ত্রিপুরায় বিরোধী সিপিআই(এম)’র অফিস, কর্মী- সমর্থকরা প্রায় প্রত্যেকদিনই আক্রান্ত হচ্ছেন, রক্তদান শিবিরও। অভিযোগ সরাসরি শাসক বিজেপি জোটের দিকে, বিরোধী দলের। সিপিআই(এম)’র ভেতরের ঝামেলা এগুলি, বিজেপি বলে।
শাসক দল, বিজেপি এবং আইপিএফটি, দুই শরিক দলের লাগালাগির ফসলে ৯ জুলাই ত্রিপুরা উপজাতি স্বশাসিত জেলা পরিষদের সদর দফতর খুমুলুঙে বনধ্ করেছে আইপিএফটি।
কিছুদিন হল তাদের গণ্ডগোল চলছে।
কয়েকদিন আগে টাকারজলায় আক্রমণের কারণে আগরতলা থেকে বিজেপি নেতারা গিয়ে পুলিশের কাছে ক্ষোভ ঢেলেছেন। নিজেদের কর্মী-সমর্থকদের নিরাপত্তার জন্য বলেছেন।
খুমুলুঙে বনধ্-র আগে একদিন বিজেপি’র মিটিঙ ছিল হলে, রাস্তায় শো-ডাউন। তার জেরে একজন আইপিএফটি কর্মী গ্রেফতার, এবং তার জন্য বনধ্।
বনধ্-র দিনে আইপিএফটি বিধায়ক বৃষকেতু দেববর্মা বিজেপি’র ওপর রাগ ঝেড়েছেন।
বিজেপি’র জাতীয় নেতা রাম মাধব এসেছিলেন আগরতলায়। আইপিএফটি’র সাথে বসেছিলেন। ‘জুনিয়র পার্টনার’ আইপিএফটি’র সাথে আলোচনার বিষয়ে সাংবাদিকদের বলেছেন, সামান্য পার্থক্য, গুরুতর কিছু নয় এবং তাদের পরামর্শ দেয়ার কথা।
আইপিএফটি তারপর রাম মাধব’র সাথে কথা নিয়ে সাংবাদিক সম্মেলনে বলেছে। বিজেপি’র কয়েকজন নেতার কথায় তাদের আপত্তি, সেরকম না বলার প্রতিশ্রুতি পাওয়ার কথা বলেছে। আইপিএফটিও বিজেপি’র সাথে বড় কোনও বিরোধের কথা বলেনি। ‘ ক্লোজ-ক্লোজার-কোজেস্ট’ হবার কথা সাংবাদিক সম্মেলনে ছিল।
ত্রিপুরা স্বশাসিত উপজাতি জেলা পরিষদ’র নির্বাচন করোনা পরিস্থিতির জন্য আটকে আছে।
আইপিএফটি দাবি করেছে, ২০১৮ বিধানসভা নির্বাচনের আগে তাদের সাথে বিজেপি’র লিখিত বোঝাপড়া হয়েছে, বিধানসভায় বিজেপি বেশি আসন নেবে, জেলা পরিষদে আইপিএফটি।
রাম মাধব বলেছেন নির্বাচন এলে বিজেপি রাজ্য নেতৃত্ব আইপিএফটির সাথে বিষয়টি দেখবেন।
একসাথে ঘরে আলোচনা, একসাথে সরকার পরিচালনা, আর মাঠে
লাগালাগি এতটাই যে পূর্ব ত্রিপুরার সাংসদ রেবতী ত্রিপুরা নিজেই সংবাদমাধ্যমে বলেছেন, খোয়াইয়ে পোলিস সুপার, অ্যাডিশনাল পোলিস সুপারের সামনেই তারা আক্রমণের সামনে পড়েছেন।
সাংসদ রেবতী ত্রিপুরা, বিধায়ক রামপদ জমাতিয়া, বিধায়ক পিনাকী দাস চৌধুরী ও অন্যান্যরা খোয়াইয় জেলার তুলাশিখরে তাদের এক আক্রান্ত বিস্তারকের বাড়ি যাচ্ছিলেন মঙ্গলবারে। তুলাশিখর বাজারে আইপিএফটি অফিস থেকে যুবকরা এই বিজেপি দলের লোকদের আক্রমণ করেন। ঊষারঞ্জন দেববর্মা নামে একজন গুরুতর আহত হয়েছেন, বলেছেন সাংসদ। তবে তার নিজের কিংবা বিধায়কদের কারও আঘাত লাগেনি।
