পশ্চিমবঙ্গে এখন পর্যন্ত করোনা ভাইরাসে কতজন আক্রান্ত হয়েছেন — রাজ্য ও কেন্দ্র সরকারের দেওয়া তথ্যে সৃষ্টি হয়েছে বিভ্রান্তি । আক্রান্ত ব্যক্তিদের সংখ্যা নিয়ে দুই সরকারের তথ্য আলাদা আলাদা । স্বভাবতই প্রশ্ন উঠছে , কে সঠিক ?
গত ২৪ ঘন্টায় পশ্চিমবঙ্গে নতুন করে ৪০ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এখন পর্যন্ত করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৪২৩। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের স্বাস্থ্য দপ্তরের বুলেটিনে এমনটাই দাবি করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে গতকাল পর্যন্ত এই রাজ্যে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৫৭১ জন । দুই সরকারি তথ্যে পার্থক্য ১৪৮ জনের ।
একটি রাজ্যে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা নিয়ে কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারের প্রকাশিত তথ্যে গরমিল থাকা একেবারেই অস্বাভাবিক ।একইসাথে উদ্বেগজনক তো বটেই , কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের আপাতত তাই ঘটছে।
পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বুলেটিনে দাবি করা হয়েছে গতকাল দুজন করোনা আক্রান্ত ব্যক্তি সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। এখন পর্যন্ত বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন ১০৫ জন ।
রাজ্য সরকারের ভাষ্য মতে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১৮ জন । সরকারি এই দাবির সাথে সহমত পোষণ করছেন না বিভিন্ন বিরোধী রাজনৈতিক দল । ইতিমধ্যেই সিপিআই(এম) নেতা ফুয়াদ হালিম কোলকাতা হাইকোর্টে রাজ্য সরকার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং আইসিএমআর এর নির্দেশ মোতাবেক করোনা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে কাজ করছে না বলে একটি জনস্বার্থ মামলা করেছেন । হালিমের হয়ে হাইকোর্টে মামলা লড়ছেন সি পি আই (এম) নেতা, রাজ্যসভার সাংসদ বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য।
পশ্চিমবঙ্গ সরকার করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে যতজন মারা গেছেন বলে দাবি করছেন বাস্তবচিত্র অন্যরকম । বিরোধীদের দাবি এটাই। মৃতের সংখ্যা লুকোচ্ছে মমতা ব্যানার্জির প্রশাসন । বিরোধীরা এই অভিযোগ এনেছেন । করোনা ভাইরাসে আরও অনেক রোগী মারা গেলেও পশ্চিমবঙ্গের স্বাস্থ্য দপ্তর তা স্বীকার করেছে না । এই অভিযোগ নিয়ে গত কয়েকদিন ধরেই সিপিআই (এম) সরব হয়েছে। শেষ বেলায় এই অভিযোগে সুর মিলিয়েছে বিজেপি’ও ।
এরকম একটি পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় সরকার বিষয়টির ওপর হস্তক্ষেপ করে । গত কয়েকদিন ধরেই কেন্দ্রীয় সরকারের বিশেষ প্রতিনিধি দল রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত ঘুরছে । বিভিন্ন রাজ্যে করোনাভাইরাস সংক্রমণজনিত পরিস্থিতি রাজ্যগুলো ঠিকভাবে মোকাবেলা করছে কিনা তা দেখার জন্য ইন্টার মিনিস্টিরিয়াল সেন্ট্রাল টিম বা আইএমসিটি গঠন করেছে কেন্দ্র সরকার । এই আইএমসিটি’র বেশ কয়েকটি দল পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জায়গা ঘুরে দেখছে। কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দলের পক্ষ থেকেও করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃতদের সংখ্যা নিয়ে রাজ্য সরকারের অবস্থানের ওপর সন্দেহ প্রকাশ করা হয়েছে। অনেকটা বাধ্য হয়েই সব কিছুর চাপ সামলাতে পশ্চিমবঙ্গ সরকার গঠন করেছে ডেথ অডিট কমিটি । এই কমিটি জানিয়েছে এখন পর্যন্ত রাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতালে ৫৭ জন করোনাভাইরাস পজেটিভ রোগী মারা গেছেন । অডিট কমিটির মতে মৃত ৫৭ জনের মধ্যে ১৮ জন করোনা ভাইরাসজনিত কারণে মারা গেছেন । বাকি ৩৯ জন যদিও ভাইরাসে আক্রান্ত ছিলেন কিন্তু তাদের মৃত্যুর কারণ ছিল অন্যরকম । এই যুক্তিতে সমালোচিত হচ্ছে মমতা প্রশাসন। আগে তথ্য গোপন করে বাধ্য হয়ে ঘুরপথে এখন স্বীকার করেছে রাজ্য সরকার , সিপিআই(এম)’র দাবি এরককমই।
রাজ্যে অবস্থানরত আইএমসিটি দলের পক্ষ থেকে সরাসরি অভিযোগ করা হয়েছে যে রাজ্য সরকার তাদের কোনও ধরনের সহায়তা করছে না । অভিযোগে এও বলা হয়েছে বিভিন্ন বিষয়ের স্পস্টিকরণ চেয়ে রাজ্যের মুখ্যসচিব রাজীব সিনহাকে চারটি চিঠি দেওয়া হলেও কোনও চিঠির উত্তর দেওয়া হয় নি । আইএমসিটি দলের নেতা অপূর্ব চন্দ্র এরকমই জানিয়েছেন।
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্য সচিব কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দলের পরিদর্শন নিয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেছেন যে এরা যেকোন জায়গাতে যেতে পারেন কিন্তু রাজ্য প্রশাসনের উচ্চপদস্থ আধিকারিকরা এই বিশেষ সময়ে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দলের সাথে উপস্থিত থেকে সময় নষ্ট করতে পারবেন না। রাজ্যের মুখ্য সচিবের এই মন্তব্যে যথেষ্ট অসন্তুষ্টি ব্যক্ত করেছেন দলের সদস্যরা।
অপূর্ব চন্দ্র অভিযোগ করেছেন বিভিন্ন হাসপাতালে আক্রান্ত রোগীদের সাথে মোবাইল ফোন রাখতে দেওয়া হচ্ছে না। বাড়ির লোকের সাথে রোগীরা যোগাযোগ করতে পারছেন না। অনেকের টেস্টের ফল নেগেটিভ আসার পরেও হাসপাতাল ছেড়ে যেতে পারছেন না , কারণ বাড়ির লোকের কাছে খবর পৌঁছানো যাচ্ছে না । এইরকম ঘটনার অভিজ্ঞতা নিয়ে অসন্তোষ ব্যক্ত করেছে আইএমসিটি ।
রাজ্যের বিভিন্ন জায়গাতে লকডাউন’র বিধি নিষেধ আরোপ করার ক্ষেত্রেও রাজ্য সরকার যথেষ্ট শিথিলতা দেখাচ্ছে বলে জানিয়েছে আই এম সি টি দল।
তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র ডেরেক ও’ব্রায়েন আইএমসিটি’র কাজকর্মকে তীব্র ভাষায় সমালোচনা করেছেন । রাজ্যসভার সাংসদের মতে এই কেন্দ্রীয় দল নেহাতই ‘ক্যালাস’ , এরা ‘পলিটিক্যাল ভাইরাস’ ছড়াচ্ছেন ।
COMMENTS