, কর্মীকে জানাতে হবে, তার কী গতিবিধি নজরে রাখা হচ্ছে। কিন্তু বাস্তবে সেসব নিয়মের বালাই নেই।
তাছাড়া এইসব বিষয়ে আধুনিক আইনও নেই, সেই ১৯৮৬ সালের আইনে চলছে। তখন যোগাযোগ প্রযুক্তি এত উন্নতই ছিল না। ডেস্কটপ কম্পিউটার মাত্রই শুরু হয়েছে, স্মার্টফোন ছিলই না।
কোনও কোনও অফিস এক সহকর্মীদের মধ্যে কী কথা হচ্ছে, তাও পুরোপুরি নজরে রাখে।
আমাজন, ওয়ালমার্ট তো স্বাস্থ্যের খবর নিতে গিয়ে শরীরের তাপমাত্রা, ইত্যাদি সবই দেখে। অতিমারি সময়ে স্বাস্থ্যের এমন খোঁজ প্রয়োজনীয় মনে হলেও,তার সীমারেখা কোথায়, তার ঠিক করার কোনও আইনি নিরাপত্তা নেই কর্মীদের কাছে।
চাকরি যাওয়ার ভয়ে কেউ মুখ খুলতে চান না। নজরদারির ভয়ে সহকর্মীদের মধ্যে যোগাযোগ গড়ে ওঠে না। ফলে কাজের পরিবেশ যান্ত্রিক এবং অমানবিক, অস্বাস্থ্যকর, অস্বাভাবিক হয়ে উঠছে।
শ্রমিক সংগঠনগুলিও এই ব্যাপারে ঢিলে, একটি ইউনিয়ন, ইলেক্ট্রিক্যাল, রেডিও, এণ্ড ম্যান্টিনেন্স ওয়ার্কার্স অব আমেরিকা এইসব বন্ধ করার জন্য লড়াই চালাচ্ছে।
তারা এই দাবিও তুলেছে যে কর্মীরা বাড়ি থেকে কাজ করেন, অফিসের কাজে তা ব্যবহার করেন, তার জন্য অফিস যেন টাকা দেয় কর্মীদের।
অফিসেরই দায়িত্ব নিরাপদ, সুবিধাজনক কাজের জায়গার ব্যবস্থা করা।
অনেক কোম্পানি চাইছে, তাদের কর্মীদের একটা বড় অংশই যেন সব সময়ের জন্যই বাড়ি থেকেই কাজ করেন।
বিশ্বের সবচেয়ে বড় কল-সেন্টার কোম্পানি, টেলিপারফর্মেন্স মনে করে, তাদের দেড় লাখ কর্মী আর অফিসে আসবেন না। বাড়ি থেকেই কাজ করবেন।
কাজের ভবিষ্যৎ ভিষণ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে, ইউনিয়নগুলিকে দেখতে হবে এই নিউ-নর্মালকে ব্যবসায়ীরা অন্যায়ভাবে ব্যবহার না করেন। ব্যক্তিগত বিষয়কে অন্যায়ভাবে ব্যবহার করা বন্ধ করতে হবে। গুপ্তচরগিরি যেমন বন্ধ করতে হবে, তেমনি বাড়ি থেকে কাজ করিয়ে প্রজেক্ট প্রতি টাকা দেয়ার বৈষম্য বন্ধ করতে হবে, বলেছেন এক প্রযুক্তি কর্মী।

তথ্য-সূত্রঃ নিউজক্লিক

COMMENTS