মোহনপুরে শিক্ষিকার মৃত্যু : আত্মহত্যা নাকি খুন ?

ত্রিপুরার মোহনপুরে খোলা মাঠে পাওয়া গেছে এক তরুনী শিক্ষিকার আধ পোড়া দেহ। বিকালে বাড়ি থেকে বেরিয়ে আর বাড়ি ফেরেননি। রাতের দিকে তার মা , এক প্রতিবেশিকে নিয়ে গিয়েছিলেন থানায়। ‘মেয়ে তো আর ছোট না,খোঁজ নিন’ বলে পুলিশ নিজে আর খোঁজাখুঁজিতে নামেনি।

সকালে বাড়ির কাছেই মাঠে পাওয়া গেছে দেহ।

পুলিশ এসেছে, পাড়ারই এক যুবক সৌরভ পালকে ‘জিজ্ঞাসাবাদের’ জন্য আটক করে রেখেছে।

দেহ, রাজধানী আগরতলায় পাঠিয়ে ময়না-তদন্ত করা হয়েছে। শেষকৃত্যও হয়ে গেছে।

মেয়েটি ভীষণ গরীব পরিবারের। একটি স্কুলে পড়াতেন, আর বাড়িতেও ছাত্র পড়াতেন। মাস্টার্স করছিলেন।

পুলিশ সৌরভ পাল নামে এক যুবককে আটকে রেখেছে। অন্তত রাত দশটা পর্যন্ত তাকে গ্রেফতার করেনি পুলিশ, কিংবা ‘এফআইআর’ নেয়নি। পুলিশ তখনও অপেক্ষা করছিল, ‘তাদের’ বাড়ি থেকে নিয়ে আসবে । এগুলি পুলিশ সূত্রেই জানা গেছে।

পুলিশ বিষয়টিকে ‘আত্মহত্যা’হতে পারে বলে মনে করছে।

কোনও এক সিসিটিভি ফুটেজে নাকি আগুনের মত দেখা গেছে। মেয়েটি বিকালে একবার বাড়ি থেকে বেরিয়ে , পরে একবার বাড়িতে ঢুকে ( ঘরে নয়), বাইরে থেকে কেরোসিন ও দেশলাই নিয়ে মাঠে নেমে যান । গায়ে আগুন দেন।

মেয়েটির ব্যাগে নাকি পাওয়া গেছে কিছু ওষুধের খালি খোল । সেগুলি খেয়েও যখন কিছু হয়নি, মেয়েটি বাড়ি এসে কেরোসিন-দেশলাই নিয়ে যায়। আর পুরো বিষয়টিই প্রেমজ। পুলিশ মোটামুটি এই দাঁড় করাচ্ছে।

পুলিশের হিসাবে, সাড়ে সাতটায় মেয়েটি সৌরভের গাড়ি করেই আগরতলা থেকে মোহনপুরে পৌঁছায়। যাবার সময় গাড়িতেই ফোনটি ফেলে যান,সেটা ইচ্ছাকৃত নাকি দিশাহীন সেটাও তদন্তের বিষয় । তারপর একসময় ব্যাগের ওষুধগুলি খেয়ে নেন তিনি। খালি খোসা তার ব্যাগে পাওয়া গেছে, পুলিশের সূত্রের মতে। সেগুলি খেয়ে কিছু না হওয়ায় , বাড়ি গিয়ে বাইরে থেকে কেরোসিন-দেশলাই এনে শরীরে আগুন দেন তিনি। সাড়ে আটটার দিকে তা হয়। সিসিটিভি ফুটেজ থেকে এই সময়ের হিসাব। একঘন্টা পর্যন্ত দেহ জ্বলেছে, পুলিশ মনে করছে।

সৌরভের গাড়িতে অন্য যাত্রী ছিলেন, তারা নেমে যাওয়ার পর দু’জনই শুধু ছিলেন একা। তাদের ঝগড়া-ঝাঁটি হয়েছে, সম্পর্ক একেবারে শেষ করে দেয়ার কথা হয়। মেয়েটি খোঁজ পেয়ে আগরতলায় রাধানগর স্ট্যান্ডে এসে সৌরভকে ধরেন। সৌরভ , মেয়েটি ফোন করলে ধরতো না , তাই অন্যদের মারফত কথা চালাচালি হত। এই ক্ৰনোলজিতেই বিষয়টিকে দেখা হচ্ছে বলে পুলিশি সূত্রের খবর।

তাহলে ব্যপারটা এই রকমঃ

বিকালে বাড়ি থেকে বের হয়ে, মোহনপুর থেকে যাত্রী গাড়িতে আগরতলা এসে, আবার ফিরে গিয়ে , ঝগড়া-ঝাঁটি করে, সাড়ে সাতটায় গাড়ি থেকে নেমে, মরার জন্য ওষুধ খেয়ে, খালি খোলস আবার ব্যাগে পুরে রেখে, কিছুক্ষণ পর কিছু হচ্ছে না দেখে , বাড়ি গিয়ে কেরোসিন-দেশলাই এনে গায়ে আগুন দেওয়া সাড়ে আটটায়, এবং খালি মাঠে আগুনের শিখা কেউ দেখেননি, জ্বলেছেন আরও একঘন্টা !

শিক্ষিকাকে যেখানে পাওয়া গেছে, সেটি একটি ধান চাষের জমি। এখন ধান তোলা হয়ে গেছে, তাই মাঠে শুকনো বিচালি। যেখানে পাওয়া গেছে, সেই জায়গায় বিচালি পোড়া ছিল না, ছবি অন্তত তাই বলছে। গড়াগড়ি যাওয়ার চিহ্ন নেই। আশপাশে মানুষজন আছেন। কেউ সেরকম কিছু দেখতে পেয়েছেন বলে কেউ এখনও বলেননি

বিকালে বেরিয়ে সন্ধ্যার পরেও মেয়ে ফিরে না আসায় বাড়ির মানুষজন খোঁজাখুঁজি করেছিলেন।তাই দেখে, বাড়িতে সন্তান সম্ভবা এক মেয়ে আছে, ফলে এক প্রতিবেশী মহিলা ভেবেছিলেন, গাড়ির খোঁজ হচ্ছে। সৌরভের কাছে তারা মেয়ের খোঁজ করেন। সেখানে তারা মেয়ের মোবাইল ফোনটির খোঁজ পান। মোবাইল ফোনের খোঁজ পাওয়া গেছে, তাই সেই সূত্রে মেয়ের খোঁজও পাওয়া যাবে, এই আশায় থানায় রাত এগারোটায় সেই প্রতিবেশীকে নিয়ে গিয়েছিলেন মা। প্রতিবেশী মহিলা বলেছেন, পুলিশ তাদের খোঁজ নিতে বলে, ফোন নম্বরও দিয়ে দেয়, খোঁজ করতে গিয়ে অসুবিধা হলে যেন তাদের জানানো হয়।

পুলিশ রাতে আর বের হয়নি। দেহ পাওয়া যাবার খবরে যায় । একবার সৌরভকে আটক করার পরেও, তাকে নিয়ে বাড়িতে গিয়েছিল।

সিধাই থানার পুলিশ অবশ্য সৌরভের কথার সাথে ঘটনার সামঞ্জস্য পেয়েছে বলেই শোনা গেছে, তবে তাকে পুলিশ রিমান্ডে চাইবে বলে খবর।

আগরতলা, ত্রিপুরা

COMMENTS