ত্রিপুরায় বেড়েছে নবজাতক,শিশু মৃত্যুর হার, স্বাস্থ্য মন্ত্রক’র সমীক্ষা বলছে।

ত্রিপুরায় বেড়েছে নবজাতক,শিশু মৃত্যুর হার, স্বাস্থ্য মন্ত্রক’র সমীক্ষা বলছে।

ত্রিপুরায় শিশু মৃত্যু হার, নবজাতক মৃত্যু হার প্রায় দশ শতাংশ করে বেড়ে গেছে। স্বাস্থ্যবীমায় থাকা মানুষের সংখ্যা কমেছে অনেকখানি। শিশু এবং প্রাপ্ত বয়সীদের রক্তাল্পতা বেড়েছে। আইনসম্মত বিয়ের বয়স হওয়ার আগে বিয়ে হওয়া নারী-পুরুষের সংখ্যা বেড়েছে। বয়:সন্ধি  সময়ে মেয়েদের প্রজনন হার বেড়েছে। প্রতি এক হাজার পুরুষে নারীর সংখ্যা বেড়েছে।

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রক, ২০১৯-২০ বছরের জাতীয় পরিবার স্বাস্থ্য সমীক্ষা প্রকাশ করেছে। ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব পপুলেসন সায়েন্সেস ত্রিপুরায় এই সমীক্ষা করেছে গতবছরের জুলাই-নভেম্বরে।
২০১৫-১৬ সালের এই সমীক্ষার সাথে তুলনায় শিশু মৃত্যু, ইত্যাদি হারের বাড়া-কমা হিসাব দেখানো হয়েছে শেষ সমীক্ষায়।
২০১৯-২০ সমীক্ষায় নতুন কিছু বিষয়ও যোগ করা হয়েছে, যেমন প্রাক প্রাথমিক শিক্ষা, শৌচাগারের সুবিধা, ঋতু সময়ে স্নান করার অভ্যাস,ইত্যাদি আগের সমীক্ষায় ছিল না।
দ্য ন্যাসনাল ফ্যামিলি হেলথ সার্ভে ( এনএফএইচএস-ফাইভ), এই নিয়ে এরকম সমীক্ষা পাঁচটি হল।
সারা দেশের জনসংখ্যা, স্বাস্থ্য এবং পুষ্টি, ইত্যাদি তথ্য পাওয়া যায় এই সমীক্ষা থেকে। রাজ্য অনুযায়ী তো বটেই, জেলা ভিত্তিক তথ্যও পাওয়া যায়।

শেষ সমীক্ষায় ত্রিপুরায় নবজাতকের মৃত্যু হার প্রতি হাজারে ২২.৯ জন, সেটি ২০১৫-১৬ সালে ছিল ১৩.২ । শহরে এখন এই মৃত্যু-হার ১৩.৯ , গ্রামে ২৫.৫ । হাজারে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে গেল, ৯.৭ জন । শিশু মৃত্যুর হার শহরে প্রতি এক হাজারে ২৩.২ জন , গ্রামে ৪১.৮ , সব মিলিয়ে ৩৭.৬ , ২০১৫-১৬ সালে ছিল ২৬.৭ জন। বাড়ল ১০.৯ জন।পাঁচ বছরের কম শিশু মৃত্যুর হার এখন ৪৩.৩, সেটা আগের সমীক্ষায় ছিল ৩২.৭ ।

দেশে এই তিন বিষয়ে হার সবচেয়ে কম কেরালায়, কেরালায় নবজাতকের মৃত্যু হার প্রতি একহাজারে ৩.৪ জন, গত সমীক্ষায় ছিল ৪.৪ জন।
শিশু মৃত্যু হার এই সমীক্ষায় ৪.৪ জন, ২০১৫-১৬ সালে ছিল ৫.৬ জন।
পাঁচ বছরের শিশুদের ক্ষেত্রে এই হার আগের বার কেরালায় ছিল ৭.১ জন, এখন ৫.২ জন।

