মানুষ এত ভাল হয় !

মানুষ এত ভাল হয় ! এই অভিজ্ঞতা নিয়ে দেশে ফিরে এলেন রিপা বর্ম দাস , তার দুই  ছেলে-মেয়ে ।

ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলার এয়ারপোর্টের কাছে আন্তর্জাতিক সীমানায় লঙ্কামুড়া। সেখানে কর্মকার পাড়ার রিপা বর্মনরা।

বাংলাদেশে ৯ মার্চ গিয়েছিলেন, আটকে পড়েন লকডাউনে।

মে মাসের ১৫ তারিখ আখাউড়া চেকপোস্টে এসে জানতে পারেন, বন্ধ হয়ে গেছে আসা-যাওয়া। দিশেহারা রিপা, তার দুই ছেলে-মেয়ে। বাংলাদেশের আখাউড়া উপজেলার প্রশাসনের অনুরোধে তাদের থাকার জায়গা হয় শান্তিবন শ্মশান আশ্রমে। পাড়শিরাই তাদের দেখে-শুনে রেখেছেন।

সেই কাহিনী এখানে পড়ুনঃ  ভালবাসাই জিতে যায় !

পেশাগত কাজে গিয়ে তাদের ভালমন্দে জড়িয়ে যান সাংবাদিকরা। বিশ্বজিৎ পাল, নুরুন্নবি ভুইয়া,  প্রমুখ।

তারা জানতে পারেন, লকডাউনে আটকে নারায়ণগঞ্জে রিপা তার গলার সোনার চেন, এবং মেয়ের পায়ের নূপুর বিক্রি করেছেন।

বাংলাদেশে এসে তারা অলঙ্কার রেখে ফিরে যাবেন ! না , তা তারা হতে দিতে চাননি। হাতে হাতে উঠে এল টাকা । রিপার গলার চেন, আগের চেয়েও বেশি ওজনের, তারা উপহার দিলেন। মেয়েকে নূপুর। আসার সময় প্রশাসন দিয়েছে জামা-কাপড়।

“মানুষ এত ভাল হয়,“ রিপা এই বলতে বলতে  বাংলাদেশ ছেড়ে এলেন ভারতে।

সাংবাদিক নুরুন্নবি ভুইয়া , আখাউড়া থেকে জানাচ্ছেন, “ওই পরিবার ১৫ মে আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে যাওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। অনেকের পরামর্শে তাঁরা আখাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাহমিনা আক্তার রেইনার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তিনি তাদেরকে আখাউড়া লোকনাথ সেবাশ্রমের পূজারি আশীষ মহারাজের কাছে পাঠিয়ে সেখানে থাকার ব্যবস্থা করেন। ওই পরিবারটি নারায়ণগঞ্জে থাকার সময় সাড়ে ছয় আনা ওজনের একটি স্বর্ণের চেইন ও পাঁচ ভরি ওজনের রূপার নুপুর বিক্রি করে দেন জানতে পেরে এ নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন স্থানীয় সাংবাদিক বিশ্বজিৎ পাল বাবু। ওই স্ট্যাটাসে সাড়া দিয়ে দেশে বিদেশের অনেকেই আর্থিক সহায়তার জন্য এগিয়ে আসেন। অবস্থা এমন হয় যে পরবর্তীতে অনেককেই আর সাহায্য লাগবে না বলে জানিয়ে দেয়া হয়। এ অবস্থায় সকলের সহযোগিতায় ওই পরিবারটির পছন্দে প্রায় ১২ আনা ওজনের একটি সোনার চেন কিনে দেয়া হয়। চেইনের প্যাকেটে লেখা ছিলো ‘মুজিবীয় ভালোবাসা, বাংলাদেশ’। এছাড়া একজন রূপার নুপুর কিনে দেন। যাওয়ার সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাও তাদের জন্য নতুন পোশাক কিনে দেন। দরিদ্র পরিবারের রিপা বর্মণ স্বর্ণের চেইন কি-না আদৌ সম্ভব হতো কি-না সেটি উল্লেখ করে জানান, বাংলাদেশে থাকতে যে মর্যাদা পেয়েছি সেটি ভুলার নয়। প্রশাসন, সাংবাদিক থেকে শুরু করে সকলের সহযোগিতা আমরা পেয়েছি। আশ্রমের থাকার সময় অনেকেই আমাদের খোঁজ নিয়েছেন। খাবারের ব্যবস্থা করেছেন। উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাহমিনা আক্তার রেইনা জানান, পরিবারটি আমার কাছে আসার পর আশ্রমে থাকার ব্যবস্থা করার পাশাপাশি সার্বিক খোঁজ নেয়া হয়। এরপর স্থানীয় সাংবাদিকদের উদ্যোগে যেটা করা হয়েছে সেটা উদাহরণ হয়ে থাকবে।“

ভিডিওঃ নুরুন্নবি ভুইয়া

COMMENTS