ঊষারঞ্জনের মাথায় সেলাই লেগেছে বলে খবর।
সাংসদের ফোন পেয়ে এসপিসহ খোয়াই পুলিশের বড়-ছোট অফিসাররা তুলাশিখরে হাজির হন।
বিস্তারকের বাড়ি থেকে যখন তারা ফিরছিলেন,” আমাদের দিকে ওই পার্টি অফিসের সামনে ও আরও দু/একটি জায়গায় জড়ো হয়ে থাকারা সেখান থেকে বোতল, ইট-পাটকেল ছোঁড়েন এসপি, অ্যাডিসনাল এসপি, এসডিপিও-দের সামনেই,” বলেছেন রেবতী।
তিনি বলেছেন, এগুলি প্রশ্রয় দিলে শান্তি-সম্প্রীতি থাকবে না।
পুলিশকে কয়েকজনের নাম দিয়েছেন। তাদের নামে আগেও বেআইনি কাজ করার অভিযোগ আছে।
এমনকী তাদের বিরুদ্ধে সরকারি অফিসারদের থেকে কমিসন দাবি করারও অভিযোগ তার।
“কয়েকজনকে চিহ্নিত করতে পেরেছি, তারা আইপিএফটি দলের,” মন্তব্য সাংসদের।
তিনি এও বলেছেন, আমাদের জেনারেল সেক্রেটারি রাম মাধজীকে তারা ( আইপিএফটি) প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, আমাদের সাথে ভাল ব্যবহার করার।
আইপিএফটি’র যে বিজেপি নেতাদের মন্তব্য নিয়ে আপত্তি, তার মধ্যে পূর্ব ত্রিপুরার সাংসদ রেবতী ত্রিপুরাও আছেন। খুমুলুঙে একটি মিটিঙে তিনি বলেছিলেন, বিজেপি’র ৩৬ জন বিধায়ক আছেন,কারও সাহায্য একাই পাঁচ বছর তারা সরকার চালাতে পারবেন।
আইপিএফটি ত্রিপুরার মন্ত্রীসভায় তাদের আরও একজন নেয়ার দাবিও ধরে রেখেছে।
রাজনৈতিক সন্ত্রাসের দায় আবার বিজেপি, আইপিএফটি, দুই শরিকই বিরোধীদলের দিকেও ঘুরিয়ে দিতে চায়।
বছর দুই আগে বিজেপি’র এক বিধায়ক বুর্বমোহন ত্রিপুরা ও এক নেতা করবুকে আক্রমণের মুখে পড়েছিলেন, অভিযোগ আইপিএফটি’র দিকেই ছিল। তখনও কাছাকাছি সময়ে পঞ্চায়েতের উপনির্বাচন ছিল।
আইপিএফটি উপজাতি ভিত্তিক দল হলেও, সেই দলে গন্ডাছড়ায় বেশ কিছু অনুপজাতি বিজেপি ছেড়ে যোগ দিয়েছেন। তথ্য সেই মহকুমাতেই এক আইপিএফটি’র স্থানীয় নেতা, তিনিও অনুপজাতি, খুন হয়েছেন। তিনি বামপন্থা ছেড়ে আইপিএফটিতে গিয়েছিলেন।
বিজেপিও গত কয়েকদিনে বেশ কিছু সভা করেছে, সেখানে অন্যান্য দল থেকে তাদের শিবিরে আসাদের মধ্যে আইপিএফটি ছেড়ে আসাও আছেন।
করোনা সংক্রমণ মোকাবিলায় নতুন নতুন নির্দেশ জারি হচ্ছে। নিয়ম-কানুন মানতে বলা হচ্ছে। স্কুল-কলেজ বন্ধ আছে। স্বাভাবিক রোজগার পাচ্ছেন না মানুষ। মানুষ এগুলিতে অভ্যস্ত হয়ে উঠছেন। আক্রমণ, অভিযোগ, পাল্টা-অভিযোগও রুটিন হয়ে দাঁড়িয়েছে ত্রিপুরায়।
কবে হবে জানা নেই, জেলা পরিষদ নির্বাচনের দিন-ক্ষণ ঘোষণা হয়নি এখনও , তবে উত্তাপ ছড়াচ্ছে বিজেপি-আইপিএফটি।
COMMENTS