বাড়িতে কারও স্বাস্থ্যবীমা আছে, কিংবা অন্য কোনও আর্থিক প্রকল্পের আওতাধীন এমন বাড়ির সংখ্যা ৫৮.১ শতাংশ থেকে কমে দাঁড়িয়েছে ৩৩ শতাংশে। ২০১৫-১৬ সালে মোট পরিবারের অর্ধেকের বেশি ছিল, এখন তিন ভাগের এক ভাগ। গর্ভবতী মায়েদের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে অন্তত চারবার দেখাবার হারও কমেছে, ৬৪.৩ থেকে নেমে দাড়িয়েছে ৫২.৭ শতাংশে।
সমীক্ষার ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, এই কমে যাওয়া নানা কারণে হতে পারে, নতুন হওয়া জেলার জনসংখ্যার গঠনগত পরিবর্তন একটি কারণ হতে পারে।
পাঁচ বছরের কম শিশুদের চিকিৎসা নিয়ে সমীক্ষায় বেরিয়ে এসেছে যে, সমীক্ষা করার সময়ের আগে দুই সপ্তাহে ডাইরিয়া ছিল ৬.২ শতাংশ শিশুর, আগের সমীক্ষায় সেই সংখ্যা ৪.৯ শতাংশ। এই শিশুদের ওআরএস পেয়েছে ৬৭.২ শতাংশ, আগের ক্ষেত্রে সেটি ৪৬.৩ শতাংশ। সেই শিশুদের জিঙ্ক পেয়েছে ১৬.৭ শতাংশ, আগের বারের সংখ্যা ১৯.১ শতাংশ। হাসপাতালে নেয়া হয়েছে একশজনে ৬৩.১ জনকে, ২০১৫-১৬ সমীক্ষায় সেই সংখ্যা ৬৫.৭ শতাংশ। জ্বর ও শ্বাস কষ্ট নিয়ে ৬৪.২ শতাংশ শিশুকে হাসপাতালে বা স্বাস্থ্যকর্মীর কাছে নিয়ে যাওয়া হয়েছে,সেই সংখ্যা আগের বার ছিল ৭৩ শতাংশ, প্রায় ৯ শতাংশ কমেছে।

তিন বছরের শিশুদের ক্ষেত্রে জন্মের এক ঘন্টার মধ্যে মায়ের দুধ দেয়া হয়েছে ৩৫.৯ শতাংশ শিশুকে, সেটাই আগে ছিল ৩৬.৪ শতাংশ। পাঁচ বছরের কম বয়সের শিশু স্বাভাবিকের থেকে কম ওজনের ২৮.৩ শতাংশ, আগে তা ছিল, ২৫.৬ শতাংশ।

নারী-পুরুষের স্বাবাভিক বডি-মাস-ইন্ডেক্স বা বিএমআই সামান্য পরিমানে কমেছে, কমেছে অতিরিক্ত ওজনের হারও।

শিশুদের রক্তাল্পতার পরিসংখ্যানে, ছয় থেকে ঊনষাট মাস বয়সের শিশুদের রক্তাল্পতার হার বেড়েছে, ৬৪.৩ থেকে ৬৬.৫ শতাংশ হয়েছে।
পনের থেকে ঊনপঞ্চাশ বয়সের মহিলাদের রক্তাল্পতার হার ৬৭.৯ থেকে বেড়ে ৬৯.৮ শতাংশ হয়েছে।
নারী-পুরুষের বাড়তি রক্তচাপ থাকার হার সামান্য কমেছে।

