নির্বাচন কমিশনের নিষেধাজ্ঞার কবলে অনুরাগ ঠাকুর

দিল্লীর বিধানসভা নির্বাচন ঘিরে উত্তেজনার পারদ তুঙ্গে । নির্বাচনী প্রচারে কেন্দ্রের শাসক দলের নেতাদের বেহিসাবি বিভিন্ন বক্তব্য নিয়ে ভারতের নির্বাচন কমিশন ইতিমধ্যেই কড়া মনোভাব প্রকাশ করেছে । কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুরকে নির্বাচন কমিশন দায়িত্বজ্ঞান হীন আচরণের জন্য নির্বাচনী প্রচারে তার উপস্থিতির ওপর ৭২ ঘণ্টার জন্য নিষেধাজ্ঞা জারী করেছে । নিষেধাজ্ঞা জারিই নয় অনুরাগ ঠাকুর চিঠি পাঠিয়ে নির্বাচন কমিশনের কাছে শুনানির দাবী জানিয়েছিলেন এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে কমিশন জানিয়েছে এই ধরণের কোন অনুরোধকে কমিশন গুরুত্ব দেবার প্রয়োজন বোধ করে না । নোটিশ পাঠিয়ে কমিশন বি জে পি’কে দিল্লীর আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের জন্য স্থির করা তারকা প্রচারকদের তালিকা থেকে অনুরাগ ঠাকুরকে বাদ দেবার নির্দেশও জানিয়ে দিয়েছে ।

পুরো ঘটনার সুত্রপাত হয়েছিল এ বছরের জানুয়ারি মাসের ২৭ তারিখ । সেদিন দিল্লীর ৬ নং রিথালা বিধানসভা কেন্দ্রের এক প্রচার সভায় বি জে পি নেতা তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর স্বদলীয় প্রার্থীর সমর্থনে এক প্রচার সভায় বক্তব্য রাখছিলেন । দিল্লীর বুদ্ধ বিহারের কাছে শ্মশান ঘাট রোডের মাদার ডায়রিতে নির্বাচনী সভায় বক্তব্য রাখার সময় এই মর্মে অভিযোগ ওঠে যে অনুরাগ ঠাকুর উপস্থিত সমর্থকদের তার সাথে গলা মিলিয়ে বলতে বলেন, ‘দেশ কি গদ্দারো কো গোলি মারো শালো কো’ । বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে সেই সভার ভিডিও ভাইরাল হয় । বিরোধী রাজনৈতিক দল গূলোর পক্ষ থেকে বিষয়টি নিয়ে কমিশনের কাছে অভিযোগ জানানো হয় । নির্বাচন কমিশনকে দিল্লীর মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক গত ২৮ শে জানুয়ারি পাঠানো চিঠিতে এই ঘটনার সত্যতা সম্পর্কে অবহিত করেন । কমিশন অনুরাগ ঠাকুরের করা উল্লিখিত স্লোগানকে আপত্তিজনক হিসেবে অবহিত করে এবং গত ৩০ সে জানুয়ারি এক নির্দেশ নামায় এই মর্মে সিদ্ধান্ত জানায় জে শ্রী ঠাকুরের এই আচরণ নির্বাচনী আচরণ বিধির অবমাননা । কমিশন অনুরাগ ঠাকুরকে এই বিষয়ের ওপর কারণ দর্শানোর নির্দেশ দেয় । অনুরাগ ঠাকুর তার লিখিত বক্তব্যে জানান জে তিনি নিজে ‘দেশ কি গদ্দারো কো’ শ্লোগানটি উচ্চারণ করেছিলেন । বাকী কথা বলেন নি । কমিশন এই বক্তব্যে সন্তুষ্ট না হয়ে ৩০শে জানুয়ারি , ২০২০ তারিখ বিকাল পাঁচ ঘটিকা থেকে পরবর্তী বাহাত্তর ঘণ্টার জন্য অনুরাগ ঠাকুরের ওপর যেকোন নির্বাচনী প্রচার কাজে অংশগ্রহনের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারী করে । এর আগে কমিশন শ্রী ঠাকুরকে বি জে পি’র তারকা প্রচারকদের তালিকা থেকে বাদ দেবার কারণে তিনি দিল্লীর নির্বাচনী প্রচারে যে সমস্ত প্রচার করেছেন এর সম্পুর্ণ ব্যয়ভার সংশ্লিষ্ট প্রার্থীদের ব্যয়ের সাথে যুক্ত হবে ।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য ভারতের সংবিধানের ৩২৪ নং অনুচ্ছেদ মোতাবেক কমিশন এই নির্দেশ জারী করেছে । সংবিধানের ৩২৪ নং অনুচ্ছেদ অনুসারে নির্বাচন কমিশনকে কিছু বিশেষ ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে । এই অনুচ্ছেদ অনুসারে নির্বাচন অবাধ ও শান্তিপূর্ণ করার জন্য কমিশন যেকোন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে । বস্তুত এই অনুচ্ছেদের মাধ্যমে কমিশন নির্বাচনী প্রক্রিয়ার সময় সম্পূর্ণ স্বাধীন সংস্থা হিসাবে কাজ করতে পারে ফলে তার প্রশাসনিক শক্তির সম্প্রসারন ঘটে এবং তা কার্যত আধা বিচারবিভাগীয় রূপ নেয় । ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল যাতে নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে কোনভাবে প্রভাবিত করতে না পারে তা নিশ্চিত করতেই সংবিধানে এই বিশেষ ব্যবস্থা রাখা হয়েছে ।

COMMENTS