এইচআইভি/এআইডিএস নিয়ে পনের থেকে ঊনপঞ্চাশ বছরের নারীদের মধ্যে যথেষ্ট ধারনা আছে এখন ১৫.৪ শতাংশের, আগে এই সংখ্যা ছিল ২৮ শতাংশের। পুরুষের জন্য এই সংখ্যা এখন ৩০ শতাংশ, আগে ছিল ৩৬.৮ শতাংশ। দুই ক্ষেত্রেই কমেছে সচেতনতা। কন্ডোম ব্যবহারে এইচআইভি/ এআইডিএস হওয়ার ঝুঁকি কমে, এই বিষয়টি জানেন ৫৯.৫ শতাংশ নারী, আগে জানতেন ৫৭.৬ শতাংশ। পুরুষদের জন্য এই হার ৮৫.৩ শতাংশ, আগে ছিল ৮১.৫ শতাংশ।

নারী ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে দেখা গেছে, সমীক্ষা সময়ের আগের ১২ মাসে যে মহিলারা কাজ করেছেন, এবং নগদে পারিশ্রমিক পেয়েছেন, সেই সংখ্যা ২৩.১ শতাংশ, আগে ছিল ২৬.৩ শতাংশ। বাড়ি অথবা জমি নিজের নামে, অথবা অন্যদের সাথে যৌথভাবে আছে এমন মহিলার সংখ্যা প্রচুর কমেছে, আগে ছিল, ৫৭.৩ শতাংশ, এখন সেই সংখ্যা ১৭.২ শতাংশ।
আঠার থেকে ঊনপঞ্চাশ বছরের মহিলা, যাদের গার্হস্থ হিংসার অভিজ্ঞতা রয়েছে, সেই সংখ্যা ২০.৭ শতাংশ, আগে ছিল ২৮.১ শতাংশ।
আঠার থেকে ঊনত্রিশ বয়সের মহিলা, যারা যৌন হিংসার শিকার, সেই সংখ্যা এখন ৭ শতাংশ, আগে ছিল ১০.২ শতাংশ।

কম বয়সে বিয়ের হার বেড়েছে। আঠার বছরের আগেই বিয়ে হয়েছে, কুড়ি থেকে চব্বিশ বছরের মেয়ের সংখ্যা ৪০.১ শতাংশ, আগে ছিল ৩৩.১ শতাংশ। একুশ বছর হওয়ার আগেই বিয়ে হয়েছে, এমন পঁচিশ থেকে ঊনত্রিশ বছরের পুরুষের সংখ্যা ২০.৪ শতাংশ, আগে ছিল ১৬.২ শতাংশ।
পনের থেকে ঊনিশ বছরের মেয়ে, যারা ইতিমধ্যেই মা হয়েছেন, বা গর্ভবতী, সেই সংখ্যা এখন ২১.৯ শতাংশ, আগে ছিল ১৮.৮ শতাংশ। এই বয়সে প্রজনন বেড়েছে, আগে ছিল ৮২ শতাংশ, এখন তা ৯১ শতাংশ।

 

ন্যাসনাল হেলথ মিসন’র ত্রিপুরা চ্যাপ্টারের অধিকর্তা  বলেছেন, রিপোর্ট তারাও দেখেছেন, এখন বিশ্লেষন করে দেখছেন, কোথাও ত্রুটি আছে। ” আমরা প্রইয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব। কোথাও কী হয়েছে, তা দেখছি। কয়েকটি দফতরকে একসাথে নিয়ে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। কেন এমন হল, একেবারে নির্দিষ্ট করে এখনই বলা যাচ্ছে না।”

” অনেকগুলি কারণই থাকতে পারে। অর্থনৈতিক, সামাজিক-সাংস্কৃতিক, নানা কারণই থাকতে পারে। ছোট কথায়, মা’র স্বাস্থ্য ভাল থাকলে, শিশুও ভাল থাকবে। গর্ভবস্থায় ভাল খেতে পেয়েছেন কিনা, তার কাছে পয়সা ছিল না, চলতি স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় বিশ্বাস আছে কিনা, ইত্যাদি নানা বিষয় থাকতে পারে,” বলেছেন ডাঃ শিবশঙ্কর জয়সওয়াল। তিনিই ত্রিপুরায় এনএইচএম ডিরেক্টর।

COMMENTS